ন্যাটো সম্মেলন ২০২৫
হেগে ন্যাটো সম্মেলন—রুটে’র ফর্মুলা, ট্রাম্পের চাওয়া, ইউরোপের দ্বিধা

হেগে আসন্ন ন্যাটো সম্মেলন ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে উত্তেজনার আবহ, যদিও দৃশ্যত তা চেপে রাখার চেষ্টা চলছে। ন্যাটোর নবনিযুক্ত মহাসচিব মার্ক রুটে সম্মেলনের আলোচ্যসূচিকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন জয় হয় এবং ইউরোপীয় বিভাজন চোখে না পরে। তবে এই প্রচেষ্টা সত্যিকার ঐক্যের প্রতিফলন নয়, বরং রাজনৈতিক রন্ধনশৈলীর নিখুঁত এক উদাহরণ।
ট্রাম্প প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ন্যাটোর অস্তিত্ব ও সমষ্টিগত প্রতিরক্ষার ধারণাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য, বলেছিলেন—তারা "মার্কিনিদের কাছে বিশাল পরিমাণ অর্থ ঋণী।" সেই ধারাবাহিকতায় এবারো তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয়কে সম্মেলনের মূল ইস্যু বানিয়েছেন।
রুটে’র প্রস্তাব—ন্যাটো সদস্য দেশগুলো জিডিপির ৫% পর্যন্ত প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে—অবশ্য আপসের রূপ নিয়েছে। মূলত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ৩.৫% ‘মূল প্রতিরক্ষা খাতে’ এবং অতিরিক্ত ১.৫% ‘প্রতিরক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যয়’ হিসেবে। কিন্তু ‘প্রতিরক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যয়’ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি; রুটে নিজেই বলেছেন, এর মধ্যে অবকাঠামোগত খরচ যেমন সড়ক, সেতু, রেলও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা একে বলছেন “সৃজনশীল হিসাবের নতুন অধ্যায়”।
অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হবে সীমিত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি থাকলেও মূল আলোচনায় তাকে রাখা হচ্ছে না। ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে ইউক্রেন ইস্যুতে মতবিরোধ এতটাই প্রকট যে, সম্মেলনের আলোচ্যসূচি থেকেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে রাশিয়া-নির্ভর নতুন কৌশল প্রণয়নের প্রস্তাব।
নিরাপত্তার দিক থেকেও এই সম্মেলন রেকর্ড গড়েছে। €১৮৩.৪ মিলিয়ন ব্যয়ে ডাচ পুলিশ তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আবার সম্মেলনের মূল আলোচনার সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে মাত্র তিন ঘণ্টায় এবং যৌথ বিবৃতি মাত্র পাঁচ অনুচ্ছদে সীমাবদ্ধ, অনেকেই বলছেন এটি ট্রাম্পের স্বল্প মনোযোগ সহিষ্ণুতার প্রতি সম্মান জানিয়ে করা হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রুটে সম্মেলনটিকে ট্রাম্পের জন্য এক প্রকার ‘কূটনৈতিক উপহার’ হিসেবে সাজালেও ইউরোপীয় ভেতর-বাহির বিভাজন এবং ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ট্রাম্প ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ‘অপ্রাসঙ্গিক’ মনে করেন, যেখানে ইউরোপীয় নেতারা বিপরীত অবস্থানে।
ন্যাটো নিজেই স্বীকার করছে—রাশিয়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ন্যাটো দেশের উপর হামলা চালাতে পারে। অথচ আজও বেশিরভাগ সদস্য দেশ তাদের সামরিক সক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ। মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল ক্রিস্টোফার ডোনাহিউ সরাসরি বলছেন—ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের প্রতিরক্ষা আজও অপর্যাপ্ত।
এই বাস্তবতা সত্ত্বেও সম্মেলন যতটা না বাস্তব প্রস্তুতির, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বার্তাবাহিত। লক্ষ্য—দৃশ্যত ঐক্য প্রদর্শন, বাস্তবে মতপার্থক্য আড়াল করা। কিন্তু এই আড়ালের মধ্যেই হয়তো অদূর ভবিষ্যতের বড় ধরনের সংকট ঘুমিয়ে আছে।
-সুত্র - বিবিসি
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা