ভাইরাল এক রাতের গল্প: মাজার, পুলিশ, ভাই এবং মায়ের ভালোবাসা

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৩ ১৮:০৯:৩৭
ভাইরাল এক রাতের গল্প: মাজার, পুলিশ, ভাই এবং মায়ের ভালোবাসা

নাট্যকার ও অভিনেতা সমু চৌধুরী সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবি ও ভিডিওর সূত্রে পড়ে যান জনমানসে বিভ্রান্তিমূলক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে শাহ মিসকিন মাজারে খালি গায়ে গামছা পরিহিত অবস্থায় বিশ্রামরত সমুর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই এটি ছড়িয়ে পড়ে, যা তার শারীরিক বা মানসিক অবস্থার নিয়ে উদ্বেগ ও সন্দেহের জন্ম দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমু চৌধুরী মাজারে একান্তভাবে সময় কাটাচ্ছিলেন। গামছা পরে গাছতলায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কারণ নিজের জামা-কাপড় ধুয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাধারণ চোখে দৃশ্যটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় ভক্তদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। কেউ কেউ মন্তব্য করেন তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।

এই উদ্বেগকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা বিষয়টি প্রশাসন ও ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’-কে অবহিত করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশের সহযোগিতায় সমু চৌধুরীকে উদ্ধার করে নিরাপদে রাখা হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছেন এবং কখনো কখনো সাংবাদিকদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়েও পড়ছেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সমুর চাচাতো ভাই রাইসুল ইসলাম এবং অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্য সুজাত শিমুল ও জুলফিকার চঞ্চলের উপস্থিতিতে প্রশাসন তাঁকে পরিবারের জিম্মায় তুলে দেয়। পরদিন শুক্রবার সকালে ঢাকায় ফেরার পর এক আবেগঘন সিদ্ধান্ত নেন সমু—ফিরে যান যশোরে, মায়ের কাছে।

রাইসুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, “ভাইয়া সারা রাত জার্নি করে সকাল ১০টার দিকে যশোরে পৌঁছান। এখন মায়ের কাছে বিশ্রামে আছেন। মায়ের স্নেহ আর পরিচিত পরিবেশেই তিনি স্বস্তি খুঁজছেন।”

পরিবার সূত্রে জানা যায়, সমু চৌধুরী মাজারভক্ত ও সাদামাটা জীবনযাপনকারী একজন মানুষ। শহুরে চাকচিক্য থেকে দূরে থেকে মাঝে মাঝেই তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সুফিবাদী আধ্যাত্মিক কেন্দ্র বা মাজারে সময় কাটাতে অভ্যস্ত। ঈদের ছুটিও তিনি কাটিয়েছেন যশোরে, মায়ের সঙ্গে।

এখান থেকেই উঠে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক অনুরাগ কিংবা নির্জনতার প্রয়োজন অনেক সময় জনসাধারণের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মুখে পড়ে ভুল ব্যাখ্যার জন্ম দিতে পারে।

এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, সামাজিক মাধ্যমে যেকোনো দৃশ্যপটকে বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার করলে তা ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য উদ্বেগ ও লজ্জার কারণ হয়ে উঠতে পারে। এজন্য সংবেদনশীলতা, যাচাই-বাছাই এবং মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন অত্যন্ত জরুরি।

সমু চৌধুরীর মাজারে যাওয়া, ভাইরাল হওয়া ছবি ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আমাদের মনে করিয়ে দেয় জনপরিচিত ব্যক্তিরাও ব্যক্তি জীবনে নিঃসঙ্গতা, আত্মঅনুসন্ধান বা আধ্যাত্মিকতার জন্য সময় চান। সামাজিক সম্মান ও সংহতির প্রয়োজনে আমাদের উচিত হবে তথ্যকে যাচাই করে দেখার এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার অনুশীলন করা।

-অনন্যা, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ