এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইসরাইলের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেয়ের মাসরির এক অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য হামলার ইঙ্গিত দেন, যা মুহূর্তেই দৃষ্টি কাড়ে কূটনৈতিক মহলের।
আরবি ও উর্দু ভাষায় লেখা পোস্টে মেয়ের মাসরি লেখেন, “ইরানের অভিযান শেষ হওয়ার পর আমরা পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি।” একইসঙ্গে তিনি যোগ করেন, “পাকিস্তান ইরান থেকে খুব দূরে নয়। এটুকু বুঝলেই যথেষ্ট।”
যদিও মাসরি বর্তমানে কোনো সরকারি পদে নেই, তথাপি তিনি ইসরাইলি রাজনীতিতে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে তার এই মন্তব্যকে অনেকেই সরকারপন্থী একটি ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করছেন।
মাসরির মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। পাকিস্তানের জনগণ ও বিশ্লেষকরা একে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রকাশ্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।
পাকিস্তান স্ট্র্যাটেজিক ফোরামের পক্ষ থেকে ব্যঙ্গাত্মক টোনে লেখা হয়, “এরকম কোনো পরিকল্পনার আগে ক্যাপ্টেন লুটজের সঙ্গে পরামর্শ করে নিও, উনি অবশ্যই স্ট্রাটেজি ঠিক করতে সাহায্য করবেন – পাকিস্তান।”অন্যদিকে একজন ব্যবহারকারী উসমান ঘানি লিখেছেন, “হা হা! যখন আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র ছিল না তখনো তোমরা মিশন ফ্যান্টম ফ্লাইট চালাতে সাহস করোনি, আর এখন আছে, তাই স্বপ্নই দেখে যাও!”
এর আগে সোমবার পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক বিবৃতিতে ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেন, “ইসরাইলের উদ্দেশে আমাদের বার্তা স্পষ্ট: পাকিস্তানের দিকে চোখ তুলে তাকাবেন না।”তিনি আরও বলেন, দেশটি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে এবং যেকোনো রকম বৈদেশিক আগ্রাসনের জবাব দিতে পাকিস্তানের পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতা ও মনোবল রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। ইরানকে ঘিরে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে মাসরির মতো রাজনীতিকদের এ ধরনের বক্তব্যে দক্ষিণ এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ সিদ্দিকী বলেন, “যদি রাষ্ট্রীয় কোনো অবস্থান থেকে এই বক্তব্য না এলেও, মাসরির রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় এটি সহজে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটি মূলত এক প্রকার মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ, যা পাকিস্তানের নিরাপত্তা কাঠামোকে চাপে ফেলতে চায়।”
ইসরাইল ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও, এই হুমকি এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়াগুলো ভবিষ্যতে তৃতীয় পক্ষগুলোর মাধ্যমে পরোক্ষ সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন প্রয়োজন, দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এই ধরনের উত্তেজনাকর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে আঞ্চলিক শান্তি ও সংলাপকে উৎসাহিত করা।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান