‘পুশ-ইন’ নয়, পরিকল্পিত নিপীড়ন? ভারতীয় মুসলিমদের বাংলাদেশে নির্বাসনের নেপথ্যে যা ঘটছে

ভারত সরকার সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের নামে হাজার হাজার মানুষকে আটক ও নির্বাসনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশে—যাদের অনেকেই জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবৈধ ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছে।
বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এই নির্বাসন প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ ভুক্তভোগীই মুসলিম এবং নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর অংশ। অভিযোগ উঠেছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) বহু মানুষকে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্বাসিত অনেকের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের যথেষ্ট প্রমাণ থাকলেও, তাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে।
ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে নির্বাসন: বাস্তব চিত্র৬২ বছর বয়সী হাজেরা খাতুন ও ৬৭ বছর বয়সী মালেকা বেগম—দুই নারীই শারীরিকভাবে অসুস্থ, এবং তাদের পরিবার ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখালেও, পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে সীমান্তে ফেলে দেয়। হাজেরা জানান, “বন্দুক ঠেকিয়ে আমাদের বলা হয়, বাংলাদেশে যাও না হলে গুলি করব।” তার বক্তব্য অনুযায়ী, তারা চারটি গুলির শব্দ শোনার পর ভয়ে রাতের অন্ধকারে বন ও নদী পেরিয়ে সীমান্ত পার হন।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাদের আটক করে, কিন্তু কাগজপত্র যাচাই করে দেখে তারা ভারতীয় নাগরিক, ফলে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই ভারতের অভ্যন্তরে ফিরে যাওয়ার সময় মাইলের পর মাইল দুর্গম পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন।
“জাতীয়তা” নিয়ে দ্বিধা, প্রশ্নবিদ্ধ অভিযানগুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম—এই রাজ্যগুলো থেকে ব্যাপক হারে লোকজনকে “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” বলে চিহ্নিত করে আটক করা হচ্ছে। গুজরাটে ৬,৫০০ জনকে গ্রেপ্তারের পর দেখা যায় মাত্র ৪৫০ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে। অর্থাৎ ৯৩ শতাংশই ভুলভাবে নির্যাতনের শিকার।
আসামে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা দেন, “অবৈধ বিদেশিদের এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহিষ্কার করা হবে। এ প্রক্রিয়া আরও তীব্র হবে।”
বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াবাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নয়াদিল্লিকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে যেন পুশ-ইন প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয় এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর মেলেনি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (BGB) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, “নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বনে-জঙ্গলে ফেলে দেওয়া, নদীতে ঠেলে দেওয়া কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই মানবিক নয়। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও মানবাধিকারবিরোধী আচরণ।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নিপীড়নের আশঙ্কাকাশ্মীরে একটি হামলায় পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনার পর, বিজেপি সরকার “বহিরাগত” শুদ্ধিকরণ অভিযানের কথা বলে ‘অপারেশন সিন্ধু’ চালু করে। এরপর থেকেই মূল টার্গেট হন মুসলিম সম্প্রদায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার অংশ, যার মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের বিচ্ছিন্ন ও নিপীড়িত করা হচ্ছে।
—আশিক নিউজ ডেস্ক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান
- ইরানের কাছে বর্তমানে পরমাণু অস্ত্র নেই:নেতানিয়াহু