চট্টগ্রাম বন্দর কার হাতে যাবে? উঠছে বড় প্রশ্ন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ২০:১৬:৫৮
চট্টগ্রাম বন্দর কার হাতে যাবে? উঠছে বড় প্রশ্ন

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির হাতে দেয়ার প্রক্রিয়াকে “ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদসংকুল” বলে উল্লেখ করেছেন। শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা কেন ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজন করেছিল এই সভা।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “মোহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় ডিপি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের সেরা অপারেটর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থ কি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ থাকতেই পারে, কিন্তু মোহাম্মদ ইউনূস কেন এই বিষয়ে আগ্রহী, তা তদন্তের দাবি রাখে।” তিনি আরও বলেন, “বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা হয়নি।”

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড চট্টগ্রাম বন্দরের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে (পিপিপি) জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বন্দরের শ্রমিক ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “দেশ এলএনজি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো পদক্ষেপ নেই। বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দরের দায়িত্ব তুলে দেয়ার ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে, অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতায় সমস্যা বাড়বে।”

তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে গোপন চুক্তির স্বচ্ছতা দাবি করেন এবং বলেন, “প্রাণ প্রকৃতি বিনাশকারী ক্ষতিকর চুক্তিগুলো জাতীয় পর্যায়ে উন্মুক্ত করতে হবে। ড. ইউনূস কেন এগুলো প্রকাশ করছেন না, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ।”

এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। “রামপাল ও রূপপুর প্রকল্প নিয়ে আগে যেমন সমালোচনা করা যেত, এখন মোহাম্মদ ইউনূসের ওপর প্রশ্ন তোলা নিয়েই বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে, যা অগ্রহণযোগ্য।”

বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করতে না দেওয়া ও আস্থাহীনতার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যত প্রভাব যাচাই হওয়া প্রয়োজন। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানা হওয়ার প্রবণতা দেশের জন্য ক্ষতিকর।”

তিনি জানান, আগামী ২৭ ও ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের ইজারা ও বিদেশি কোম্পানির ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন বামপন্থী দলসহ একটি জাতীয় মঞ্চ গঠন করা হবে। তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত লং মার্চ করবেন। সফলতা নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সভায় প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, “ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ পর্যাপ্তভাবে বিবেচনা হয়নি। দক্ষতা নিশ্চিত করতে শুধু বিদেশি অপারেটর আনলেই হবে না; অবকাঠামো, জনবল ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।”

লেখক ও গবেষক ড. মাহা মির্জা বলেন, “কৌশলগত খাতে বেসরকারিকরণ আয়বৈষম্য বাড়িয়েছে, শ্রমবাজার সংকুচিত করেছে এবং সামাজিক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।”

সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লা বাহার, বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. জাফর আলম প্রমুখ।

—আশিক নিউজ ডেস্ক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত