মাতৃত্ব নিয়ে একেবারে সিরিয়াস!

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ০৯:৩৯:৩৬
মাতৃত্ব নিয়ে একেবারে সিরিয়াস!

সত্য নিউজ:সেপ্টেম্বর ২০২৪—এই সময়ই জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। প্রথমবারের মতো মা হয়েছেন তিনি। সন্তান দুয়ার জন্মের পর থেকেই নিজেকে খানিকটা অন্তরালে সরিয়ে নিয়েছেন এই চিত্রতারকা। সাত মাস পর, সম্প্রতি ফরাসি সাময়িকী মেরি ক্লের-এ দেওয়া এক বিশদ সাক্ষাৎকারে মাতৃত্ব নিয়ে তাঁর উপলব্ধি, দ্বিধা ও জীবনের রূপান্তর নিয়ে অকপটভাবে কথা বলেছেন তিনি।

“আমি হারিয়ে গেছি—এ কথা বলব না। আবার নিজেকে পুরোপুরি খুঁজে পেয়েছি বলেও মনে হয় না।”
এই কথাতেই যেন দীপিকার বর্তমান মানসিক অবস্থার একটি স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে। নতুন মা হিসেবে ক্লান্তি, উচ্ছ্বাস, অপরাধবোধ আর আত্মপরিচয়ের খোঁজে দীপিকার প্রতিটি দিন যেন এক নতুন সন্ধিক্ষণ। সন্তান দুয়ার ঘুমের ফাঁকে নিজের জন্য একটু সময় পেলেই সেটি তাঁর কাছে বিশ্রাম, প্রশান্তি।

তারকা থেকে 'মা' হয়ে ওঠা: এক আবেগঘন রূপান্তর

৪০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয়, ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীদের একজন—এই দীপিকা যখন সাক্ষাৎকারে এলেন, পরনে ছিল সাদা ওভারসাইজ টি-শার্ট, কালো পায়জামা, মুখে প্রসাধনের ছিটেফোঁটাও নেই। এই অনাড়ম্বর দীপিকা যেন নতুন এক অধ্যায়ে—মাতৃত্বের একান্ত, সংবেদনশীল জগতে প্রবেশ করছেন।

সন্তান জন্মের পর তাঁর পেশাগত জীবনে এসেছে নতুন গতি। কাজ করছেন খণ্ডকালীনভাবে, কখনো দুয়াকে সঙ্গে নিয়ে, আবার কখনো পরিবারের বা ন্যানির সহায়তায়। কাজের ব্যস্ততা আর মাতৃত্বের টানাপোড়েনে দীপিকা খুঁজে নিচ্ছেন নতুন ভারসাম্য। বললেন, “আগের মতো কাজ করতে পারব কি না, জানি না। আবার চাইও কি সেটা?”

"মা হওয়াকে সিরিয়াসলি নেওয়া কি অন্য রকম কিছু?"

এক পরিচালককে সময় না দিতে পারায় তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল—“মনে হচ্ছে মা হওয়ার বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছেন!”
দীপিকা হেসে বললেন, “এটা প্রশংসা, না বিদ্রূপ—বুঝিনি। কিন্তু মা হওয়াকে সিরিয়াসলি নেওয়া কি অন্য রকম কিছু?”
এই প্রশ্নেই উঠে আসে দীপিকার নতুন জীবনের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার, দায়িত্ববোধ এবং গভীর সংলগ্নতা।

মাতৃত্বের সূচনা: এক জটিল যাত্রা

সন্তান দুয়ার জন্ম হয়েছিল জটিল গর্ভাবস্থা ও কঠিন প্রসবপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সে অভিজ্ঞতা স্মরণ করে দীপিকা বলেন, সে সময় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নতুন জীবন কী গভীর রূপ নিতে চলেছে। সন্তানের নামও তাড়াহুড়ো করে রাখেননি তাঁরা। কিছুটা সময় নিয়েছেন অনুভব করতে, উপলব্ধি করতে। এক রাতে স্বামীর শুটিং চলাকালীন তিনি শুধু একটি টেক্সট করেন—“দুয়া?” উত্তর আসে এককথায়—“হ্যাঁ।”

দুয়া—আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘প্রার্থনা’। নামেই যেন জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, আশীর্বাদ ও এক গভীর প্রত্যাশা।

পারিবারিক সমর্থন ও প্যারেন্টিংয়ের সমতা

দীপিকার মতে, সন্তানের আগমন তাঁর জীবনকে ‘দুয়া-র আগে’ ও ‘দুয়া-র পরে’ এই দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। স্বামী রণবীর সিংও সমানভাবে প্যারেন্টিংয়ে যুক্ত। দীপিকার প্রতি তাঁর সম্মানও অকুণ্ঠ—“তোমার শরীর, সিদ্ধান্তও তোমার।”
রণবীর বলেন, “সব কিছুই এখন ওর (দুয়ার) ঘিরে ঘোরে। দীপিকা ইনস্টাগ্রামে রিল ঘেঁটে নিয়মিত পাঠায় আমাকে—শিশু পালনের টিপস!”

প্রস্তুত একজন মা, সংবেদনশীল একজন মানুষ

দীপিকা চান তাঁর মেয়ে যেন একটি স্বাভাবিক, অনাড়ম্বর শৈশব কাটায়—যেমনটা তিনি কাটিয়েছেন বেঙ্গালুরুতে। বাবার (প্রকাশ পাড়ুকোন) জীবনযাপন তাঁকে শিক্ষা দিয়েছে কীর্তিমান হয়েও কীভাবে স্বাভাবিক থাকা যায়।

তাই এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় দুয়ার মুখ প্রকাশ করেননি তিনি। সাবধানে পরিমিতি বজায় রেখে সন্তানকে গড়ে তুলতে চান।

মাতৃত্ব তাঁর ভেতরের কেন্দ্রে পরিবর্তন এনেছে—এ কথা অকপটে স্বীকার করেন দীপিকা। তবে তিনি জানেন, এই রূপান্তর তাঁর পথের অন্ত নয়, বরং একটি নতুন যাত্রা। জীবন, কাজ এবং মাতৃত্বের নতুন জটিলতাকে সঙ্গে নিয়েই তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছেন।

রণবীরের মতে, “এটাই এখন দীপিকার সবচেয়ে সুন্দর রূপ।”
তাঁর গল্প যেন আজকের সব মায়েরই গল্প—চাপ, দ্বিধা, প্রেম, আত্মত্যাগ এবং নীরব এক শক্তির অদৃশ্য ইতিহাস।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ