ইরান- ইসরায়েল সংঘাত
যুদ্ধের নামে ব্যর্থ কৌশল: বিশ্লেষকদের চোখে নেতানিয়াহু

দীর্ঘ ১২ দিনের টানা বিমান হামলার পরও ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিজয় দাবি ইতোমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন পর্যালোচনায়। আল-জাজিরায় প্রকাশিত বিশ্লেষণমূলক একটি প্রবন্ধে ইসরাইলি রাজনৈতিক ভাষ্যকার অরি গোল্ডবার্গ সরাসরি তুলে ধরেছেন, কিভাবে ইসরাইলের কৌশলগত ব্যর্থতা এবং ইরানের দৃঢ় প্রতিরোধ ক্ষমতা গোটা সংঘাতের গতিপথকে বদলে দিয়েছে।
ঘোষিত লক্ষ্য বনাম বাস্তব অর্জন: বিভ্রান্তি নাকি স্ববিরোধ?
ইসরাইল এই যুদ্ধ শুরু করেছিল অন্তত তিনটি বড় লক্ষ্য সামনে রেখে:১. ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস২. ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে সরকার পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করা৩. আন্তর্জাতিকভাবে ইরানকে একঘরে করা
কিন্তু গোল্ডবার্গের ভাষায়, "ইসরাইল যা চেয়েছিল, বাস্তবতা হয়েছে তার উল্টো।"
পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরিয়ে ফেলেছিল। এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয়, ইরান ছিল আগাম প্রস্তুত। এ ছাড়া, মার্কিন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ব্যবহার করেও ইরানকে নির্মূল করা যায়নি, যা ইসরাইলের অন্যতম কৌশলগত ব্যর্থতা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন’: কার্যকারিতা না বরং প্রতিক্রিয়া?ইসরাইল ইরানি বিপ্লবী গার্ড (IRGC)-এর শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করে হত্যার মাধ্যমে ইরানে সরকারবিরোধী বিদ্রোহ উসকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটেছে তা হলো বিপরীত প্রতিক্রিয়া।
যেসব ইরানিরা পূর্বে সরকার ও IRGC-এর বিরোধিতা করতেন, তারাও এ হামলাকে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হিসেবে দেখেছেন। ফলে অভ্যন্তরীণ ঐক্য আরও সুদৃঢ় হয়েছে। নেতানিয়াহুর সরকার যেমন রাজনৈতিক দুর্বলতা আশা করেছিল, তেমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
মনস্তাত্ত্বিক ও প্রতীকী কৌশলের ব্যর্থতা
ইসরাইল এভিন কারাগারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র আইআরআইবি-তে হামলা চালিয়ে ইরানিদের মাঝে সরকার বিরোধী আবেগ উসকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এতে ইরানিদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়নি; বরং বন্দীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হওয়ায় সরকারকে সমর্থনের ক্ষেত্রই তৈরি হয়েছে।
এই কৌশল মূলত তথাকথিত 'ইমেজ ওয়ার' বা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে ইসরাইলকে সুবিধা দেয়নি; বরং ইরানকে হামলার শিকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে বিশ্বদৃষ্টিতে।
আন্তর্জাতিক সমর্থন: বিভাজন ও কৌশলগত নিঃসঙ্গতা
যুদ্ধ শুরু করার পেছনে ইসরাইলের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক সহানুভূতি অর্জন ও গাজায় আগ্রাসনের ইস্যু থেকে বিশ্বমানসকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সীমিতভাবে হামলায় অংশ নেন এবং হামলার মাধ্যমে নীতিগত সমর্থন দেন, তবুও তিনি সরাসরি যুদ্ধে জড়াননি।
সরাসরি অংশগ্রহণের পরিবর্তে ট্রাম্প আগাম বার্তা দিয়ে ইরানকে উত্তেজনা প্রশমনে বাধ্য করার পথ বেছে নেন, যাতে কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রক্ষা পায়। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ও কিছু পশ্চিমা নেতৃত্ব হামলার পক্ষে কথা বললেও, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবিকে কেউই সমর্থন করেনি।
বিশ্ব এখন ‘পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ’ নীতিতে ফিরে যেতে আগ্রহী, যেখানে ইরান আলোচনার ভিত্তিতে অংশীদার হতে রাজি বলেও জানিয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও প্রতিরোধের সফলতা
যুদ্ধের ব্যয় ইসরাইলের জন্য আর্থিক ও কৌশলগত দুই দিক থেকেই বিপর্যয়কর ছিল। ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। এটি ছিল অভূতপূর্ব। এর ফলে শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও ইসরাইল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতি এবং উৎপাদন ব্যয় ইসরাইলি অর্থনীতিতে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে ইসরাইলের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।
ইরানের জয়: বাস্তবতা, ছায়াযুদ্ধ ও ভবিষ্যতের কৌশল
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইরান যুদ্ধ থেকে শুধু অক্ষত নয়, বরং কৌশলগতভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে বের হয়েছে। বিশ্ব ইরানকে এখন আরও বাস্তবধর্মী, স্থিতিশীল ও আঞ্চলিকভাবে প্রয়োজনীয় শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে।
ইরান নিজেদের ভূখণ্ডে হামলার শিকার হিসেবে চিত্রায়িত করতে পেরেছে, যা তাকে বৈশ্বিক সহানুভূতি ও কূটনৈতিক মঞ্চে সুবিধা এনে দিয়েছে। এ ছাড়া, যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও হামলার হুমকিতে ইসরাইলকে প্রকাশ্যে সতর্ক করার মতো সাহসিক অবস্থানে দেখা গেছে ইরানকে।
ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত শক্তির ভারসাম্যে এক নতুন রূপরেখা তৈরি করেছে। ইসরাইলের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রচারভিত্তিক অভিযান বাস্তবতার কষ্টিপাথরে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, ইরান তার প্রতিরোধ, কৌশলগত দূরদর্শিতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি দিয়ে যুদ্ধের ময়দান ছাড়াও একটি কৌশলগত বিজয় অর্জন করেছে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কম এবং কম ঝুকিপূর্ণ
- দীর্ঘ পতনের পর শেয়ারবাজারে এল সুখবর!
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- ইরান বনাম ইসরায়েল ও আমেরিকা: প্রকৃত বিজয়ী কে?
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে যে ৯টি কোম্পানির
- শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে১১টি কোম্পানির জন্য সুখবর
- শেয়ারবাজারে ব্লক মার্কেটে রাজত্ব করলো দুটি কোম্পানি
- মিরপুরে মেট্রোরেল দুর্ঘটনার ভিডিওর নেপথ্যে যারা
- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট হবে কিনা জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
- আকাশে বিস্ফোরণ, মাটিতে মৃত্যু: ক্লাস্টার বোমায় জর্জরিত ইসরায়েল
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- তবে কি বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, যা জানা গেল
- শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট
- আবারও পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের পুশ-ইন!
- হঠাৎ নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিলে যা করবেন
- দুর্নীতি তদন্তে বেনজির আহমদের ফ্ল্যাট-জমি জব্দ
- ঘুষের দায়ে ‘ওসি’ থেকে ‘এসআই’ হলেন মাসুদ রানা
- বার্সা-পিএসজি-আল হিলাল নয়, ‘ঘরেই’ ফিরলেন নেইমার
- সাত ক্যাচ মিস, অনুশীলনের ঘাটতি—ভারতের হারের পেছনে কোন দিকগুলো ছিল দায়ী?
- যশোরে সোনার বার পাচার চেষ্টায় এক ব্যক্তি আটক
- ২৫ জুনের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ: সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় প্রযুক্তি ও খুচরা খাতের উত্থান
- নির্বাচন কমিশন ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে
- ‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু: তারেকের তীব্র সমালোচনা
- আসিফ সজীবের অপমান, ক্ষমা চাইতে বললেন ইশরাক
- ঐকমত্যের সন্ধানে ৬ দিন, অবশেষে আজ মূল ইস্যুতে সংলাপ
- পাঁচটি ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং প্রকাশ
- সংবিধান সংস্কারে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে বিএনপি
- শেয়ারের দর বেড়েছে যে ১০টি কোম্পানির
- হাজিরহাট বাজারে দখলদারদের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ!
- ‘দ্বিতীয় শেখ মুজিব’ দাবি, পরিষদে বন্ধ পরিষেবা!
- স্টেট ডিফেন্স সরানো হলো, আদালতে শেখ হাসিনার পক্ষে কে?
- বৈদেশিক মুদ্রার দর বেড়েছে: স্থিতিশীল ডলারের বাজারে ইউরো-পাউন্ডে ঊর্ধ্বগতি
- নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
- জেনে নিন শাপলা কেন খাবেন
- যুদ্ধবিরতির পরও উত্তেজনা, নেতানিয়াহুর জয় ঘোষণায় খেপেছেন ট্রাম্প?
- নিষিদ্ধ অবস্থায় রাতের আঁধারে শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের গোপন জন্মদিন
- পরিচয় আগে, না মেধা? — বাজার ফান্ডের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈষম্যের বাস্তবতা
- পাক অভিনেত্রীর সঙ্গে জুটি, দিলজিৎ দোসাঞ্জের অভিনয়ে লাগল তীব্র প্রশ্নচিহ্ন
- যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কম এবং কম ঝুকিপূর্ণ
- দীর্ঘ পতনের পর শেয়ারবাজারে এল সুখবর!
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- ইরান বনাম ইসরায়েল ও আমেরিকা: প্রকৃত বিজয়ী কে?
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে যে ৯টি কোম্পানির
- শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১১টি কোম্পানির জন্য সুখবর
- শেয়ারবাজারে ব্লক মার্কেটে রাজত্ব করলো দুটি কোম্পানি
- মিরপুরে মেট্রোরেল দুর্ঘটনার ভিডিওর নেপথ্যে যারা
- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট হবে কিনা জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
- আকাশে বিস্ফোরণ, মাটিতে মৃত্যু: ক্লাস্টার বোমায় জর্জরিত ইসরায়েল
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- তবে কি বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, যা জানা গেল
- শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট