সুতার চাহিদায় জোয়ার, দামে আগুন

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ০৫ ১১:০৪:৫২
সুতার চাহিদায় জোয়ার, দামে আগুন

সত্য নিউজ:ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ হওয়ার পর দেশে সুতার চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ সুযোগে দেশীয় বস্ত্রকলগুলো কেজিতে ৪৫ সেন্ট পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। একদিকে বাড়তি দাম, অন্যদিকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সংকটে হুমকির মুখে পড়ছে দেশের অন্যতম প্রধান রফতানি খাত—তৈরি পোশাক শিল্প।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে হলে এই খাতে সুতা সরবরাহে ভারসাম্য আনা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। একইসঙ্গে নজর রাখতে হবে যাতে কোনো শিল্প আরেক শিল্পকে অযথা চাপ প্রয়োগ করে বিপাকে না ফেলে।

চাহিদা বেড়েছে, সেই সাথে বাড়তি ব্যয়

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, স্থলপথে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশের বাজারে ৫০-৬০ কাউন্টের সুতার চাহিদা বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশ। কিন্তু চাহিদা বাড়তেই কারখানাগুলো কেজিতে সুতার দাম বাড়িয়েছে ৪৫ সেন্ট পর্যন্ত। ফলে একই পণ্যের জন্য স্থানীয়ভাবে ৩ ডলার ৩৫ সেন্ট থেকে ৩ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে তা ২ ডলার ৯০ সেন্টেই পাওয়া সম্ভব।

কল মালিকদের যুক্তি: দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা অনুযায়ী

তবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পক্ষ থেকে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সংগঠনটির সহ-সভাপতি সালেউদ জামান খান দাবি করেন, "আমরা দাম নির্ধারণ করি না; এটি নির্ধারিত হয় ক্রেতার প্রয়োজন ও মানের ওপর ভিত্তি করে।"

বিটিএমএ বলছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানির কারণে দেশীয় কারখানায় বিক্রি না হওয়া সুতার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকায়। ফলে সুতা আমদানি বন্ধ হওয়া দেশীয় উৎপাদকদের জন্য কিছুটা স্বস্তির হলেও, তৈরি পোশাক খাতের জন্য তা নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: আরেকটি বড় বাধা

একের পর এক অর্ডার পেতে থাকা পোশাক কারখানাগুলো সঠিক সময়ে উৎপাদনে যেতে পারছে না বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতির কারণে। বিশেষ করে দেশের ৫২৭টি বস্ত্রকলের মধ্যে যেগুলো মূলত নিট পোশাক ও ওভেন সেক্টরে সাপ্লাই দেয়, তাদের অনেকেই আংশিক উৎপাদনে রয়েছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “সুতা উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে এই শিল্প চেইনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।”

স্থানীয় উৎপাদন বনাম আমদানি: ভারসাম্য জরুরি

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বার্ষিক সুতা চাহিদার বড় অংশ দেশীয় কারখানাগুলো পূরণ করতে সক্ষম হলেও সব ধরনের সুতা এখনো দেশেই উৎপাদন সম্ভব নয়। ফলে আমদানির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বাজার বন্ধ হওয়ায় যে খালি জায়গা তৈরি হয়েছে তা যেন স্থানীয় উৎপাদনকারীরা গুণগত মান বজায় রেখে পূরণ করতে পারে, সেজন্য সরকারি সহায়তা ও নীতি সহায়তা জরুরি।

সামনে কী করণীয়?

বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তাদের মতে, সংকট সমাধানে প্রয়োজন সমন্বিত কৌশল:

  • সুতা উৎপাদনে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা

  • স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের দামের মধ্যে ভারসাম্য রাখা

  • উৎপাদক ও রফতানিকারক—উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নীতিগত হস্তক্ষেপ

  • আমদানির ন্যূনতম বিকল্প নিশ্চিত রাখা, যাতে বাজারে একচেটিয়া পরিস্থিতি তৈরি না হয়

সুতা উৎপাদক ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারলে রফতানি আয়ের এ প্রধান খাত দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ