প্রোটিন থেকে ত্বক উজ্জ্বলতা: এক মুঠো ছোলার আশ্চর্য গুণাগুণ

আমাদের অনেকেরই সকালে কিংবা সন্ধ্যায় ছোলা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য উপাদান। বিশেষ করে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া ছোলা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে বহুগুণ বেশি উপকারী। এতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ নানাবিধ পুষ্টিগুণ যা শরীর ও মনের জন্য দারুণ কার্যকর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো ছোলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে দেহে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি একাধিক রোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। তবে পরিমিত মাত্রায় খাওয়াটাই স্বাস্থ্যকর।

নিচে ভেজানো ছোলার বিস্তারিত উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:

কীভাবে খাবেন ভেজানো ছোলা?রাতে ছোলা পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ছোলাগুলো একটু নরম হয়ে এলে খালি পেটে খান। চাইলে সঙ্গে মধু, গোলমরিচ বা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, অতিরিক্ত ছোলা খেলে হজমে সমস্যা বা ডায়রিয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

১. প্রোটিন ও আয়রনের প্রাকৃতিক ভাণ্ডারছোলা হলো নিরামিষ প্রোটিনের এক দারুণ উৎস। যারা নিয়মিত জিম করেন বা উচ্চ প্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করছেন, তাদের জন্য ছোলা একটি নিরাপদ পছন্দ। একই সঙ্গে এটি আয়রনে সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) দূর করতেও কার্যকর। শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে এটি দারুণভাবে সহায়তা করে।

২. হজমের উন্নতি ও পরিপাকতন্ত্রের পরিচর্যাভেজানো ছোলায় রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, যা পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি অন্ত্র থেকে টক্সিন অপসারণে সাহায্য করে, ফলে হজমজনিত সমস্যার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।

৩. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করেভেজানো ছোলার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসমূহ হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এগুলো রক্তনালীগুলোকে সুস্থ রাখে এবং রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমায়। এতে হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়কছোলার ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অপ্রয়োজনীয় খাওয়া হ্রাস পায়। এটি হজম ধীর করে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং মেটাবলিজমকে উদ্দীপ্ত করে, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৫. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখেছোলার দ্রবণীয় ফাইবার লিভারে উৎপন্ন পিত্তরসকে আবদ্ধ করে এবং শরীর থেকে তা বের করে দেয়। ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

৬. চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়ছোলায় রয়েছে ভিটামিন বি, দস্তা, ম্যাগনেশিয়াম ও প্রোটিন, যা চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া কমায়। এছাড়া ছোলা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও ব্রণ, র‍্যাশের মতো সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।

৭. সারা দিন শক্তিতে ভরপুরছোলায় উপস্থিত জটিল কার্বোহাইড্রেট ধীরে হজম হয়, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে শক্তির জোগান দেয়। যারা সকালের নাস্তা হালকাভাবে সারতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাদ্য উপাদান।

৮. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেজটিল কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারের উপস্থিতির কারণে ভেজানো ছোলা রক্তে চিনির শোষণ ধীর করে, ফলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এটি কার্যকর প্রাকৃতিক পন্থা।

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেছোলার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করতে পারে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

১০. গর্ভবতী ও সদ্য মা হওয়া নারীদের জন্য উপকারীগর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পর নারীদের শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের প্রয়োজন হয়। ছোলা সেই ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এতে উপস্থিত ফোলেট শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সতর্কতা:ছোলা যতই উপকারী হোক, অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন বা গ্যাসের সমস্যা আছে, তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ছোলা গ্রহণ করবেন না।