পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত  ভারতের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ০৯:০৮:৫৮
পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত  ভারতের

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীব্যবস্থাপনার অন্যতম সফল মডেল। এই চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু ও এর ছয়টি প্রধান শাখা নদীর পানি বণ্টন করা হয় ভারতকে তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদীর (রবি, বিয়াস, এবং শতদ্রু) উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় এবং পাকিস্তান পায় পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী (সিন্ধু, ঝেলম, চেনাব) থেকে পানি ব্যবহারের অধিকার।

তবে গত মাসে কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি 'স্থগিত' ঘোষণা করে।

টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন “না, এটি (চুক্তি) আর কখনোই পুনর্বহাল হবে না।”

“একটি বিশাল খাল নির্মাণ করে আমরা পাকিস্তানে প্রবাহিত পানি রাজস্থানে নিয়ে আসব। পাকিস্তান যে পানি এতদিন অন্যায্যভাবে পেয়ে আসছিল, এবার তা বন্ধ হবে।”

এই মন্তব্যে ভারত সরকার এই চুক্তির পুনর্বহাল সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করল যা অতীতে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় অনেক সময়ই স্থিতিশীলতা রক্ষা করত।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে অতীতে পাকিস্তান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে এসেছে, “চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে যাওয়ার কোনো বিধান নেই,” এবং পানি আটকে দেওয়ার চেষ্টা হলে “তা যুদ্ধের উসকানি হিসেবে বিবেচিত হবে।”

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, দেশটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আইনি ফোরামে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক পানি আইন এবং ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের নদী ও সীমান্তজল ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী ভারতের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার আইনি ভিত্তি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিন্ধু পানি চুক্তির মতো একটি দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থার ভেঙে পড়া শুধুমাত্র ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তি, কৃষি, বাস্তুতন্ত্র ও জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিশ্লেষক ড. সাবা খুরশিদ বলেন, “পানি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় পরবর্তী ভূরাজনৈতিক অস্ত্র। ভারতের মতো উজানের দেশ যদি চুক্তি লঙ্ঘন করে নিচু দেশগুলোর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে নেয়, তবে পুরো অঞ্চলেই জলসংকট, শুষ্কতা ও রাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধি পেতে পারে।”

বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানি চুক্তি চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যানের বার্তা কেবল একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির সমাপ্তি নয় এটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, কূটনীতি ও সম্পদ-নিয়ন্ত্রণের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত