মিষ্টির নামের শেষে 'পাক' থাকায় নাম বদলে দিল ভারতীয়রা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ০৮:৩৬:০২
মিষ্টির নামের শেষে 'পাক' থাকায় নাম বদলে দিল ভারতীয়রা

যুদ্ধ বা কূটনীতি নয়, এবার প্রতিরোধের নতুন ভাষা হয়ে উঠেছে ভারতের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী জয়পুরে জনপ্রিয় মিষ্টি ‘মাইসোর পাক’-এর নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘মাইসোর শ্রী’। এটি কোনো স্বাদ বদলের গল্প নয়, বরং এক প্রতীকী প্রতিবাদের নিঃশব্দ অথচ স্পষ্ট ভাষ্য।

‘মাইসোর পাক’-এর “পাক” শব্দটি ঐতিহাসিকভাবে কন্নড় ভাষার ‘পাকা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ রান্না বা ঘন মিশ্রণ। কিন্তু সাম্প্রতিক কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর সেই শব্দই হয়ে উঠেছে একটি রাজনৈতিক প্রতীক।

সেই হামলার পেছনে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ ভারতের নাগরিকরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তারই এক অভিনব রূপ দেখা গেছে জয়পুরের মিষ্টির দোকানে। অনেক দোকানিই তাদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির নাম থেকে ‘পাক’ বাদ দিয়ে ‘শ্রী’ যোগ করছেন, যা সংস্কৃত শব্দ হিসেবে শুভতা ও পবিত্রতার প্রতীক।

স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী অঞ্জলি জৈন বলেন, “মিষ্টি শুধু খাবার নয়, এটি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। আমরা চাইনি কোনোভাবেই এমন শব্দ থাকুক, যা শত্রু দেশের স্মৃতি বহন করে। আমাদের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় সম্মানকে সামনে রেখেই নেওয়া।”

আরেক বিক্রেতা বিনীত ত্রিকার আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “আমরা চাই, যারা ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, তারা ইতিহাস থেকেও মুছে যাক। মিষ্টির এই নতুন নাম তাদের প্রতি আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের বার্তা বহন করে।”

PTI জানায়, জয়পুর শহরে এমন অন্তত তিনটি জনপ্রিয় মিষ্টির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সবক্ষেত্রেই ‘পাক’ শব্দ বাদ দিয়ে রাখা হয়েছে ‘শ্রী’ বা ‘রস’। দোকানের সাইনবোর্ড, প্যাকেটিং এমনকি দোকানিদের পোশাকেও এই পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট।

এই নাম পরিবর্তন নিছক দেশপ্রেমের আবেগ নাকি ভাষার প্রতীকের বিরুদ্ধে এক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম? বিষয়টি নিয়ে মতবিভেদ থাকলেও, ঘটনাটি একটি বড় প্রশ্ন তুলছে ভাষার নিরীহ অংশগুলোকেও আমরা রাজনৈতিক প্রতীকে পরিণত করছি কি না।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ভারতীয় সমাজে একটি নতুন ট্রেন্ডের সূচনা হতে পারে, যেখানে ‘সংস্কৃতি’ ও ‘স্মারক’ হয়ে উঠছে জাতীয় আবেগের প্রতিচ্ছবি।

‘মাইসোর শ্রী’ এখন আর শুধু একটি মিষ্টি নয়। এটি এক প্রতিবাদের প্রতীক, নীরব প্রতিরোধের স্লোগান, এবং ঐতিহ্যের মধ্যে দিয়ে নিজের অবস্থান জানানোর সাংস্কৃতিক পন্থা। যুদ্ধবিরতির কূটনৈতিক দৃশ্যপটের পেছনে, জয়পুরের দোকানগুলোর এই চুপচাপ প্রতিক্রিয়া হয়তো ইতিহাসে রয়ে যাবে এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের দলিল হয়ে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত