নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৫ ১৩:২২:১৩
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন দেশটির রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য আর্ল ‘বাডি’ কার্টার। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের “অসাধারণ ও ঐতিহাসিক মধ্যস্থতা”কে স্বীকৃতি জানিয়ে এই মনোনয়ন দেওয়া হয়। নরওয়ের নোবেল কমিটিকে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক চিঠিতে কার্টার বলেন, “পশ্চিম জেরুজালেম ও তেহরানের মধ্যে সংঘর্ষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে শান্তি-প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয়।”

তবে এই মনোনয়নকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে বিস্তর বিতর্ক, কারণ ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা যেমন চোখে পড়েছে, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তার আগের পদক্ষেপ বিশেষ করে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো সামরিক হামলা।

সংঘাতের প্রেক্ষাপট: উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে দুই সপ্তাহের রক্তপাত

গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে একাধিকবার সরাসরি সামরিক হামলা-পাল্টা হামলা হয়। তেহরানের সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থান, ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব এবং পশ্চিমা মিত্রদের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির একটি মুহূর্ত এনে দেওয়ায় ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দেওয়া হলেও তার আগের ভূমিকা নিয়ে ওঠেছে অনেক প্রশ্ন।

‘শান্তি প্রচেষ্টা’র আগে ভয়াবহ বিমান হামলা

যুদ্ধবিরতির কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল ফর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো যা ইরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এসব স্থাপনা “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করা হয়েছে, এবং এটি ছিল “পূর্ব প্রস্তুত অবস্থায় নেওয়া আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা”। যদিও ট্রাম্প তৎক্ষণাৎ শান্তি ও সংযমের বার্তা দেন, হামলার ধরন ও ব্যাপকতা আন্তর্জাতিক মহলে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

ইরান এ হামলার পরপরই পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানায়, “আমাদের কোনো পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস হয়নি এবং আমরা আমাদের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি থেকে এক চুলও সরব না।” তেহরান তাদের অবস্থানকে সার্বভৌম অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

যুদ্ধবিরতি ও পরবর্তী চিত্র

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েল ও ইরান উভয়েই আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে একে অপরকে লক্ষ্য করে। এ ঘটনায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উভয় পক্ষকে সতর্ক করে বলেন, “এই ধরনের হামলা যুদ্ধবিরতির মৌলিক চেতনাকে লঙ্ঘন করে। শান্তি চাইলে প্রতিহিংসা পরিহার করতেই হবে।”

এই মন্তব্যের পর ইসরায়েল আর নতুন করে কোনো সামরিক অভিযানে যায়নি বলে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের কড়া বার্তা এই পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ আনে। তবে সংঘাতের স্থায়ী সমাধান এখনও দূরে।

ট্রাম্পের নোবেল মনোনয়ন: কূটনৈতিক অর্জন না রাজনৈতিক কৌশল?

সাবেক প্রেসিডেন্টের এই মনোনয়নকে ঘিরে এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিধা বিভাজন দেখা দিয়েছে। একপক্ষ বলছে, ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মধ্যস্থতা এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উদ্যোগ, যা নতুন যুদ্ধের সম্ভাবনাকে থামাতে সাহায্য করেছে। অন্যপক্ষ বলছে, তিনি একদিকে যুদ্ধবাজ পদক্ষেপ নিয়েছেন, অন্যদিকে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২০ সালেও ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তখন ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে তাঁর ভূমিকা ছিল মুখ্য। এবারও একই ধরনের শান্তি প্রচেষ্টাকে সামনে রেখেই এই মনোনয়ন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: দ্বিধা, বিতর্ক ও প্রশ্ন

নোবেল শান্তি পুরস্কার সাধারণত মানবতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ধরনের অবদানের জন্য দেওয়া হয়। ট্রাম্পের মনোনয়নকে ঘিরে তাই প্রশ্ন উঠছে একই ব্যক্তি যদি একই সময়ে যুদ্ধের নির্দেশ দেন ও শান্তির প্রস্তাবও দেন, তবে কীভাবে তাঁকে শান্তির প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা যায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “শান্তি শুধু যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়া নয়, বরং সংঘাতের মূল কারণগুলোকে সমাধান করা, বিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যা এখনও দৃশ্যমান নয়।” তাছাড়া ট্রাম্পের রাজনৈতিক অভিজ্ঞান, বিতর্কিত নীতিমালা এবং আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি তাঁর এই মনোনয়নের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মনোনয়ন হয়তো একপাক্ষিকভাবে প্রশংসার দাবি রাখে না, তবে এটি স্পষ্টভাবে বিশ্ব রাজনীতির চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা তুলে ধরে। একদিকে যুদ্ধের আগুন, অন্যদিকে শান্তির উদ্যোগ এই দ্বৈত বাস্তবতায় ট্রাম্পের নোবেল মনোনয়ন এক ঐতিহাসিক মাইলফলক না হোক, অন্তত এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা বিশ্বজনমতকে আরও সচেতন ও বিশ্লেষণমুখী হতে বাধ্য করবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত