উদ্যোক্তা নারীদের জয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মান ছয়জনের হাতে

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ১০:৪২:৪৫
উদ্যোক্তা নারীদের জয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মান ছয়জনের হাতে

সত্য নিউজ:২৫ বছর আগে মাত্র ৫ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে রাঙামাটির পাহাড়ি নারীদের জন্য তাঁতের তৈরি পোশাকের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ছেনছেন রাখাইন। তাঁর ‘মেসার্স মে রাখাইন বার্মিজ স্টোর’ এখন পাহাড়ি পিনন, খাদি, ব্লাউজ ও খামি উৎপাদন ও বিপণনের একটি পরিচিত নাম। এই স্বপ্ন ও সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ ছেনছেন রাখাইনসহ ছয় নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা প্রদান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রোববার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘এসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলা ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন খাতে উদ্ভাবনী উদ্যোগের স্বীকৃতি

ছয় উদ্যোক্তার প্রত্যেকেই তাঁদের নিজ নিজ অঞ্চলে এবং খাতে অনন্য উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের পথকে প্রশস্ত করেছেন।

১. রোজি আহমেদ, বাগেরহাটের ‘মেসার্স অর্গানিক প্রোডাক্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা, নারিকেলের খোসা থেকে তৈরি প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার করে তৈরি করছেন ১৩ ধরনের পাখির বাসা, পোষাপ্রাণীর খেলনা, সফট টয়সহ পরিবেশবান্ধব নানা পণ্য। তাঁর প্রতিষ্ঠান এখন ইউরোপের বাজারেও পণ্য রপ্তানি করছে।

২. সাবেকুন নাহার, ফরিদপুরের ‘লাম ক্রিয়েশনস’-এর কর্ণধার, পাট, কচুরিপানা ও সুতা দিয়ে তৈরি করছেন হাতের কাজের মাদুর, ঝুড়ি ও ব্যাগ। পল্লী অঞ্চলের নারীদের কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে তাঁর মাধ্যমে।

৩. রোজিনা আলিম, সিলেটের উদ্যোক্তা, ‘মিনার কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস’-এর মাধ্যমে দেশীয় চাহিদা পূরণে তৈরি করছেন নানা প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও ভোগ্যপণ্য—মোমবাতি, নারিকেল তেল, আগরবাতি, গ্লিসারিন থেকে শুরু করে ভ্যাসলিন পর্যন্ত।

৪. আয়েশা বেগম, সাভারের ‘মুসলিম জুয়েলারি ওয়ার্কশপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা, রুপা, তামা ও পিতলের অলংকার তৈরি ও রপ্তানির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশি হস্তশিল্পের ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। তাঁর উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে।

৫. হোসনে আরা, পাবনার ঈশ্বরদী থেকে পরিচালিত ‘আকলিমা সেবা ক্লিনিক ও নার্সিং হোম’-এর মাধ্যমে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ২০০৪ সালে গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার সাহসী যাত্রা শুরু করেন। এই ক্লিনিক ইতিমধ্যে সুফিয়া কামাল স্বর্ণপদকসহ নানা স্বীকৃতি পেয়েছে।

নারী উদ্যোক্তা মেলার ইতিবাচক প্রভাব

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, "দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা অপরিহার্য। নারী উদ্যোক্তাদের স্থায়ী একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এ ধরনের মেলা আয়োজন অব্যাহত রাখবে।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা জানান, চার দিনব্যাপী এই মেলায় প্রায় ৬০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে, যা নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি ক্রেতা ও সমাজের আগ্রহ এবং আস্থারই প্রতিফলন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ, যিনি নারী উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা

সমাপনী অনুষ্ঠানে ছয় উদ্যোক্তাকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ৭৩ জন নারী উদ্যোক্তাকে সনদ প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই আয়োজন শুধু পুরস্কার প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে উদ্যোক্তারা একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে, নিজেদের পণ্যের প্রচার করতে এবং নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এ ধরনের মেলা ভবিষ্যৎ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক আশার বাতিঘর হয়ে থাকবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ