ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইরানে সন্দেহজনক  ভূমিকম্প: প্রাকৃতিক নাকি গোপন অস্ত্র পরীক্ষা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১০:২৮:৫৩
ইরানে সন্দেহজনক  ভূমিকম্প: প্রাকৃতিক নাকি গোপন অস্ত্র পরীক্ষা

ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় সেমনান প্রদেশে ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প নতুন করে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা মহলে আলোড়ন তুলেছে। ভূমিকম্পটি স্বাভাবিক হলেও এর উৎপত্তিস্থল এবং ভূগর্ভস্থ গভীরতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে এটি ঘটেছে ইরানের উচ্চ-গোপনীয়তা ও কৌশলগত সামরিক স্থাপনা সেমনান স্পেস সেন্টার এবং মিসাইল কমপ্লেক্সে।

ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় অনুযায়ী মধ্যরাতের কিছু আগে আঘাত হানে এবং উপকেন্দ্র ছিল সেমনান শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এতটা অগভীর ভূমিকম্প সাধারণত স্বাভাবিক হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ বা পারমাণবিক পরীক্ষার প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।

কম্পন না কি সামরিক ‘ডিকয়’?

বিশ্লেষকদের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, এটি প্রকৃত ভূমিকম্প না হয়ে কোনো গোপন অস্ত্র পরীক্ষা বা বিস্ফোরণ হতে পারে বিশেষ করে বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন এমন স্পর্শকাতর স্থানে কম্পনকে একাংশ মনে করছেন একটি সম্ভাব্য কভার অ্যাক্টিভিটি বা ‘ডিকয়’, যার আড়ালে চালানো হতে পারে নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বা পারমাণবিক উৎক্ষেপণ সংক্রান্ত গবেষণা।

সামরিক ও কৌশলগত প্রেক্ষাপট

সেমনান হলো ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং মহাকাশ প্রযুক্তির কেন্দ্রস্থল। এখান থেকেই ইরান তার ‘স্পেস লঞ্চ ভেহিকল’ উৎক্ষেপণ করে থাকে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে হাইপারসনিক ও মাল্টিপল ওয়ারহেডযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেরও তথ্য পাওয়া গেছে।

এমন এক অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঘটনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA), ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে এবং বিভিন্ন ভূকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর নজরে পড়েছে।

কাকতালীয় সময়?

এই ভূমিকম্পের মাত্র একদিন আগেই জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইরান ও ইসরায়েলের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে। একই সময় ইসরায়েল দাবি করে, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেও গোপনে তা সামরিক উদ্দেশ্যে সম্প্রসারণ করছে।

এমন পটভূমিতে ভূমিকম্পের সময় ও স্থান অনেকের কাছে কাকতালীয় নয়, বরং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ বলেই মনে হচ্ছে।

সতর্ক দৃষ্টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের

যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহত বা অবকাঠামোগত ক্ষতির তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি, তথাপি ভূমিকম্পের মাত্রা, গভীরতা এবং অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে এটি সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও বেশি কিছু হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা ভূকম্পন ও ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করার জন্য সিসমিক ওয়েভ প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়ে IAEA ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে।

"যদি এটি প্রকৃতপক্ষে একটি সামরিক পরীক্ষা বা বিস্ফোরণের অংশ হয়, তবে এটি শুধু ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা কাঠামোকে নতুন করে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে," বলছেন একজন পশ্চিমা বিশ্লেষক।

সেমনান ভূমিকম্প প্রাথমিকভাবে একটি ভূপ্রাকৃতিক ঘটনা হলেও এর কৌশলগত প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিবেশের সঙ্গে যোগসূত্র এই ঘটনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এটি যদি সত্যিই কোনো অস্ত্র পরীক্ষা বা প্রযুক্তিগত মহড়ার আড়াল হয়, তাহলে এর ফলাফল হতে পারে গভীরতর কূটনৈতিক সংকট ও নতুন ধরনের প্রতিরক্ষা পাল্টা-পাল্টি প্রতিক্রিয়া।

সেমনানে কি প্রকৃতি কাঁপল, না ইচ্ছাকৃত কোনো শক্তির ভূগর্ভস্থ মহড়া এই প্রশ্নের উত্তর এখন আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে উঠেছে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত