ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

অবশেষে বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরান- ইসরায়েল সংঘাত!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৪ ০৮:০৬:০৭
অবশেষে বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরান- ইসরায়েল সংঘাত!

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে কূটনৈতিক মধ্যস্থতা যার কেন্দ্রে ছিল উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতার। যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অনুরোধে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি এই কৌশলগত মধ্যস্থতা চালান। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে ঘটনাপ্রবাহ বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সম্প্রতি ইরান আল-উদেইদ মার্কিন বিমানঘাঁটিতে স্বল্প পাল্লার কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যেটি কাতারের রাজধানী দোহার নিকটে অবস্থিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সামরিক কার্যক্রমের একটি প্রধান কেন্দ্র। হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র হয়ে ওঠে।

এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। ট্রাম্প আমিরকে জানান, ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং ওয়াশিংটনের মতে, এই যুদ্ধবিরতিকে কার্যকর করতে হলে ইরানকে যথাসময়ে রাজি করানো জরুরি। কাতার, যাদের ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রয়েছে, এই গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করে।

প্রথমেই কাতারের প্রধানমন্ত্রী ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার গোপন ফোনালাপ করেন। এসব আলোচনায় ইরানকে বোঝানো হয় যে, মার্কিন প্রশাসন এই মুহূর্তে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ চায় না এবং ইসরায়েলকেও সীমিত সংঘর্ষের মধ্যে রাখতে সম্মত করানো হয়েছে। ইরানকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ফিরে আসতে উৎসাহিত করার জন্য কাতার অতীত অভিজ্ঞতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিকগুলো সামনে আনে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাতারের প্রস্তাবিত পথনকশায় পরোক্ষভাবে আশ্বাস ছিল যুক্তরাষ্ট্র চাইলে এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও বৃহৎ রাজনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা উন্মুক্ত রাখতে পারে। ইরানের দিক থেকেও কৌশলগত কারণে এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়াটা যৌক্তিক বিবেচিত হয়, বিশেষ করে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো এ মুহূর্তে তাদের স্বার্থে ছিল না।

এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর ইসরায়েল ও ইরান উভয় পক্ষই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সামরিক কার্যক্রম হ্রাস করে। যদিও আনুষ্ঠানিক চুক্তি বা বিবৃতি প্রকাশ হয়নি, তবে মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বলছে, উভয় পক্ষ এখন আপাতত অবস্থান পর্যবেক্ষণে আছে এবং এই মুহূর্তে স্থল কিংবা আকাশপথে কোনো সরাসরি সংঘর্ষ হয়নি।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ কাতারের একটি শক্তিশালী ভূ-রাজনৈতিক অর্জন। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘ব্যাকচ্যানেল’ সংলাপের অন্যতম বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে কাতার আবারও তার অবস্থানকে দৃঢ় করল। মধ্যপ্রাচ্যের জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে, যেখানে সৌদি আরব, তুরস্ক, ইসরায়েল ও অন্যান্য শক্তিগুলোর প্রভাব রয়েছে, সেখানে নিরপেক্ষ অথচ সক্রিয় একটি দেশ হিসেবে কাতার এখন আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

তবে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে বলছেন এই যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র একটি সাময়িক শান্তির সুযোগ; মূল সমস্যা সমাধানের জন্য তেহরান, ওয়াশিংটন এবং তেলআবিবের মধ্যে বৃহৎ কৌশলগত সমঝোতা প্রয়োজন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার, হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন, এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এইসব দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার উৎসগুলোর সমাধান ছাড়া সত্যিকারের শান্তি সম্ভব নয়।

এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ‘নীরব মধ্যস্থতা’ কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যুদ্ধের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যকে সাময়িকভাবে হলেও সংঘাত থেকে সরিয়ে আনতে কাতারের এই উদ্যোগ এখন বিশ্ব রাজনীতিতে প্রশংসিত হচ্ছে। কাতার ভবিষ্যতেও এই কৌশলগত মধ্যস্থতা চালিয়ে যাবে কি না, সেটি নির্ভর করছে মার্কিন-ইরান পরবর্তী উত্তরণপর্ব ও আঞ্চলিক মিত্রদের ভূমিকার ওপর।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত