রিয়াজুল জান্নাত: জান্নাতের বাগানে নামাজ পড়ার মহা ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৪ ১১:৪৪:১১
রিয়াজুল জান্নাত: জান্নাতের বাগানে নামাজ পড়ার মহা ফজিলত

ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর মধ্যে মসজিদে নববি অন্যতম শ্রেষ্ঠতম ও ফজিলতপূর্ণ স্থান। এই মসজিদে নামাজ আদায় করার সওয়াব অন্যান্য মসজিদে নামাজের তুলনায় গুণগতভাবে অনেক বেশি। হাদিসে বর্ণিত, মসজিদে নববিতে এক নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৪০৬, মুসনাদে আহমাদ: ১৪৬৯৪) এই মহান স্থানটি নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে বিশেষ করে পছন্দ করতেন ও অনুসারীদেরও এখানে নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করেছিলেন।

মসজিদে নববির কেন্দ্রীয় অংশ ‘রিয়াজুল জান্নাত’ বা ‘জান্নাতের বাগান’ হিসেবে পরিচিত। এটি মসজিদের মধ্যে এমন একটি অংশ যেখানে নামাজ আদায় করলে অতুলনীয় সওয়াব পাওয়া যায়। নবী (সা.) বলেছেন, তাঁর ঘর এবং মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানটি জান্নাতের বাগানগুলোর একটি এবং তাঁর মিম্বর তাঁর ঘরের উপর অবস্থিত। (সহিহ বুখারি: ১১৯৬, সহিহ মুসলিম: ২৪৬৩) নবী (সা.) এ অংশে নামাজ পড়তে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন এবং তাঁর সাহাবাগণও এ স্থানটি খুব পছন্দ করতেন। ইয়াজিদ ইবনে আবু উবাইদ বর্ণনা করেছেন, তিনি সালামা ইবনে আকওয়ারকে দেখেছিলেন মসজিদে নববির মুসহাফের নিকটবর্তী পিলারের কাছে নামাজ পড়তে, কারণ নবী (সা.) নিজেও সেখানে নামাজ পড়তে আগ্রহী ছিলেন। (সহিহ বুখারি: ৫০২; সহিহ মুসলিম: ৫০৯)

রিয়াজুল জান্নাতের আয়তন প্রায় ২২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৫ মিটার প্রস্থ, যা সবুজ ও সাদা রঙের কার্পেট দিয়ে আলাদা করা থাকে। মসজিদের অন্যান্য অংশ লাল রঙের কার্পেট দ্বারা আবৃত হওয়ায় এই অংশটি খুব সহজেই শনাক্তযোগ্য। এর মধ্যে কয়েকটি স্তম্ভ বা খুঁটি রয়েছে, যেগুলোকে ‘রহমতের স্তম্ভ’ বলা হয়। নবী (সা.)-এর যুগে এসব খুঁটি খেজুর গাছের তৈরি ছিল, যা বর্তমানে মূল্যবান পাথর দিয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি খুঁটির নিজস্ব নাম ও তাৎপর্য রয়েছে, যা নবী (সা.)-এর বিভিন্ন ঘটনা ও শিক্ষা প্রতিফলিত করে। উল্লেখযোগ্য খুঁটিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

উসতুওয়ানা আয়েশা (আয়েশা রা.-এর খুঁটি)

উসতুওয়ানাতুল উফুদ (প্রতিনিধি দলের খুঁটি)

উসতুওয়ানাতুত তাওবা (তওবার খুঁটি)

উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ (সুগন্ধি-ধূপ জ্বালানোর খুঁটি)

উসতুওয়ানাতুস সারির (খাটের পাশে খুঁটি)

উসতুওয়ানাতুল হারছ (পাহাদারদের খুঁটি)

উসতুওয়ানা জিবরিল (জিবরাইলের খুঁটি)

উসতুওয়ানাতুত তাহাজ্জুদ (তাহাজ্জুদের খুঁটি)

হজ বা ওমরাহর যাত্রীদের জন্য মদিনায় মসজিদে নববিতে যাওয়া ও নবী (সা.)-এর কবর জিয়ারত করা এক মহান সুন্নত ও বিশেষ আমল। নবী (সা.) নিজে বলেছিলেন, যারা তাঁর মৃত্যুর পর হজ করেন এবং পরে তাঁর কবর জিয়ারত করেন, তাদের জন্য এটা যেন তাঁর জীবিত অবস্থায় সাক্ষাৎ করার সমতুল্য। (সুনানে বায়হাকি: ৩৮৫৫) এছাড়া, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কবর জিয়ারত করে, তাঁর জন্য নবী (সা.)-এর সুপারিশ নিশ্চিত হয়ে যায়। (সুনানে দারাকুতনি: ১৯৪)

এ কারণে, যারা হজ বা ওমরাহ পালন করছেন, তাঁদের জন্য অত্যন্ত জরুরি যে তারা মদিনায় এসে নবী (সা.)-এর কবর জিয়ারত করবেন, সেখানে সালাত-সালাম নিবেদন করবেন এবং রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায় করার সুযোগ নেবেন। এই পবিত্র স্থান থেকে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করা এবং নবীজির (সা.) অনুসরণের মাধ্যমে জীবন গঠনের তাওফিক প্রার্থনা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য মহত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে নবীজির (সা.) প্রেম ও অনুসরণের মাধ্যমে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন এবং জান্নাতের বাগানে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করেন। আমীন।


০৩ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ২১:৪৭:১১
০৩ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
Qolsharif Mosque, Kazan (Russia)/ছবিঃ সংগৃহীত

সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি তারিখের জন্য ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান বিভাগের দৈনিক নামাজের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো। (এই সময়সূচি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ক্যালেন্ডার থেকে সংগৃহীত। স্থানীয় তারতম্যের জন্য ২/১ মিনিট ভিন্ন হতে পারে)।

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সময়সূচি

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে (ভোর), সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে (AM) (আনুমানিক), জোহর ১১টা ৪৫ মিনিটে (দুপুর), আছর ০৩টা ৪৩ মিনিটে (বিকেল), মাগরিব ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা), এবং ইশা ০৬টা ৩৮ মিনিটে (রাত)।

নফল রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাহরির শেষ সময় থাকবে ০৪টা ৪৩ মিনিটে (ভোর)।

এবং ইফতারের সময় হবে ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা)।

অন্যান্য প্রধান বিভাগীয় শহরের আনুমানিক সময়সূচি

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোর সময়সূচিতে সামান্য পার্থক্য আসে। ০৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের জন্য প্রধান বিভাগগুলোর নামাজের আনুমানিক সময়সূচি নিম্নরূপ:

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৩টা ৫৯ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৯ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৪ মিনিটে।

খুলনা: খুলনায় ফজর ০৪টা ৫১ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৪ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫২ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৫ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৬ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০০ মিনিটে।

রাজশাহী: রাজশাহীতে ফজর ০৪টা ৫০ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫৩ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৬ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৭ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০২ মিনিটে।

সিলেট: সিলেটে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৭ মিনিটে, আসর ০৪টা ০২ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৪ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫০ মিনিটে।

রংপুর: রংপুরে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০২ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫১ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪২ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৯ মিনিটে।

বরিশাল: বরিশালে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪০ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৬ মিনিটে।


জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ধৈর্য নবীজি (সাঃ) এর হাদিস ও কোরআনের আলোকে গুরুত্ব

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৯:২৭:২৬
জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ধৈর্য নবীজি (সাঃ) এর হাদিস ও কোরআনের আলোকে গুরুত্ব
সবর শব্দের অর্থ ধৈর্য ছবি: জাগো নিউজ

আমাদের দৈনন্দিন পথচলায় যেসব গুণ ও সামর্থ্য একান্ত প্রয়োজন, ধৈর্য বা সবর সেগুলোর অন্যতম। ইসলামে ধৈর্যকে জীবনের একটি বড় সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে; নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত চমৎকারভাবে বলে গিয়েছেন, "ধৈর্য্যের চেয়ে উত্তম ও বড় কোনো সম্পদ কাউকে দেওয়া হয়নি।" (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম) অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ধৈর্যের গুণ অর্জন করে ফেলে, সে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অর্জন করে।

জীবনের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি মুহূর্তে এই সম্পদের প্রয়োজন হয়; জীবনের পরতে পরতে ঘটে যাওয়া উত্থান-পতন, পরীক্ষা, দুশ্চিন্তা মোকাবেলা করা, পারিবারিক জীবনে মতপার্থক্য, অসংখ্য আবদার রক্ষা করা এবং মা-বাবা ও শ্বশুর-শাশুড়িকে মানিয়ে চলার মতো সব ক্ষেত্রেই ধৈর্য অমূল্য সম্পদ।

ধৈর্য জীবনের আলো ও আল্লাহর ভালোবাসা

ধৈর্য এমন একটি বিনিয়োগ, যার ফলাফল সবসময় লাভজনক হয় এবং জীবনকে আলোকিত করে। নবীজি(সাঃ) বলেন, "ধৈর্য হলো আলো।" (সহিহ মুসলিম) আলো যেমন চারপাশের অন্ধকার দূর করে সঠিক পথের দিশা দেয়; তেমনি জীবনে যে যত বেশি ধৈর্যের সম্পদ বিনিয়োগ করবে, সে তত বেশি সফল ও আলোকিত হবে।

ইসলামে ধৈর্যের অতুলনীয় মূল্যায়ন করা হয়েছে; স্বয়ং আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে ধৈর্যশীলদের জন্য তাঁর ভালোবাসা ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন" এবং "আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের ভালোবাসেন"; এছাড়াও তিনি "ধৈর্যশীলদের জান্নাতের সুসংবাদ দাও" বলে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রকৃত বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী কে

আমাদের সমাজে যারা ধৈর্য ধরে, নীরবে সহ্য করে নেয়, অন্যের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ছাড় দেয়; আমরা তাদের বোকা বা দুর্বল ভাবি। অথচ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তারাই প্রকৃত বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী। নবীজি(সাঃ) বলেন, "সে শক্তিশালী নয় যে রাগের মাথায় হুট করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে; বরং প্রকৃত শক্তিশালী ওই ব্যক্তি যে রাগের সময়ও ধৈর্য্য ধরতে পারে।" (সহিহ বুখারি: ৬১১৪) এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, পেশিশক্তি আসল শক্তি নয়; বরং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিই হলো আসল শক্তি।

ধৈর্য কীভাবে নিরাপত্তা দেয়

মানুষ যত বেশি ধৈর্যশীল হবে, সমাজ তত বেশি নিরাপদ হবে এবং ক্ষতি থেকে বাঁচবে। কোরআনের সুরা আসরে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, "মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে পরস্পরকে উদ্বুদ্ধ করে।" (সুরা আসর: ১-৩)

যেহেতু আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন; তাই চলা, ফেরা, ওঠা, বসা—সর্বক্ষেত্রে তারা আল্লাহর সাহায্য পায় এবং সব ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়, নিরাপদ থাকে।

লেখক: খতিব, মকিম বাজার জামে মসজিদ, বংশাল, ঢাকা


‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে রেখেছি’: আশারাতুল মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত প্রথম খলিফার গল্প 

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৮:৪২:০৫
‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে রেখেছি’: আশারাতুল মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত প্রথম খলিফার গল্প 
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ও সম্মানিত নাম। তিনি কেবল ইসলামের প্রথম খলিফাই নন; জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত 'আশারাতুল মুবাশশারা'-এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্বশুর এবং তাঁর একজন একনিষ্ঠ সহচর।

জন্ম ও পরিচয়

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের তায়িম গোত্রে ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্যনাম ছিল আবদুল্লাহ; তবে তিনি আবু বকর ডাকনামেই পরিচিত। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সিদ্দিক বা 'সত্যবাদী' এবং আতিক বা 'দানশীল' খেতাব লাভ করেন। তাঁর বাবার নাম ওসমান; যিনি ইতিহাসে আবু কুহাফা নামে সুপরিচিত; এবং মায়ের নাম উম্মুল খায়ের সালমা।

ইয়েমেন থেকে বাণিজ্য শেষে ফেরার পর তিনি মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের সংবাদ পান এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ প্রথমে বাবা, স্ত্রী এমনকি ছেলের বিরোধিতার মুখে পড়েছিল; তবে তাঁর মা প্রথম দিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বাবা হিজরির অষ্টম বছরে ইসলামে দীক্ষিত হন। আবু বকরের স্ত্রী কুতাইলা বিনতে আবদুল উজ্জা ইসলাম গ্রহণ না করায় তিনি তাকে তালাক দেন।

বাণিজ্য ও ইসলামের সেবা

তরুণ বয়সে আবু বকর (রা.) একজন বণিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন; তিনি প্রতিবেশী সিরিয়া, ইয়েমেন ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যবসার সুবাদে ভ্রমণ করে সম্পদশালী ও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন তাঁর গোত্রের একজন শীর্ষ নেতা।

ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ইসলাম গ্রহণে উৎসাহ জোগান। হজরত আবু বকর (রা.) ইসলামের সেবায় তাঁর অর্জিত অর্থ অকাতরে ব্যয় করেন। মহানবী (সা.) একবার তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, "তুমি তোমার পরিবারবর্গের ভরণপোষণের জন্য কী রেখেছ?" তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, "আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে।" মদিনার মসজিদ নির্মাণ, মহানবীর বাসগৃহ নির্মাণ, তাবুক অভিযানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি একাই ব্যয়ের বৃহত্তর অংশ বহন করেন।

মহানবী (সা.) নিজেই তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, "আবু বকরের ধনসম্পদ ছাড়া অন্য কারও সম্পদ আমার এত উপকারে আসেনি।" বিলালসহ যেসব গোলাম ইসলাম কবুল করে মনিবদের নির্যাতন ভোগ করছিলেন; আবু বকর (রা.) তাদের অনেককে খরিদ করে মুক্ত করেন।

খিলাফত লাভ ও মৃত্যু

রসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়; মুহাজির ও আনসাররা নিজেদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। আনসাররা সাকিফা নামক স্থানে একত্রিত হয়ে আলোচনা শুরু করলে; আবু বকর, ওমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ সেখানে যান। সভার আলোচনায় একপর্যায়ে হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন; এরপর বাকিরাও আবু বকরকে (রা.) নেতা হিসেবে মেনে নেন।

হজরত আবু বকর (রা.) মাত্র দুই বছরের কিছু বেশি সময় খলিফা থাকাকালে একাধিক ভণ্ড নবীর সমর্থকদের সফলভাবে দমন করেন এবং ইসলামি খেলাফতকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেন। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে নিয়োগ দেন। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন এবং তাঁকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পাশে দাফন করা হয়।


হাশরের ময়দান: যে অপরাধের জন্য পশু-পাখিরও বিচার হবে

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০১ ২১:৪৫:২৩
হাশরের ময়দান: যে অপরাধের জন্য পশু-পাখিরও বিচার হবে
ছবিঃ সংগৃহীত

পৃথিবী মানবজাতির ‘পরীক্ষার হল’। এই পরীক্ষারও একটি ফলাফল থাকবে। দুনিয়াতে আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন করলে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত এবং না করলে শাস্তি হিসেবে জাহান্নাম দেবেন আল্লাহ। সেই পুরস্কার এবং শাস্তি নির্ধারণের জন্য একটি আদালত কায়েম করা হবে—যা ‘হাশরের ময়দান’ নামে পরিচিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আর আমি (আল্লাহ) জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।” (সুরা কাহফ : ৮)

এ প্রসঙ্গে অনেকে জানতে চান, “মানুষের মতো পশু-পাখিরও কি এই ময়দানে জমায়েত করা হবে? তাদেরও কি বিচার হবে?”

পশু-পাখির বিচার ও পরিণতি

সিলেটের চিকনাগুল (আজিজিয়া) মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা কয়েছ আহমদ গোয়াইনঘাটি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি জানান, মানুষের মতো পশু-পাখিদেরও কিয়ামতের দিন একত্রিত করা হবে এবং শেষ বিচারের পর তারা মাটিতে পরিণত হবে।

কেন বিচার? মাওলানা কয়েছ জানান, মানুষ যেমন চূড়ান্ত বিচারে পুরস্কার বা শাস্তি পাবে, তেমনি প্রাণীরাও তাদের হক পাবে। পশু-পাখিদের মধ্যে যারা একে অন্যের প্রতি জুলুম করেছে, তাদের বিচার করা হবে কঠিনভাবে। এই অপরাধ (জুলুম) করে থাকলে আল্লাহ কোনো প্রাণীকে ছাড় দেবেন না।

যেভাবে বিচার: হাদিসের বরাত দিয়ে মাওলানা কয়েছ বলেন, দুনিয়াতে যে মোরগ অন্য মোরগকে আঘাত করেছে, যে ছাগল অন্য ছাগলকে আহত করেছে, সহজ কথায় যেসব পশু অন্য পশুদের আঘাত করেছে, জুলুম করেছে, হাশরের ময়দানে আল্লাহ ওই মজলুম পশুকে শক্তি দিয়ে জুলুমকারী পশুর ওপর পাল্টা আঘাতের সুযোগ দেবেন।

চূড়ান্ত পরিণতি: এরকম সবার দেনা-পাওনা পরিশোধ করার পর আল্লাহ তাদের বলবেন, “তোমরা মাটি হয়ে যাও।” অতঃপর তারা মাটি হয়ে যাবে এবং তাদের কোনো জান্নাত-জাহান্নাম থাকবে না। (মুসলিম : ২৫৮২)


০২ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০১ ২১:৪০:১৬
০২ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
Hagia Sophia Grand Mosque/ছবিঃ সংগৃহীত

রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি তারিখের জন্য ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান বিভাগের দৈনিক নামাজের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো। (এই সময়সূচি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ক্যালেন্ডার থেকে সংগৃহীত। স্থানীয় তারতম্যের জন্য ২/১ মিনিট ভিন্ন হতে পারে)।

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সময়সূচি

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে (ভোর), সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে (AM) (আনুমানিক), জোহর ১১টা ৪৫ মিনিটে (দুপুর), আছর ০৩টা ৪৩ মিনিটে (বিকেল), মাগরিব ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা), এবং ইশা ০৬টা ৩৮ মিনিটে (রাত)।

নফল রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাহরির শেষ সময় থাকবে ০৪টা ৪৩ মিনিটে (ভোর)।

এবং ইফতারের সময় হবে ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা)।

অন্যান্য প্রধান বিভাগীয় শহরের আনুমানিক সময়সূচি

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোর সময়সূচিতে সামান্য পার্থক্য আসে। ০২ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের জন্য প্রধান বিভাগগুলোর নামাজের আনুমানিক সময়সূচি নিম্নরূপ:

চট্টগ্রাম: ফজর এবং সূর্যোদয় ঢাকার সময়ের চেয়ে প্রায় ৫-৭ মিনিট আগে হবে। মাগরিব ও ইশা হবে ঢাকার সময়ের প্রায় ২-৪ মিনিট পরে।

খুলনা ও রাজশাহী: এই অঞ্চলে মাগরিব ও ইশার সময় ঢাকার সময়ের চেয়ে প্রায় ১০-১২ মিনিট পরে শুরু হবে।

সিলেট: এই অঞ্চলে ফজর ও জোহর ঢাকার সময়ের চেয়ে প্রায় ২-৪ মিনিট আগে শুরু হবে।

রংপুর ও বরিশাল: এই অঞ্চলে নামাজের ওয়াক্তগুলোতে ঢাকার সময়ের সঙ্গে ২ থেকে ৫ মিনিটের সামান্য পার্থক্য থাকবে।


রক্তদান শুধু মানবসেবা নয়, এটি এক মহৎ ইবাদত

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩১ ১১:৩৭:৪৪
রক্তদান শুধু মানবসেবা নয়, এটি এক মহৎ ইবাদত
ছবি: সংগৃহীত

মানবদেহে লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু প্রায় ১২০ দিন। এ সময় শেষ হওয়া পুরোনো রক্তকণিকা ধীরে ধীরে নষ্ট হয় এবং অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কণিকা তৈরি হয়। প্রতিদিনই কোটি কোটি নতুন রক্তকণিকা জন্ম নেয়, ফলে পুরোনো কণিকা স্বাভাবিকভাবে প্রতিস্থাপিত হয়। এই প্রক্রিয়ার কারণে সুস্থ মানুষের জন্য রক্তদান সম্পূর্ণ নিরাপদ, কারণ শরীর খুব দ্রুত সেই ক্ষতিপূরণ করতে সক্ষম।

বর্তমান সমাজে শিক্ষিত তরুণসমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করছেন। তাদের এই উদ্যোগের ফলে অসংখ্য রোগী রক্তশূন্যতা ও অন্যান্য রক্তসংক্রান্ত সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। রক্তদানের মাধ্যমে তারা শুধু অন্যের জীবন বাঁচাচ্ছেন না, বরং সমাজে মানবতার বীজ বপন করছেন। স্বেচ্ছায় রক্তদান কেবল মানবসেবা নয়, এটি এক মহৎ ইবাদত। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রক্তদান করেন, তাদের রক্তদান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।

একসময় রোগীরা রক্তের অভাবে জীবন বাঁচাতে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে রক্ত কিনতেন। তবে আজ শিক্ষিত ও সচেতন মানুষরা স্বেচ্ছায়, বিনামূল্যে রক্ত দান করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এটি এক সময়োপযোগী উদাহরণ, যা অন্যের জীবন বাঁচায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে। দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার বা প্রসবজনিত জটিলতা দেখা দিলে রক্তের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হয়। তখন একজন রক্তদাতা হয়ে ওঠেন জীবনরক্ষাকারী। ইসলাম আমাদের শেখায়, অন্যের জীবন বাঁচানো আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় কাজ।

শরীরের দিক থেকেও রক্তদান উপকারি। নিয়মিত রক্তদানের ফলে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, এবং নতুন রক্তকণিকা উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ইসলামও আমাদের শরীরের যত্ন নিতে উৎসাহিত করে। সুতরাং রক্তদান মানবিক ও শারীরিক কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুসলমান অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।” (সূরা আল-মায়িদা: ৩২)

স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীদের দ্বারা রোগী বিনামূল্যে রক্ত পান, যা তাদের বিশাল উপকারে আসে। যারা রক্তদান করেন, তারা প্রকৃত অর্থেই উত্তম মানুষ এবং এই মহৎ কাজের বিনিময়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “যে নেক কাজ করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তার কাজের উত্তম প্রতিদান দেব।” (সূরা নাহাল: ৯৭)

ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের কষ্ট লাঘব করা যায়। দীর্ঘদিন রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীরা শারীরিক যন্ত্রণায় থাকে। রক্তদানের মাধ্যমে তাদের এই কষ্ট কমানো হয়, যা ইসলামে সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন।” (মুসলিম)

যেহেতু মানবদেহ আল্লাহর মালিকানাধীন, তাই শরীরের কোনো অঙ্গ বা অংশ বিক্রি করা জায়েজ নয়। অর্থের বিনিময়ে রক্ত বিক্রি বৈধ নয়। রক্তদান অবশ্যই মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যে এবং আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে করা উচিত। এইভাবে রক্তদান সমাজে দয়া, সহানুভূতি ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মানুষের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে মানুষকে উপকার করে।” (বুখারি)


জান্নাত-জাহান্নামের রহস্য উন্মোচন কুরআনের আলোকে

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩১ ১০:৩৪:২৪
জান্নাত-জাহান্নামের রহস্য উন্মোচন কুরআনের আলোকে
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের পরকালতত্ত্বে জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থান নিয়ে আলেমরা গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। কুরআনের আয়াত ও সহিহ তাফসীরের আলোকে জানা যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম বাস্তব অস্তিত্বসম্পন্ন স্থান, যেগুলো সৃষ্টির শুরুতেই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে এ দুটি স্থানের অবস্থান ও প্রকৃতি সম্পর্কে এমন সব ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যা মানুষের কল্পনার সীমার বাইরে।

আল্লাহ তাআলা সূরা আল-মুতাফফিফীন-এ বলেন, “কখনো নয়, নিশ্চয় নেককার লোকদের আমলনামা থাকবে ইল্লিয়্যীনে। আর তুমি কী জানবে, ‘ইল্লিয়্যীন’ কী?” (সূরা মুতাফফিফীন: ১৮–১৯)। এই আয়াতে জান্নাতের অবস্থান ও তার মহিমার দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। তাফসীরবিদ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “ইল্লিয়্যীন” অর্থ জান্নাত অথবা সপ্তম আকাশে আরশের নিচে অবস্থিত এক মহিমান্বিত স্থান। (তাফসীরে বাগভী, ৪/৪৬০; তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৪/৪৮৭)। ইমাম ইবন কাসীর (রহঃ) ব্যাখ্যা করেছেন, “ইল্লিয়্যীন” শব্দটি এসেছে ‘উলু’ ধাতু থেকে, যার অর্থ উচ্চতা বা মর্যাদা। তিনি বলেন, কোনো বস্তুর অবস্থান যত উপরে হয়, তার সম্মান তত বৃদ্ধি পায়, তাই আল্লাহ তাআলা জান্নাতের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে একে ইল্লিয়্যীন বলেছেন। এটি এমন এক স্থান, যার মাহাত্ম্য মানুষের কল্পনাতেও আসে না।

আল্লাহ তাআলা সূরা আয-যারিয়াত-এ বলেন, “আকাশেই রয়েছে তোমাদের রিজিক এবং যা কিছু তোমাদের প্রতিশ্রুত।” (সূরা আয-যারিয়াত: ২২)। ইমাম ইবন কাসীর (রহঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, “রিজিক” বলতে এখানে বৃষ্টি বোঝানো হয়েছে এবং “যা প্রতিশ্রুত” অর্থ জান্নাত। অর্থাৎ, জান্নাত আকাশের উচ্চস্তরে, আল্লাহর প্রতিশ্রুত পুরস্কার হিসেবে সংরক্ষিত, যা কেবল মুমিনদের জন্য নির্ধারিত।

অন্যদিকে জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে থাকবে। তুমি কী জানবে, সিজ্জীন কী? এটি এক লিখিত গ্রন্থ।” (সূরা মুতাফফিফীন: ৭–৯)। তাফসীরবিদদের মতে, “সিজ্জীন” এসেছে “সাজানা” বা “সঙ্কীর্ণতা” শব্দ থেকে, যার অর্থ অত্যন্ত নিচু ও সীমাবদ্ধ স্থান। ইমাম ইবন কাসীর, ইমাম বাগভী ও ইমাম ইবন রজব (রহ.) তাঁদের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন যে, সিজ্জীন সপ্তম ভূমির নিচে অবস্থিত এক ভয়াবহ স্থান, যেখানে অবিশ্বাসী ও পাপাচারীদের আত্মা সংরক্ষিত থাকে। তাফসীরে ইবন কাসীর (৪/৪৮৬–৪৮৭), তাফসীরে বাগভী (৪/৫৪৮), এবং ইবন রজবের “আত-তাখউইফ মিনান নার”-এ (পৃষ্ঠা ১–৬২) বলা হয়েছে, জাহান্নাম বাস্তব এক অগ্নিকুণ্ড, যার অবস্থান পৃথিবীর নীচতম স্তরে, সপ্ত জমিনের গভীরে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) তাঁর “হাদিয়্যুল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ” (পৃষ্ঠা ৮২–৮৪) গ্রন্থে বলেন, যেমন জান্নাত সপ্ত আসমানের উপরে, তেমনি জাহান্নাম সপ্ত জমিনের নিচে অবস্থিত - উভয়ই স্থায়ী ও বাস্তব স্থান।

‘ইল্লিয়্যীন’ ও ‘সিজ্জীন’ শুধুমাত্র স্থান নয়, বরং মানব আত্মার অবস্থান ও আমলের প্রতিফলনের প্রতীক। ইল্লিয়্যীন নির্দেশ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি, আধ্যাত্মিক উচ্চতা ও মর্যাদার প্রতীক, আর সিজ্জীন প্রতীক অবাধ্যতা, পাপাচার ও আত্মার নীচে পতনের। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “জান্নাত তোমাদের আমল দ্বারা অর্জিত হয় না, বরং আল্লাহর রহমতেই তোমরা এতে প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)।

সবশেষে বলা যায়, কুরআনের আলোকে জান্নাত অবস্থিত সর্বোচ্চ আকাশস্তরে, আল্লাহর আরশের নিচে, আর জাহান্নাম অবস্থান করছে সপ্ত জমিনের গভীরে। ইল্লিয়্যীন ও সিজ্জীন এই দুটি শব্দ শুধু স্থানের নির্দেশ নয়, বরং আল্লাহর রহমত ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। প্রত্যেক মানুষ তার আমল ও ঈমান অনুসারে এই দুইয়ের একটিতে স্থান পাবে। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানী, এবং তিনিই জানেন এই বাস্তবতার পূর্ণ তাৎপর্য।


সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর নতুন নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩১ ০৯:২৪:৩৪
সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর নতুন নিয়ম
ছবিঃ সংগৃহীত

ওমরাহ ভিসার কার্যকারিতার মেয়াদ তিন মাস থেকে কমিয়ে এক মাস করেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভিসা ইস্যুর তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই ওমরাহযাত্রীকে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে হবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই পরিবর্তন কার্যকর হবে।

তবে, দেশে প্রবেশের পর ওমরাহযাত্রীর অবস্থানকাল আগের মতোই তিন মাস বহাল থাকবে। অর্থাৎ, ভিসা হাতে পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে প্রবেশ করলেই তিনি প্রবেশের দিন থেকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত সৌদি আরবে অবস্থান করতে পারবেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভিসা ইস্যুর ৩০ দিনের মধ্যে কোনো যাত্রী সৌদি আরবে প্রবেশ না করলে ভিসাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আহমেদ বাজায়েফার জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকাল শেষে শীতল আবহাওয়া শুরু হওয়ায় পবিত্র মক্কা ও মদিনায় বিপুলসংখ্যক ওমরাহযাত্রীর আগমন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আগমন সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি হিসেবেই নতুন এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের জুনের শুরুতে শুরু হওয়া ওমরাহ মৌসুমে এরই মধ্যে রেকর্ড চার মিলিয়নের বেশি বিদেশি হাজি সৌদি আরবে পৌঁছেছেন, যা আগের বছরের পুরো মৌসুমের মোট ওমরাহযাত্রীর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ওমরাহ পালনকারীর এই অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে পবিত্র ভূমি সফরের আগ্রহ বাড়ারই প্রমাণ বহন করে।

সূত্র : সৌদি গ্যাজেট ও দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন


শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচুন রাতে ঘুমানোর আগে যে দোয়া পড়তেন নবীজি (সা.)

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩০ ২২:১৮:২৯
শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচুন রাতে ঘুমানোর আগে যে দোয়া পড়তেন নবীজি (সা.)
ছবিঃ সংগৃহীত ঘুমের আমল

ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে জীবন যাপন করলে প্রতিটি কাজই ইবাদতে পরিণত হতে পারে, এমনকি আমাদের দৈনন্দিন ঘুমও। এজন্য জানা প্রয়োজন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের আগে কোন আমলগুলো নিয়মিত করতেন। আল্লাহর রসুল (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করলে ঘুম কেবল বিশ্রাম নয়, আল্লাহ তাআলার কাছে নৈকট্য লাভের উসিলা হতে পারে।

এখানে ঘুমের আগে নবীজি (সা.)-এর পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো

১. ঘুমানোর পূর্বের দোয়া পড়া

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের আগে আল্লাহ তাআলার নাম নিতেন এবং দোয়া পড়তেন। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে।" (আবু দাউদ ৪৮৫৬)

ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সব দোয়া পড়তে না পারলেও সংক্ষেপে এই দোয়াটি পড়া যায়

'আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া'

অর্থ: 'হে আল্লাহ, তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনরায় জাগব।'

২. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, "রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। তারপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।" (বুখারি ৫০১৭) এটি সমস্ত অনিষ্ট ও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার একটি শক্তিশালী আমল।

৩. আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

শোয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।" (বুখারি ২৩১১)

৪. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ

সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত যেকোনো ব্যক্তির গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট।" (বুখারি ৫০৪০) অর্থাৎ, এটি তাকে রাতের সব ধরনের বিপদাপদ ও কষ্ট থেকে রক্ষা করবে।

৫. সুরা মুলক পাঠ করা

শোয়ার আগে সুরা মুলক (তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক) পাঠ করা বিশেষ ফজিলতের। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)।" (তিরমিজি ২৮৯১) এই সুরা পাঠকের জন্য সুপারিশ করে আল্লাহর কাছে তার ক্ষমা নিশ্চিত করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আমলগুলো নিয়মিত করলে একজন মুমিনের ঘুম কেবল দৈনন্দিন বিশ্রাম থাকে না, বরং আল্লাহর নৈকট্য ও সুরক্ষা লাভে এক মহৎ ইবাদতে পরিণত হয়।

পাঠকের মতামত:

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকাকে... বিস্তারিত