আবারো ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা পাকিস্তানের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৪ ১১:০২:৩৮
আবারো ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা পাকিস্তানের

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বহুল আলোচিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি আবারও উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) শীর্ষ নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এই ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

সোমবার (২৩ জুন) পাকিস্তান পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে বিলাওয়াল ভারত সরকারের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ, একতরফা সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। তিনি দাবি করেন, ভারত যদি সিন্ধু চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের অংশের পানি সরবরাহ বন্ধ করে রাখে, তাহলে ইসলামাবাদও ‘উপযুক্ত জবাব’ দিতে বাধ্য হবে।

বিলাওয়ালের বক্তব্য: “পানি না দিলে যুদ্ধ হবে” সংসদে দেয়া দৃঢ় বক্তব্যে বিলাওয়াল বলেন, “ভারতের হাতে এখন দুটি পথ ভদ্রভাবে পানি দিতে পারে, অথবা আমরা ছয়টি নদীর পানি নিজেরাই নিয়ে নেব। আর যদি ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু চুক্তি বাতিল করে দেয়, তাহলে পাকিস্তানও যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সিন্ধু চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটি জাতিসংঘ সনদের বিরোধী, এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।”

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ছয়টি নদীর পানি বিভাজিত হয়। তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী (রবি, বিয়াস, সুতলজ) ভারতের নিয়ন্ত্রণে, আর তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী (সিন্ধু, ঝেলাম, চেনাব) পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ থাকে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর উপর কোনো বাধা বা প্রকল্প নির্মাণ করতে পারবে না, যা পাকিস্তানের পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

ভারত বরাবরই দাবি করে আসছে যে, চুক্তির আওতায় নির্ধারিত পানি ব্যবহার করছে মাত্র ৩৫%–৪০% এবং পাকিস্তান প্রতিনিয়ত এ চুক্তির অপব্যাখ্যা করে ভারতকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর কেন্দ্রিক উত্তেজনা, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ, ও রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি প্রেক্ষাপটে ভারত থেকে সিন্ধু চুক্তি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত এসেছে, যা নতুন করে ইসলামাবাদে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়ার প্রস্তুতি?বিলাওয়াল তার বক্তব্যে আরও ইঙ্গিত দেন যে, যদি ভারত এ ধরনের ‘চুক্তি ভঙ্গকারী’ পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পাকিস্তান বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত ও জাতিসংঘে তুলবে।

তিনি বলেন, “এটি শুধুমাত্র পানি বা চুক্তির বিষয় নয়। এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও সার্বভৌম অধিকারের প্রশ্ন। আমরা এই অন্যায় সহ্য করব না।”

আন্তর্জাতিক কূটনীতিক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির মতো মৌলিক বিষয়কে রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ভূরাজনীতি গবেষক ড. রুহুল কাদির বলেন, “সিন্ধু চুক্তি মূলত বিশ্বের অন্যতম সফল আন্তঃরাষ্ট্রীয় পানি চুক্তি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু যদি এটি রাজনীতির বলি হয়, তাহলে এর ফল হবে বহু দশকের জন্য সংকট ও শত্রুতার নতুন অধ্যায়।”

বিলাওয়াল ভুট্টোর এই হুঁশিয়ারি কতটা আন্তরিক যুদ্ধঘোষণা, আর কতটা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অবস্থান জানানোর কৌশল তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটুকু নিশ্চিত পানি এখন শুধু জীবনধারণের উপকরণ নয়, বরং ভূরাজনীতির কৌশলগত অস্ত্র হয়ে উঠছে।

সিন্ধু চুক্তি নিয়ে উত্তেজনার পরিণতি শুধু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার নয়, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদে ছায়া ফেলতে পারে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত