শেয়ারবাজার

নতুন কোম্পানির আগমন নেই: ১০ মাসে পুঁজিবাজারে তীব্র শূন্যতা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৭ ১১:৩২:২৯
নতুন কোম্পানির আগমন নেই: ১০ মাসে পুঁজিবাজারে তীব্র শূন্যতা

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে এক ধরনের অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। টানা ১০ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো নতুন কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। অর্থাৎ, এই দীর্ঘ সময়জুড়ে কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (IPO) আসেনি। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যানগত তথ্য নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ, বিনিয়োগ পরিবেশ ও বাজারের সামগ্রিক গতিশীলতার ওপর এক নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

IPO কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

IPO বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব হলো একটি কোম্পানির প্রথমবারের মতো শেয়ারবাজারে আসা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করার প্রক্রিয়া। নতুন কোম্পানি বাজারে এলে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়, বাজারে তারল্য বাড়ে এবং সামগ্রিক বাজারটি আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বাংলাদেশে IPO নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবসময়ই বেশি থাকে, কারণ তুলনামূলক কম দামে শেয়ার কিনে ভবিষ্যতে ভালো মুনাফার সম্ভাবনা থাকে।

কিন্তু টানা ১০ মাস ধরে IPO না আসায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে এবং বাজারে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

১০ মাস ধরে IPO বন্ধ থাকার কারণ কী?

বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণে নতুন কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। নিচে কিছু প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:

১. অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট

বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে, ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এই ধরনের অর্থনৈতিক অস্থিরতা অনেক কোম্পানিকে আইপিও থেকে বিরত রাখছে, কারণ তারা মনে করছে এখন বাজারে আসার উপযুক্ত সময় নয়।

২. বাজারের নিম্নমুখী ধারা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা

বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের পরিমাণ অনেক কমে গেছে, সূচক পড়ে যাচ্ছে, এবং বাজারে এক ধরনের আস্থার সংকট বিরাজ করছে। নতুন কোম্পানিগুলো চাইছে বাজার স্থিতিশীল হলে তবেই তারা আসুক।

৩. নিয়ন্ত্রক সংস্থার (BSEC) কড়াকড়ি

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) গত কয়েক বছরে কিছু দুর্বল কোম্পানির আইপিও ঘিরে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার কারণে এখন কোম্পানির হিসাব-নিকাশ ও গুণগত মান যাচাইয়ে কঠোর হয়েছে। ফলে, যেসব কোম্পানি আগে সহজেই আইপিও অনুমোদন পেত, তারা এখন বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না।

বিনিয়োগকারীদের হতাশা ও বাজারে প্রভাব

বিনিয়োগকারীরা বারবার বলছেন, নতুন কোম্পানি না আসলে বাজারে গতি তৈরি হয় না। তারা কম ঝুঁকিতে লাভজনক বিনিয়োগের জন্য সাধারণত IPO-র দিকেই তাকিয়ে থাকেন। এখন সেই সুযোগ না থাকায়:

বাজারে তারল্য কমে গেছে,

লেনদেন সীমিত হয়ে পড়েছে,

পুরোনো কোম্পানিগুলোর শেয়ারে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়ে দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে,

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

এক বিনিয়োগকারী বলেন,

“বছরের পর বছর IPO না এলে নতুন কেউ বাজারে আসবে না, তরুণ বিনিয়োগকারীদেরও উৎসাহ কমে যাবে। শুধু বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজার চালু থাকলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাবে।”

আশার আলো কোথায়?

BSEC সূত্রে জানা গেছে, কিছু সম্ভাবনাময় কোম্পানি বর্তমানে IPO-র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং কয়েকটি আবেদনও জমা পড়েছে। তবে কমিশন বর্তমানে কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য, ব্যবসায়িক মডেল, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ইত্যাদি আরও ভালোভাবে যাচাই করে তবেই অনুমোদন দিতে চাচ্ছে।

কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান,

“আমরা চাচ্ছি বাজারে শুধু ভালো মানের কোম্পানিই আসুক। বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও আস্থা রক্ষা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

-আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত