ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইরানকে লক্ষ্য করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৯ ০৯:৫৫:১৩
ইরানকে লক্ষ্য করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো সময় সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন শঙ্কা জোরালো হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করলেও, ওয়াশিংটন ডিসিতে ঘন ঘন সমন্বয় সভা, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও ফেডারেল সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রস্তুতির ইঙ্গিত উঠে আসছে।

ব্লুমবার্গ নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ইরানে সম্ভাব্য সামরিক হামলার বিষয়ে "গোপন প্রস্তুতি" নিচ্ছেন এবং "আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই" এমন একটি অভিযানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র অনুযায়ী, হোয়াইট হাউস ও প্রতিরক্ষা দপ্তরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ঘিরে টানা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কৌশল, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও যৌথ জোটের সহযোগিতা এই তিনটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, "শনিবার বা রবিবারের মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রিত স্ট্রাইক (নির্বাচিত হামলা)" চালানোর কথাও আলোচনায় এসেছে, যদিও পরিস্থিতি এখনও গতিশীল এবং প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্লুমবার্গকে বলেন, “সঙ্কেত অনেক স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে নিজেদের সামরিক, কূটনৈতিক ও গোপন গোয়েন্দা অবকাঠামোকে প্রস্তুত করছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বিশ্বের জন্য এবং বিশেষ করে তেহরানের জন্য।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ইরান বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও, তার প্রশাসন থেকে বারবার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবিচ্ছেদ্য জাতীয় স্বার্থ’-এর অংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ‘কৌশলগত নীরবতা’ আসলে একটি গণমাধ্যম-চালিত মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির অংশ, যাতে ইরান আগেভাগেই কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ না নেয়, এবং সম্ভাব্য হামলার সময়-পরিসীমা অস্পষ্ট থাকে।

তেহরানও বসে নেই। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) গত কয়েক দিনে কয়েক দফা সরাসরি হুমকি দিয়েছে যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা তার কোনো মিত্র রাষ্ট্র আক্রমণে অংশ নেয়, তবে তারা “প্রতিশোধ নিতে এক মুহূর্ত দেরি করবে না”।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, “যেকোনো বিদেশি আগ্রাসন আমাদের ভূখণ্ডের দিকে অগ্রসর হলে, আমরা তা মুহূর্তেই ধ্বংস করে দেব।”

যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ইরানকে টার্গেট করে হামলা চালানো মানে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক মঞ্চেই একটি নতুন উত্তেজনার অধ্যায়ের সূচনা।

চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের একতরফা পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক এক্স-বার্তায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে লিখেছেন:“বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এগিয়ে যেতে পারে। ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয়।”

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

একদিকে ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, নির্বাচনী বছরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে, অন্যদিকে তারা চায় ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের বার্তা পাঠাতে। কিন্তু এ ধরনের একতরফা সামরিক পদক্ষেপ আঞ্চলিক মিত্রদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী বলেও মনে করছে অনেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী সামরিক প্রস্তুতির খবর এখন আর শুধু অনুমান নয়, বরং একরকম বাস্তবতা। হোয়াইট হাউসের নীরবতা, ফেডারেল সংস্থার প্রস্তুতি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াগুলো মিলিয়ে স্পষ্ট যে, বিশ্ব একটি ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের সীমানায় এসে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত