ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’, সংঘাতের নতুন যুগ শুরু

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১০:২৩:৩৯
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’, সংঘাতের নতুন যুগ শুরু

সত্য নিউজ:দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বহু দশকের দ্বন্দ্ব এক নতুন, প্রযুক্তিনির্ভর ও আরও বিপজ্জনক মাত্রায় প্রবেশ করেছে। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ড্রোন ব্যবহার করে সামরিক সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে এই সংঘাত এখন এক ‘ড্রোন যুদ্ধ’-এ রূপ নিয়েছে, যা শুধু সীমান্ত উত্তেজনাকেই নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।

সংঘাতের সূচনা

ভারত অভিযোগ করেছে, গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান তার ভূখণ্ড এবং ভারত-শাসিত কাশ্মীরের অন্তত তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা গত কয়েক ঘণ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল ইসরায়েলের তৈরি ‘হারপ’ ড্রোন।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলছে, এই হামলাগুলো ভারতের সাম্প্রতিক আক্রমণের প্রতিক্রিয়া, যেখানে পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে ভারত সীমান্তে গোলাবর্ষণ করেছে। এতে পাকিস্তানের ৩৬ জন নাগরিক নিহত এবং ৫৭ জন আহত হন। ভারতীয় সেনাবাহিনীও জানায়, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তাদের অন্তত ১৬ জন নাগরিক নিহত হয়েছে।

নতুন যুদ্ধের কৌশল: ড্রোনের গুরুত্ব ও ব্যবহার

এই দ্বন্দ্বে ড্রোনের ব্যবহার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। আধুনিক ড্রোন যেমন নজরদারি চালাতে পারে, তেমনি আক্রমণ চালানোর সক্ষমতাও রাখে। বিশেষ করে ‘লোটারিং মিউনিশন’ নামে পরিচিত ড্রোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে আঘাত হানতে পারে। রাডার ধ্বংস করার কৌশলেও ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।

‘ড্রোন আজ শুধু নজরদারি নয়, শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালানোর নির্ভুল অস্ত্র হয়ে উঠেছে’, বলছেন মার্কিন নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক জাহারা ম্যাটিসেক।

কার কত ড্রোন ক্ষমতা?

ভারতের ড্রোন বহর মূলত ইসরায়েলের প্রযুক্তিনির্ভর। আইএআই হিরন ও সার্চার ড্রোন নজরদারি চালাতে পারে উচ্চমাত্রায় ও দীর্ঘ সময় ধরে। হারপ ড্রোনগুলো ব্যবহার করা হয় ‘লোটারিং অ্যাটাক’-এর জন্য। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৪০০ কোটি ডলারের চুক্তিতে ভারত ৩১টি এমকিউ-৯বি ‘প্রিডেটর’ ড্রোন কিনছে, যা ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম।

অন্যদিকে পাকিস্তান তার ড্রোন শক্তি গড়ে তুলেছে চীন, তুরস্ক ও নিজস্ব প্রযুক্তির সমন্বয়ে। চীনা CH-4, তুর্কি Bayraktar Akıncı এবং পাকিস্তানের নিজস্ব Borak ও Shahpar ড্রোনগুলো তাদের বহরে রয়েছে। পাকিস্তান এছাড়াও লোটারিং অস্ত্রও তৈরি করছে, যা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম।

রাজনৈতিক ও কৌশলগত পরিপ্রেক্ষিত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত এখনো রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো ‘ম্যাস স্কেল ড্রোন ওয়ারফেয়ার’-এ রূপ নেয়নি। তবে তা দক্ষিণ এশিয়ায় এমন এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, যেখানে নীরব, দূরনিয়ন্ত্রিত ও অস্বীকারযোগ্য হামলা দিন দিন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মনোজ জোশি বলেন, ‘ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে যুদ্ধবিমান কিংবা মিসাইলের মতো বড় আকারের হামলা এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত সীমিত কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে। কিন্তু এটি যদি বড় আকারের যুদ্ধের সূচনা হয়, তবে চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে।’

অন্যদিকে পাকিস্তানি বিশ্লেষক ইজাজ হায়দার বলেন, ‘এই হামলাগুলো সম্ভবত প্রতিক্রিয়াশীল, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের সূচক নয়। কিন্তু এতে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংঘাতের রূপরেখা আঁকা যাচ্ছে।’

কোন পথে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান?

এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তান এমন এক দ্বিধান্বিত মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে তাদের সংঘাত হয় প্রশমিত হবে, নয়তো ভয়ানক বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। ড্রোন প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা বদলাচ্ছে না, বরং কূটনৈতিক সমীকরণকেও আরও জটিল ও অনিশ্চিত করে তুলছে।

বিশ্বশক্তিগুলোর সংযম আহ্বানের মধ্যেও, এই ড্রোন যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন এক প্রতিযোগিতামূলক অস্ত্র প্রতিযোগিতার পথ উন্মুক্ত করেছে। এখন প্রশ্ন হলো—দুই পক্ষের মধ্যে কে আগে সরে দাঁড়াবে, আর কে আরও আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে যাবে?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ