ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ঠেকাতে পুতিনের ফোন!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৪ ১৪:৩২:২৯
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ঠেকাতে পুতিনের ফোন!

বিপজ্জনক সামরিক সংঘাতের দিকে ধাবিত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার (১৩ জুন) তিনি টেলিফোনে পৃথকভাবে কথা বলেন ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। ক্রেমলিনের প্রকাশিত বিবৃতি অনুযায়ী, এই আলাপচারিতার মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রতিহত করে একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমাধানের পথ উন্মুক্ত করা।

শুক্রবার ভোরে ইসরাইল এক আকস্মিক আকাশ হামলায় ইরানের বিভিন্ন পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায়। এই হামলায় প্রাণ হারান ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি, ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, এবং কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানী।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হামলাটি মূলত ইরানের কাশান, নাতাঞ্জ ও ফোর্ডোর উচ্চ-নিরাপত্তা পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো হয়। এতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক সূত্র।

ইসরাইলি হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তেহরান পাল্টা জবাব দেয়। তেহরানের সামরিক বাহিনী তেল আবিবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের আয়রন ডোম ডিফেন্স সিস্টেম বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।এই পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ ৮-৯ শতাংশ বেড়ে যায়।

পুতিনের মধ্যস্থতা প্রস্তাব: রাশিয়া কি শান্তির রূপরেখা দিতে পারবে?

ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে পৃথকভাবে টেলিফোনে আলাপ করেছেন। উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানান তিনি এবং রাশিয়াকে একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব দেন।"

পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্টকে ফোনে জানান, ইসরাইলের এই হামলা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইসঙ্গে নেতানিয়াহুকে সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানান, যাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ না নেয়।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, ‘‘মস্কো মনে করছে, এই মুহূর্তে ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এক বৃহৎ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত কূটনৈতিক রূপরেখা তৈরি করা, যেখানে রাশিয়া একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।’’

আন্তর্জাতিক কূটনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই উদ্যোগ একদিকে পুতিনের মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের কৌশলের অংশ, অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও নিজেকে একজন 'গ্লোবাল ব্রোকার' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা।তবে প্রশ্ন রয়ে যায় ইরান ও ইসরায়েল উভয়ই কি রাশিয়াকে সত্যিকারের নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মেনে নেবে?

তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়েদ বোরোজেহ বলেন, "ইরান হয়তো রাশিয়ার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিতে পারে, কারণ দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। তবে ইসরায়েল রাশিয়ার প্রতি সন্দিহান থাকতে পারে, বিশেষ করে সিরিয়ায় রাশিয়া-ইরান সহযোগিতার প্রেক্ষিতে।"

বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন দুই নেতার পরবর্তী পদক্ষেপ এবং রাশিয়ার প্রস্তাবকে তারা কীভাবে গ্রহণ করে তার দিকেই।জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই উত্তেজনা নিরসনে সক্রিয়ভাবে বিবৃতি দিচ্ছে, তবে এখনো কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি।

বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বৃদ্ধি, নিরাপত্তাহীনতা ও আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা এখন সময়ের দাবি।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত