যুক্তরাষ্ট্র–চীন আলোচনায় বড় অগ্রগতি: ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১৩:০৭:৩৬
যুক্তরাষ্ট্র–চীন আলোচনায় বড় অগ্রগতি: ট্রাম্প

সত্য নিউজ:দীর্ঘদিনের শুল্কবিষয়ক উত্তেজনা ও পারস্পরিক বাণিজ্য বিধিনিষেধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এখনো চূড়ান্ত চুক্তির পথ দীর্ঘ এবং জটিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও অর্থনীতিবিদেরা।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “সুইজারল্যান্ডে চীনের সঙ্গে আজ একটি ভালো বৈঠক হয়েছে। অনেক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে এবং বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে। পুরো বিষয়টি নতুনভাবে সাজানো হয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক পদ্ধতিতে।”

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনেভায়। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির। চীনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী প্রধানমন্ত্রী হি লিফেং। বৈঠকের সূত্রমতে, আলোচনা এখনো চলমান এবং এটি চূড়ান্ত চুক্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভি এবং সিনহুয়া বৈঠকটিকে “সমস্যা সমাধানের পথে বড় পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দিলেও চূড়ান্ত সমাধানে সময় ও আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।

শুল্কবিষয়ক বিতর্ক: সহনীয় না অব্যাহত?

বর্তমানে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ১৪৫% শুল্ক বহাল রয়েছে, যদিও ২ এপ্রিল ট্রাম্প তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছে। এই বাস্তবতায় দুই দেশের মধ্যে পণ্যবিনিময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্কহার এক ধাক্কায় অর্ধেক করলেও তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি চীনা পণ্যে শুল্কহার ৮০%-এ নামিয়ে আনার কথা ভাবছেন, তবে শর্ত থাকবে চীনের বাজার উন্মুক্তকরণ। তাঁর ভাষায়, “এটা ঠিক শুল্ক, এখন বাকিটা অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত।”

ব্যবসা ও ভোক্তা বাজারে প্রভাব

শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের দাম আগেই বেড়েছে। গোল্ডম্যান স্যাক্স পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য সূচক ৪%-এ উন্নীত করতে পারে। যদিও কিছু পণ্য ইতিমধ্যেই মার্কিন বন্দরে পৌঁছেছে, সেগুলোর ওপর ১৪৫% শুল্ক থাকায় দাম কমবে না বলেই ধারণা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের—যেমন জুতা, পোশাক, ইলেকট্রনিকস, খেলনা ও শিশুদের জিনিসপত্রের—বড় একটি অংশ আসে চীন থেকে। এখন এই আমদানি প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে।

ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন ধারণা করছে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক আমদানি ২০% কমবে এবং চীন থেকে আমদানি কমে যাবে ৭৫–৮০% পর্যন্ত, যা জেপি মরগান-এর বিশ্লেষণেও প্রতিফলিত।

চীনা অর্থনীতির সংকট ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের ফলে চীনের উৎপাদন খাতে চাপ স্পষ্ট। এপ্রিল মাসে দেশটির কারখানার উৎপাদন ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এতে চীনের অর্থনীতিতে নতুন করে প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি অর্থনীতি এবং সম্মিলিতভাবে তারা বিশ্বের মোট অর্থনীতির এক বিরাট অংশ ধরে রেখেছে। তাই এ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতা কেবল দ্বিপক্ষীয় নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ