ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ

ট্রাম্প বললেন, ‘চুক্তি দরকার’, ইসরায়েল হামলা চালাল—কূটনীতি নাকি সংঘর্ষ?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ২০:০১:০৭
ট্রাম্প বললেন, ‘চুক্তি দরকার’, ইসরায়েল হামলা চালাল—কূটনীতি নাকি সংঘর্ষ?

মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে কূটনৈতিক সমাধানের অঙ্গীকার, অন্যদিকে যুদ্ধাবস্থার ইঙ্গিত—এই দ্বৈত বার্তায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি।

কয়েকদিন আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমরা একটি কূটনৈতিক সমাধানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।” কিন্তু তার এই বার্তার মাত্র ১৪ ঘণ্টা পরেই ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে মোড় নেয়। পরে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানকে তিনি ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে, যা ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে।

রোববার ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়া উচিত এবং তাঁর সহায়তায় এটি সম্ভব। কিন্তু সোমবার জি–৭ সম্মেলন থেকে আগেভাগেই ওয়াশিংটনে ফেরার প্রস্তুতির সময় ট্রাম্প এক পোস্টে বলেন, “ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না এবং তেহরান থেকে সবাইকে অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া উচিত।”

তিনি আরও যোগ করেন, তিনি ইসরায়েল–ইরান বিরোধে কোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য ফিরছেন না, বরং “এর চেয়েও বড় কিছু” চান। এই ‘বড় কিছু’ আসলে কী, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ও ট্রাম্পের অস্বীকাররোববার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “আজ রাতে ইরানে যে হামলা হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।” যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলায় জড়িত নয় বলেই দাবি করছেন ট্রাম্প, কিন্তু ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক সরব উপস্থিতি ভিন্ন বার্তা দেয়।

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে এবং ভূগর্ভস্থ অংশও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র—ফোরদো—পাহাড়ের নিচে প্রায় ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। এখানে ইসরায়েলের হামলা সফল হয়নি বলেই মনে করছে IAEA।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এই হামলা কি সম্ভব?যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক কেলসি ডেভেনপোর্ট বলেন, “ইসরায়েল যদি ফোরদোর মতো ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করতে চায়, তাহলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য লাগবেই।” কারণ, এসব গভীরতর স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম বোমা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই বোমা ইসরায়েলকে সরবরাহ করেনি বলে জানান ডেভেনপোর্ট। একই মত প্রকাশ করেছেন স্টিমসন সেন্টারের বিশিষ্ট ফেলো বারবারা স্লেভিন। তিনি বলেন, “ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চায়, তাহলে তাদের মার্কিন সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।”

সামরিক প্রস্তুতি ও যুদ্ধের ছায়াসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বড়সংখ্যক বিমান মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করেছে, যেগুলো আকাশেই যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানে জ্বালানি দিতে পারে। একই সময়ে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ইউএসএস নিমিটজ নামের বিমানবাহী রণতরি মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা হয়েছে। মঙ্গলবারও যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এ বিষয়ে স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানিয়ান ইতিহাসের অধ্যাপক আলী আনসারি বলেন, “ইসরায়েলের আক্রমণের প্রাথমিক সাফল্যে ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ীর পাশে দেখতে পাচ্ছেন, তাই হয়তো তিনি এই সংঘাতে প্রত্যক্ষভাবে জড়ানোর ব্যাপারে প্রলুব্ধ হচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি ফোরদোয় হামলা চালায়, সেটাই ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু ছাড় পেলে ইরান তা সম্মানের সঙ্গেই গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু ইসরায়েলের কাছে তারা কখনোই সেটা করতে পারবে না—যদিও শেষ পর্যন্ত বিকল্প পথ না–ও থাকতে পারে।”

যুদ্ধ না কূটনীতি—বিশ্ব অপেক্ষায়বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের মুখে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা এবং ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ মিলিয়ে পরিস্থিতি একটি বিস্ফোরণজনক দ্বন্দ্বে রূপ নিতে পারে—যা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বকেই নাড়া দিতে পারে।

—আশিক নিউজ ডেস্ক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত