একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার: আইএমএফ বৈঠকে বাংলাদেশের বড় প্রত্যাশা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৫ ১০:১১:৫১
একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার: আইএমএফ বৈঠকে বাংলাদেশের বড় প্রত্যাশা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের আসন্ন ২৩ জুনের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে অনুমোদনের প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। আইএমএফ শুক্রবার (১৪ জুন) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বৈঠকের কার্যসূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নিশ্চিত করেছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে বাংলাদেশ একযোগে প্রায় ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে, যার মেয়াদ সাড়ে তিন বছর। এই ঋণের উদ্দেশ্য ছিল দেশের অর্থনীতিকে বৈশ্বিক মন্দা, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করা। কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ মোট তিনটি কিস্তিতে ইতোমধ্যেই ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তি আসে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে (৪৭.৬৩ কোটি ডলার), দ্বিতীয় কিস্তি ডিসেম্বর ২০২৩-এ (৬৮.১০ কোটি ডলার), এবং তৃতীয় কিস্তি আসে ২০২৪ সালের জুনে (১১৫ কোটি ডলার)। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে এখনও প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে।

মূলত চতুর্থ কিস্তির অর্থ ডিসেম্বর ২০২৩-এ পাওয়ার কথা ছিল, তবে আইএমএফের নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, বিশেষ করে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না হওয়ায় তা আটকে যায়। এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত হয়, যথাযথ সংস্কার নিশ্চিত হলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড় দেওয়া হবে। এরপর আইএমএফ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকায় সফর করে আইএমএফের প্রতিনিধি দল এবং মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেয়। অবশেষে ১২ মে দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়।

সমঝোতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বাজারচালিত বিনিময় হার চালু করে, যা ছিল আইএমএফের অন্যতম প্রধান শর্ত। ১৪ মে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে এবং ২৩ জুনের বৈঠকে যদি অনুমোদন দেওয়া হয়, তাহলে ঋণের অর্থ জুন মাসেই ছাড় করা হবে। একই বিবৃতিতে আইএমএফ আরও জানায়, বাংলাদেশ অতিরিক্ত ৭৬ কোটি ডলারের একটি বাড়তি ঋণের আবেদন করেছে। এটি অনুমোদিত হলে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার।

এই ঋণ কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর দুটি অংশ—৩৩০ কোটি ডলার দেওয়া হচ্ছে Extended Credit Facility (ECF) ও Extended Fund Facility (EFF) থেকে, এবং ১৪০ কোটি ডলার দেওয়া হচ্ছে Resilience and Sustainability Facility (RSF) থেকে। বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে RSF থেকে ঋণ পাচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন কাঠামো গঠনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হিসেবে বিবেচিত।

আইএমএফ কর্তৃপক্ষ তাদের বিবৃতিতে রাজস্ব আদায় বাড়ানো, ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা এবং বিনিময় হারে স্বচ্ছতা আনার ওপর জোর দিয়েছে। এসব কাঠামোগত সংস্কার শুধু ঋণ ছাড়ের শর্তই নয়, বরং এগুলো বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অর্জনের পথ তৈরি করবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএমএফের এই ঋণ শুধুমাত্র বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উপায় নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও নীতিগত সক্ষমতার প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আস্থার বার্তাও বহন করে। অতীতে বারবার আলোচিত হলেও বাস্তবায়নে অনীহা থাকা নীতিগত সংস্কারগুলো এবার বাস্তবায়িত হওয়ায় সরকারকেও কৃতিত্ব দিচ্ছেন অনেকে।

তবে ঋণের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইএমএফের তদারকি ও সংস্কার চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ঘাটতি ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো যেন এই ঋণচুক্তির ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত না করে, সেদিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

সবমিলিয়ে, ২৩ জুন আইএমএফের এই বৈঠক বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। যদি দুই কিস্তির অর্থ ছাড় হয় এবং বাড়তি ঋণ অনুমোদন পায়, তাহলে এটি বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা, আমদানি ব্যয়, মূল্যস্ফীতির চাপ ও বাজেট সহায়তায় বড় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত