মোহাম্মদপুরে সকালেই ছিনতাই-হামলায় রক্তাক্ত রিপোর্টার!

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ০৯:২৪:১১
মোহাম্মদপুরে সকালেই ছিনতাই-হামলায় রক্তাক্ত রিপোর্টার!

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় শুক্রবার (২৭ জুন) ভোরে এক হৃদয়বিদারক এবং উদ্বেগজনক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। দৈনিক কালবেলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার নূরে আলম সিদ্দিকী সেদিন সকালে নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারী চক্রের হাতে পড়েন। অস্ত্রধারী দুই ছিনতাইকারী কেবল তার মোবাইল বা মানিব্যাগই ছিনিয়ে নেয়নি, তার উপর শারীরিক হামলাও চালিয়েছে।

এই ঘটনায় একজন সাংবাদিকের উপর এমন সাহসী এবং সহিংস হামলা নগরজীবনের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।

ভুক্তভোগী নূরে আলম জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মোহাম্মদপুরের বসিলা ৪০ ফিট বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় পিছন দিক থেকে দুইজন দেশীয় অস্ত্রধারী ব্যক্তি তার ওপর চড়াও হয়। মুহূর্তের মধ্যে তারা তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। শুধু ছিনতাই করেই থেমে থাকেনি দুর্বৃত্তরা; বরং তাকে শারীরিকভাবে আঘাতও করে।

তিনি বলেন, “আমি কিছু বোঝার আগেই দুই পাশে থেকে আমাকে চেপে ধরে দ্রুত সবকিছু নিয়ে যায় ও শরীরেও আঘাত করে। আমার কাছে থাকা অফিসের কিছু জরুরি কাগজপত্রও ওরা নিয়ে গেছে।”

ঘটনার পরপরই নূরে আলম মোহাম্মদপুর থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন এসআই আক্কেল আলী। তিনি বলেন, “আমরা নিকটস্থ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছি। অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের আশপাশে বেশ কয়েকটি স্থাপনায় সিসিক্যামেরা রয়েছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের কাজ চলছে।

নূরে আলমের এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, সাংবাদিকেরা কেবল তথ্য সংগ্রহের সময়ই নয়, বরং নিজেদের দৈনন্দিন চলাফেরার সময়ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি ছিলেন কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কারো কোনো প্রকার অনুসন্ধানী কাজ বা সংঘর্ষের পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়েও এমন হামলার শিকার হন।

বাংলাদেশে কর্মরত সাংবাদিকদের উপর হামলা, হুমকি ও হয়রানির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বারবার জানিয়েছে। কিন্তু প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও পর্যাপ্ত নয় বলেই অভিযোগ অনেকের।

ঘটনার পর নানান সাংবাদিক সংগঠন ও সহকর্মীরা এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

একজন সাংবাদিক নেতা বলেন, “যখন একজন রিপোর্টার রাস্তায় চলাফেরার সময়ও নিরাপদ না থাকেন, তখন তা শুধু ব্যক্তিগত বিপদ নয় সমগ্র পেশার জন্য হুমকি।”

এই ঘটনা শুধু একটি ছিনতাই নয় এটি একজন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতা, যা রাষ্ট্রের নাগরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে। নূরে আলমের মতো সংবাদকর্মীরা সমাজের চোখ হয়ে কাজ করেন, অথচ তারা যদি নিজেরাই পথেঘাটে নিরাপদ না থাকেন, তাহলে বাকিরা কতটা সুরক্ষিত?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ