হলিউড অভিনেত্রী সিডনি সুইনি মানেই যেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কখনো তাঁর অভিনীত নগ্ন দৃশ্য নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়, কখনো আবার বিতর্কিত জিনস-এর বিজ্ঞাপন নিয়ে সমালোচিত হন। নতুন সিনেমা 'ক্রিস্টি'-এর প্রচার উপলক্ষে চলচ্চিত্রবিষয়ক মার্কিন সাময়িকী ভ্যারাইটিকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ২৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী নিজের ক্যারিয়ার, সমালোচনা এবং জীবন সম্পর্কে নতুন উপলব্ধির কথা জানিয়েছেন।
আলোচনায় 'ইউফোরিয়া' এবং উপলব্ধি
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ার হলেও এইচবিওর জনপ্রিয় সিরিজ 'ইউফোরিয়া' সিডনি সুইনির পরিচিতি রাতারাতি বাড়িয়ে দেয়। যদিও এর পর থেকে সিরিজে অভিনীত চরিত্র এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি নিয়ে তিনি বরাবরই সমালোচনা ও বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন।
ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিডনি জানান, বিনোদন দুনিয়া নিয়ে এখন তাঁর ধারণা আগের চেয়ে অনেক পরিষ্কার। তিনি বলেন, "আমি নিজের শক্তির জায়গা খুঁজে পেয়েছি। প্রতিদিন যা করি, তা থেকে শেখার চেষ্টা করি... এভাবে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।" সিডনি মনে করেন, 'জ্ঞানই আসল শক্তি'। এই বোধ তাঁকে স্বাধীন ও আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং এর জন্য তিনি 'ইউফোরিয়া'র চরিত্রটিকে কৃতিত্ব দেন।
শুরুতে অনেকে মনে করতেন, কেবল গ্ল্যামারাস ও আবেদনময় চরিত্রেই তিনি মানানসই। কিন্তু গত মে মাসে মুক্তি পাওয়া ক্রাইম ড্রামা ঘরানার সিনেমা 'রিয়েলিটি'-তে একেবারে গ্ল্যামারহীন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি সমালোচকদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেন। তবে খ্যাতি নিয়ে ভাবেন না সিডনি। তিনি এখনো নিজেকে বড় অভিনেত্রী মনে করেন না এবং নিজের অভিনয় দক্ষতা বাড়িয়ে ক্যারিয়ারকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান।
নগ্ন দৃশ্য ও শরীরসর্বস্ব সমালোচনা
'ইউফোরিয়া' ও 'দ্য হোয়াইট লোটাস' সিরিজে সুইনির নগ্ন দৃশ্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তবে ডেডলাইনকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী জানিয়েছেন, সমালোচনাই হোক বা না হোক, চরিত্রের প্রয়োজনে তিনি নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় বন্ধ করবেন না। তিনি বলেন, "এটা তো অদ্ভুত একটা কথা। আমি একজন অভিনয়শিল্পী, যাকে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়।"
সিডনি জানেন, তিনি যতই ভালো অভিনয় করুন না কেন, মানুষ কেবল তাঁর শরীর নিয়েই কথা বলে। এই কারণে কৈশোর থেকেই তিনি চেষ্টা করেছেন এমন কিছু করতে, যাতে মানুষ তাঁর কাজ নিয়ে কথা বলে। তিনি বলেন, "আমি স্কুলে যত বেশি সম্ভব খেলায় অংশ নিতাম, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতাম, যাতে মানুষ ভাবতে না পারে যে আমি শরীরসর্বস্ব।"
বিতর্কিত বিজ্ঞাপন ও 'ক্রিস্টি' চরিত্র
চলতি বছর আমেরিকান ইগল পোশাক ব্র্যান্ডের একটি বিজ্ঞাপনে 'জিনস' (Genes/Jeans) শব্দটির ব্যবহার নিয়ে সিডনি তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েন। স্লোগান ছিল—'সিডনি সুইনি হ্যাজ গ্রেট জিনস।' সোনালি চুল ও নীল চোখের অভিনেত্রীকে নিয়ে এই শব্দখেলা বর্ণ ও সৌন্দর্যের মানদণ্ড টেনে সমালোচিত হয়েছিল।
এদিকে, সিডনিকে নিয়ে মানুষের তৈরি হওয়া ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে পরিচালক ডেভিড মিচোডের কাছেও। প্রথমে তিনি বক্সিং কিংবদন্তি 'ক্রিস্টি মার্টিন'-এর কঠিন চরিত্রের জন্য সিডনিকে বিবেচনা করেননি। তবে 'রিয়েলিটি' সিনেমাটি দেখার পর নির্মাতা বুঝতে পারেন, সিডনি আবেদনময়ী চরিত্রের বাইরেও কঠিন অভিনয়ের জন্য উপযুক্ত। চরিত্রের প্রয়োজনে সিডনি ৩০ পাউন্ড পেশি বাড়িয়েছেন। সিডনি মনে করেন, ক্রিস্টি মার্টিনের জন্য রিং ছিল তাঁর 'মুক্তির জায়গা'। সিনেমাটি আগামী ৭ নভেম্বর মুক্তি পাবে।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলো স্মরণ করে সিডনি বলেন, "এমন সময় গেছে যখন সপ্তাহে ৫ থেকে ১০টি অডিশন দিতাম, একটা থেকেও ডাক পেতাম না। তবে আপনার যদি বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি থাকে, ব্যর্থতায় ভয় পাবেন না।"
সার্জারি ও গুজব
প্লাস্টিক সার্জারি করানোর বহুল চর্চিত গুজব প্রসঙ্গে সিডনি সুইনি ভ্যারাইটিকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, "আমি ইনজেকশন, ট্যাটু—কিছুই করি না। আমাকে যা দেখায় সেটাই আমি। বয়স বাড়লে যেমন দেখাবে, সেটা নিয়েই আমি খুশি থাকব।" নতুন 'বন্ড গার্ল' হওয়ার গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি এখনো গুজব, তবে এমন কিছু হলে 'দারুণ হবে'।