শেয়ার বাজার
ক্যাশ ফ্লোয় এগিয়ে কারা? ওষুধ খাতের সেরা ১০ কোম্পানি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩৪টি কোম্পানির মধ্যে ৩০টি কোম্পানি ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত তৃতীয় বা প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সময়ের মধ্যে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আস্থার ইঙ্গিত দিলেও, ১৬টি কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো হ্রাস এই খাতে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—ব্যয় ব্যবস্থাপনা, নগদ প্রবাহ ও উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে।
ক্যাশ ফ্লো: ব্যবসার আসল বারোমাসি সূচক
লাভ-ক্ষতির বাইরে ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহ হলো কোম্পানির বাস্তব আর্থিক স্বাস্থ্য যাচাইয়ের অন্যতম প্রধান সূচক। আয় যত বড়ই হোক না কেন, যদি ক্যাশ ইনফ্লো না থাকে, তাহলে কোম্পানি চলমান দায় ও বিনিয়োগ ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে উৎপাদননির্ভর খাত যেমন ফার্মাসিউটিক্যাল ও কেমিক্যাল—সেখানে ক্যাশ ফ্লোই টেকসই পরিচালনার মূল চাবিকাঠি।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলে, যেসব কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে, তারা শুধু মুনাফা করেনি, বরং নগদ আয় অর্জনেও সক্ষম হয়েছে—এটা ব্যাংকঋণ শোধ, উৎপাদন সম্প্রসারণ ও লভ্যাংশ প্রদানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
কারা এগিয়ে এবং কেন?
একমি ল্যাবরেটরিজ, ইবনেসিনা, কোহিনুর কেমিক্যাল, নাভানা ফার্মা এবং রেনেটা—এই পাঁচটি কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। একমি ও রেনেটা দীর্ঘদিন ধরে বাজারে নিজস্ব ব্র্যান্ডভিত্তিক প্রসারতা বজায় রেখেছে।
একমি ল্যাবরেটরিজের ক্যাশ ফ্লো ৫.৭৭ টাকা থেকে বেড়ে ৭.৭৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ইবনেসিনা, যা তুলনামূলকভাবে ছোট কোম্পানি, তাদের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ২৬.১৬ টাকায় উন্নীত হয়েছে—যা অনেক বড় কোম্পানিকেও ছাড়িয়ে গেছে। কোহিনুর কেমিক্যাল, যাদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যয় সাশ্রয়ী উৎপাদন নীতি এবং ক্লিনিং পণ্যেও আধিপত্য রয়েছে, তাদের ক্যাশ ফ্লোও বেড়ে হয়েছে ২৪.৯৭ টাকা, আগের বছর ছিল ২০.৬০ টাকা। নাভানা ফার্মা, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও নতুন ওষুধ বাজারজাত করণের মধ্য দিয়ে গত বছরের তুলনায় ক্যাশ ফ্লো ১০ গুণের বেশি বাড়িয়েছে—যা স্পষ্ট করে যে কোম্পানিটি উৎপাদন ও বিপণনে কাঙ্ক্ষিত গতি পেয়েছে। রেনেটা, আগের বছর যেখানে নেতিবাচক ক্যাশ ফ্লো ছিল (-১.৩১ টাকা), এবার তা ২১.৭৬ টাকায় উন্নীত হয়েছে—যা সংকটমোচনের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
যাদের ক্যাশ ফ্লো কমেছে, তারা কোথায় পিছিয়ে?
যদিও প্রতিবেদনে শুধু ক্যাশ ফ্লো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তবে তথ্য বলছে—অধিকাংশ বড় বা মাঝারি কোম্পানিই নগদ প্রবাহে চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ হতে পারে: ইনভেন্টরি ও রিসিভেবল বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক কাঁচামালের দামে অস্থিরতা, ঋণের উপর নির্ভরশীলতা, উচ্চ অপারেটিং খরচ, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। এই প্রেক্ষাপটে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, “লাভজনকতা ছাড়া ক্যাশ ফ্লো বৃদ্ধি ধরে রাখা যাবে না, তবে একইসঙ্গে প্রয়োজন ফিন্যান্সিয়াল অপ্টিমাইজেশন, যেখানে ক্যাশ সাইকেল এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ব্যবস্থাপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”
বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিভঙ্গি: লাভ নয়, বাস্তব প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ
এ মুহূর্তে বাজারে প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম চলছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য কেবল নিট প্রফিট নয়, শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো (Operating Cash Flow Per Share) বিশ্লেষণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই মানদণ্ডেই বোঝা যায় কোম্পানির আর্থিক তলদেশ কতটা মজবুত।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন—“লাভ কমলেও যদি কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো থাকে, তাহলে তা নিরাপদ বিনিয়োগ বিবেচিত হতে পারে। ফার্মাসিউটিক্যাল খাত এ দিক থেকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল প্রবণতা দেখায়।”
যদিও মোট ১৩টি কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে, যা সামগ্রিকভাবে আশাব্যঞ্জক, তবু ১৬টি কোম্পানির নিম্নমুখী প্রবণতা একটি গভীর কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। শিল্পখাতে উৎপাদনব্যয়, কাঁচামাল আমদানি, ঋণ ব্যয় এবং বাজার প্রতিযোগিতা—এই চারটি প্রধান চাপে আগামী প্রান্তিকে আরও বিশ্লেষণ জরুরি হয়ে পড়বে।
এই মুহূর্তে প্রয়োজন—নগদ প্রবাহের উপযোগী ফিন্যান্সিয়াল রিফর্ম এবং কার্যকর প্রবৃদ্ধিনির্ভর ব্যবসায়িক কৌশল। কেবল আয় বা মুনাফা নয়, নগদ প্রবাহের ব্যাকবোন যত শক্তিশালী হবে, কোম্পানির ভিত্তিও তত দৃঢ় হবে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- কবে থামবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভেদের রাজনীতি?
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- ২০২৬ সালের এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা
- নির্বাচনের ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া: বিএনপি অসন্তুষ্ট, জামায়াত সন্তুষ্ট, এনসিপি শর্তসাপেক্ষে সমর্থন
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- রোজা, পরীক্ষা ও বাজেটের মাঝে নির্বাচন অযৌক্তিক: বিএনপি
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- দ্বিতীয় দিনেও চলছে কোরবানি, কসাই না পাওয়ায় আজ জবাই অনেকের
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক-ইউনূস বৈঠক: উত্তপ্ত রাজনীতিতে সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট?
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষোভ কি ভারতের কেন্দ্রীয় কূটনীতি পাল্টাবে?
- সাক্ষাৎ চাইলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি, মুখ ফিরিয়ে নিলেন ড. ইউনূস
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?