লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী? 

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৩ ১৮:৩৮:২৫
লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী? 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠককে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের পরে শুধু রাজনৈতিক মহলে নয়, সামাজিক মাধ্যমে বিশেষ করে বিভিন্ন প্রভাবশালী অ্যাকটিভিস্ট ও ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রতিক্রিয়াও ছড়িয়ে পড়ছে।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য একটি স্ট্যাটাস দেন, যা বিভিন্ন মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নিচে তাঁর স্ট্যাটাসটি অবিকৃতভাবে তুলে ধরা হলো:

"তারেক রহমানের সাথে প্রফেসর ইউনুসের একান্ত বৈঠক প্রায় দেড় ঘন্টা স্থায়ী হইছে।ইন্ডিয়ারে আপাতত পরাজিত করা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রগতিশীল মুসলিম রাষ্ট্র আজকের মিটিং এর ফলাফলে পৌছাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। আজকে ইরানে হিজ / রায়েলের আগ্রাসনের পর আমাদের শংকা আর গভীর বেদনার প্রেক্ষাপটে এই সংবাদ আমাদের ভরসা জোগায় যে ইসলামী দুনিয়া আমাদের কনসার্ন বুঝতে পারছে। আমাদের পাশে আইস্যা দাড়াইছে। আমরাও একটা ফিলিস্তিনের মতো হিন্দুত্ববাদি ভারতের বিপদজনক ঘেরাটোপে আছি। সেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের কোন আন্ডারগ্রাউন্ড বুঝাপড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য বিপদজনক।ম্যাডাম নিজে ইন্টারভেইন করছেন। এইটাও আমাদের বড় পাওয়া। একটা প্রতিবেশী দেশ আর একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি আমাদের পাশে দাড়াইছে। যাদের রাষ্ট্রিয় স্বার্থের জন্যও বাংলাদেশে ভারতের উপস্থিতি বিপদজনক।সকল অন্ধকার কাটে নাই। যখন পুরা দেশ এক হয় তখন ইন্ডিয়া অন্য চাল দেয়। আপনাদের মনে আছে কীভাবে ইসকনকে নামানো হইছিলো এই সরকারের শুরুর দিকে।বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে প্রফেসর ইউনুসের সরকারের দুরত্ব কমছে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে ইন্ডিয়াপন্থীরা আছে, তারা তাদের পজিশন গেইন করার চেষ্টা করবে।আমরা জানিনা ওয়াকার সাপ কী চাল চালবে। উনারে ইন্ডিয়া কী পানি পড়া দিবে। দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানাই। বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের সকল শক্তিকে দুর্বল ও সম্পুর্ন ভাবে পরাভুত করতে না পারা পর্যন্ত আমাদের শান্তি নাই।আমরা আর ভারতের দাসত্ব করবো না। কথা ক্লিয়ার।ইনকিলাব জিন্দাবাদ।"

jj

এর কিছুক্ষন পরেই পিনাকী কিছুটা মজার ছলে আর একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে তিনি বলেন,

"আইজকার মিটিং ভালোভাবে কইরা জাতির আকাশের অহেতুক শংকা দূর করার জন্য একসময়ের সহযোদ্ধাদের জেসচার অব গুড উইল হিসাবে দুইটা শ্লোগান লিখে দিলাম।
১/ গণতন্ত্র ফেরে, ফেব্রুয়ারির ভোরে!
২/ বিএনপির জয়, ফেব্রুয়ারিতেই হয়!
ভুইলেন না ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাওয়ার ভুদ্দিটা এই দুই টেকার ইউটিউবারের কাছে থিকাই পাইছিলেন। তাই লিখে রেখো এক বিন্দু দিছিলাম শিশির।"

jjযাই হোক, পিনাকী ভট্টাচার্যের স্ট্যাটাসটি এই বার্তাই বহন করে যে, তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠিত দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকটি নিছক রাজনৈতিক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়—বরং এটি এক কৌশলগত কূটনৈতিক মুহূর্ত, যার পেছনে রয়েছে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা ও সমন্বয়। স্ট্যাটাসে মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রগতিশীল মুসলিম রাষ্ট্রের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বৈঠকটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, যেখানে ভারতের প্রভাব প্রতিহত করতে একটি বিকল্প সমীকরণ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।

তিনি এই প্রক্রিয়ায় ইসলামী বিশ্বের বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনের কথা তুলে ধরে বলেন, এই সমর্থন বাংলাদেশের জনগণের “ভরসা” হয়ে উঠেছে। ইরানে ইসরায়েল-সমর্থিত হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণের বেদনা ও উদ্বেগ তুলে ধরে তিনি আন্তর্জাতিক মুসলিম সংহতির প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেন। তার বক্তব্যে ‘আমরাও ফিলিস্তিনের মতো হিন্দুত্ববাদী ভারতের বিপদজনক ঘেরাটোপে আছি’—এই উপমাটি মূলত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিরোধপূর্ণ দিককে ফোকাসে নিয়ে আসে। পিনাকী এটিকে শুধু কূটনৈতিক দূরত্ব নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসনের রূপ হিসেবেও ব্যাখ্যা করছেন।

স্ট্যাটাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো “ম্যাডামের হস্তক্ষেপ”–যা ধারণা দেয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বয়ং এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এটি দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থান নির্দেশ করে। একই সঙ্গে পিনাকী দাবি করেন, একটি প্রতিবেশী আঞ্চলিক পরাশক্তিও এই অবস্থানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে—যা ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী। যদিও তিনি দেশটির নাম প্রকাশ করেননি, তবুও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটিকে চীন বা তুরস্কের দিকে ইঙ্গিত বলে ধরে নেওয়া যায়।

স্ট্যাটাসে ভারতবিরোধী বক্তব্য স্পষ্ট ও উগ্র; তিনি সরাসরি বলেন, “আমরা আর ভারতের দাসত্ব করবো না”—এবং একে জাতীয় আত্মমর্যাদার প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপন করেন। বিএনপি’র ভেতরে থাকা তথাকথিত ‘ইন্ডিয়াপন্থীদের’ নিয়ে তাঁর আশঙ্কা এই রাজনৈতিক সমীকরণে বিভাজন সৃষ্টির সম্ভাবনাও নির্দেশ করে। তাঁর মতে, ভারতবিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করতে এই অংশটি সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। এমন মন্তব্য বিএনপির রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দেয়, যা ভবিষ্যতে দলের কৌশলগত দিক নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।

সবশেষে, স্ট্যাটাসটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিরোধ এখন কেবল একটি রাজনৈতিক স্লোগান নয়—বরং এটি একটি জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ের রূপ নিচ্ছে। পিনাকীর মতে, এই লড়াইয়ে সমর্থন দিচ্ছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো। তাঁর স্ট্যাটাস রাজনৈতিক আবেগ, বৈদেশিক কূটনীতি এবং জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্নকে একসূত্রে গেঁথে, আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে নতুন বিতর্কের খোরাক হয়ে উঠেছে। এটা স্পষ্ট যে, এই ধরনের ভাষ্য বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিকে আরও বেশি আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে তুলছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত