ইরান- ইসরায়েল সংঘাত
ইস্তাম্বুলে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বৈঠকে আলোচনায় যা থাকছে

বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সহস্রাধিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শুরু হচ্ছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (OIC) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের ৫১তম অধিবেশন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনটি মুসলিম বিশ্বের যৌথ কূটনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই দুদিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনে ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিশরসহ সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া, ওআইসি-অনুমোদিত সংস্থা, পর্যবেক্ষক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ প্রায় ১,০০০ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন যা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সমাগম হিসেবে বিবেচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ওআইসির এই ঐতিহাসিক জমায়েত মুসলিম বিশ্বের ভেতরে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ঐক্য এবং যৌথ অবস্থানের বার্তা বহন করছে। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য “পরিবর্তনশীল বিশ্বে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা” এই সময়োপযোগী বাস্তবতায় ওআইসির ভূমিকাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করার আহ্বান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্মেলনের মূল আলোচ্যসূচিতে উঠে আসছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক সংকট এবং ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ইরানবিরোধী আগ্রাসন।বিশেষ করে ইসরায়েলের সাথে ইরানের টানটান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ নীতিগত অবস্থান নির্ধারণের লক্ষ্য রয়েছে।
"ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ও ফিলিস্তিন সংকটকে কেন্দ্র করে এবার ওআইসির সিদ্ধান্ত শুধু আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না আশা করা হচ্ছে কার্যকর কৌশলগত রূপরেখাও আসবে," বলছেন তুর্কি কূটনীতিক মহল।
দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমাধানের সম্ভাবনা, জেরুজালেমের মর্যাদা রক্ষা, ফিলিস্তিনের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, এবং মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক নিরাপত্তা হুমকিগুলোও এই বৈঠকে গুরুত্ব পাচ্ছে।
ওআইসি ভুক্ত বিভিন্ন দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট, শরণার্থী সমস্যা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় সম্মিলিত কৌশল নির্ধারণেও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
সম্মেলনের শেষ দিন প্রকাশিত হবে “ইস্তাম্বুল ঘোষণা” যেটি মুসলিম বিশ্বের যৌথ অবস্থান ও আগামী বছরের ওআইসি কর্মপরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
এই ঘোষণায় মানবিক সহায়তা, রাজনৈতিক প্রতিরোধ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রযুক্তি বিনিময় এবং নিরাপত্তা জোটের মতো বিভিন্ন উদ্যোগের রূপরেখা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওআইসির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তুরস্ক এবার সংগঠনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের সভাপতিত্ব গ্রহণ করছে। অতীতে ১৯৭৬, ১৯৯১ ও ২০০৪ সালে এই সম্মেলন আয়োজন করে কূটনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে দেশটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের মধ্যকার আঞ্চলিক বিভাজন মেটাতে এবং একক কণ্ঠস্বর গড়ে তুলতে চাইছে বিশেষত ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরির প্রয়াসে।
বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান সহিংসতা এবং ইসলামী দুনিয়ার রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার প্রেক্ষাপটে ওআইসির ইস্তাম্বুল সম্মেলন একটি ঐতিহাসিক পরীক্ষা।বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা সমন্বিত, দৃঢ় এবং প্রভাবশালী মুসলিম নেতৃত্ব এই সম্মেলন সেই আকাঙ্ক্ষার দিকেই এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা