ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় ঝুঁকিতে আদানির বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ

ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রভাবে তার ব্যবসায়িক বিনিয়োগগুলো নতুন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ এবং দেশটির প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে তার বৃহৎ অংশীদারিত্ব সরাসরি ঝুঁকিতে রয়েছে।
২০২৩ সালে আদানি পোর্টস ইসরায়েলের গ্যাদত গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে ১.২০ বিলিয়ন ডলারে হাইফা বন্দরের ৭০ শতাংশ মালিকানা অধিগ্রহণ করে। এই বন্দরটি আদানি পোর্টসের বার্ষিক কার্গোর প্রায় ৩ শতাংশ পরিবহন করে এবং ইসরায়েলের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে হাইফা বন্দরের কার্যক্রম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনার ফলে ভূমধ্যসাগরের বাণিজ্যিক শিপিং রুটে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। এর ফলে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব ঘটতে পারে এবং শিপিং রুট পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায়িক জটিলতা সৃষ্টি হবে।
আদানি এন্টারপ্রাইজ ২০১৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের সঙ্গে যৌথভাবে ভারতের হায়দরাবাদে একটি ড্রোন কারখানা স্থাপন করে, যেখানে হার্মিস ৯০০ ড্রোন নির্মিত হয়। এই ড্রোন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটি দেশের বাইরে নির্মিত একমাত্র হার্মিস ৯০০ ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র।
যুদ্ধবর্ধনের প্রেক্ষাপটে ড্রোনের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে, কিন্তু একই সঙ্গে আদানি গ্রুপকে রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, কারণ তাদের তৈরি অস্ত্র বর্তমানে সক্রিয় সংঘাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কোম্পানির জন্য সংবেদনশীলতা এবং সমালোচনার কারণ হতে পারে।
আদানি গ্রুপ ইসরায়েলের টাওয়ার সেমিকন্ডাক্টরের সঙ্গে যৌথভাবে ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তবে চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজারের অনিশ্চয়তার কারণে এই প্রকল্প আপাতত স্থগিত রয়েছে।
হাইফা বন্দর আদানি পোর্টসের একক বৃহত্তম রাজস্ব উৎস না হলেও এর কৌশলগত গুরুত্ব বিশাল। চলমান সংঘাতের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই ভারতীয় শেয়ারের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে; আদানি পোর্টসের শেয়ারের দাম প্রায় ৩.২০ শতাংশ এবং আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার প্রায় ২.৮০ শতাংশ কমে গেছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যদিয়ে গৌতম আদানির আর্থিক সাম্রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব হলে এই বিনিয়োগগুলোতে বড় ধরনের আর্থিক চাপ ও রাজনৈতিক ও নৈতিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। আদানি গ্রুপের জন্য এটি নতুন এক চ্যালেঞ্জ, যা সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- দ্বিতীয় দিনেও চলছে কোরবানি, কসাই না পাওয়ায় আজ জবাই অনেকের
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- তারেক-ইউনূস বৈঠক: উত্তপ্ত রাজনীতিতে সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট?
- উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষোভ কি ভারতের কেন্দ্রীয় কূটনীতি পাল্টাবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- সাক্ষাৎ চাইলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি, মুখ ফিরিয়ে নিলেন ড. ইউনূস