মহাকাশে ঝড়: ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্বে বিপন্ন নাসার মিশন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১১ ১০:৩০:৫৫
মহাকাশে ঝড়: ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্বে বিপন্ন নাসার মিশন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টেসলা এবং স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের মধ্যে চলমান ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সরাসরি প্রভাব পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওপর। রাজনৈতিক মতানৈক্য ও আর্থিক অস্থিরতায় নাসার বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও মহাকাশ অভিযান অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে নাসা

মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স বর্তমানে নাসার অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিশনের মূল অংশীদার। বিশেষ করে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট এখন নাসার মানববাহী ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি চুক্তি বাতিল করার হুমকি এই অংশীদারিত্বের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বাজেট সংকোচনের ছায়া

হোয়াইট হাউজের অনুরোধে মার্কিন কংগ্রেসে নাসার গবেষণা বাজেট অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রহ অনুসন্ধান এবং আন্তর্জাতিক যৌথ গবেষণাসহ অন্তত ৪০টি মিশন হুমকির মুখে পড়বে।

নাসা অবশ্য জানিয়েছে, চাঁদ ও মঙ্গলে মানব মিশন যেন অব্যাহত থাকে, সেই পরিকল্পনায়ই বাজেট পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলে নভোচারী পাঠানোর জন্য ১০ কোটি ডলার বাড়তি বরাদ্দও দিয়েছে।

দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা ও সমালোচনা

ড. অ্যাডাম বেকার, একজন মহাকাশ বিশ্লেষক, মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতিতে নাসাকে কেবল দুই লক্ষ্য চাঁদে চীনের আগে পৌঁছানো এবং মঙ্গলে মার্কিন পতাকা বসানো এই সংকীর্ণ লক্ষ্যেই সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

তাছাড়া, নাসার স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (SLS) রকেটের প্রতি উৎক্ষেপণে ৪১০ কোটি ডলার খরচ, যেখানে স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেটের খরচ মাত্র ১০ কোটি ডলার, সেটিও এক আলোচিত বিষয়। স্টারশিপের বড় সুবিধা এটি পুনঃব্যবহারযোগ্য যা খরচ সাশ্রয় ও টেকসই মহাকাশ গবেষণায় বড় ভূমিকা রাখে।

বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা ও ঝুঁকি

জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন-এর তৈরি ‘নিউ গ্লেন’ রকেটসহ আরও সাশ্রয়ী বিকল্প তৈরি হচ্ছে বটে, তবে হোয়াইট হাউজ চাইছে এসব নতুন রকেটই ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণার নেতৃত্ব নিক। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো এই সংস্থাগুলোর প্রতি নির্ভরতা কতটা নিরাপদ? যদি মাস্ক বা বেজোস সরকারি সহায়তা না পান, কিংবা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, তবে মহাকাশ অভিযানের ভবিষ্যৎ কী হবে?

আন্তর্জাতিক মিশনেও ছেদ

এই রাজনৈতিক ও আর্থিক অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বে পরিচালিত বড় মিশনগুলোতেও। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত দুটি মিশন মঙ্গল গ্রহে প্রাণের চিহ্ন অনুসন্ধান এবং পাথরের নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা এখন অনিশ্চয়তায়।

পরিণতি কী হতে পারে?

ড. সিমিয়ন বারবার, ওপেন ইউনিভার্সিটির একজন মহাকাশবিজ্ঞানী, বলেন, “ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যকার সাম্প্রতিক কথোপকথন ও আচরণ আমাদের মহাকাশ স্বপ্নকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।” একইসঙ্গে, কংগ্রেস ভবিষ্যতে এই সংকট নিরসনে বাধ্য হয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত