নলকূপ নয়, পাইপেই মিটছে ৩৫ বছরের তৃষ্ণা?

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ০৮:৫৪:৪৩
নলকূপ নয়, পাইপেই মিটছে ৩৫ বছরের তৃষ্ণা?

সত্য নিউজ:শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী রানীশিমুল ইউনিয়নের পাহাড়ি চারটি গ্রামে তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র বা নলকূপ ছাড়াই পাইপ বসালেই অনবরত সুপেয় পানি উঠে আসছে। স্থানীয়ভাবে এ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ‘বরিং’। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীদের মতে, এটি একটি প্রাকৃতিক ‘স্প্রিং লেয়ার’ (spring layer)-এর ফল, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিরল।

‍প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের রহস্য

শ্রীবরদীর খড়ামুড়া, বালিঝুড়ি, রাঙ্গাজান ও ঝুলগাঁও গ্রামের পাহাড়ি ঢালে মাটি খুঁড়ে ৬০-৭০ ফুট গভীরে পাইপ বসালেই নিজের গতিতে পানি উঠছে। কোনও চাপ প্রয়োগ বা বৈদ্যুতিক পাম্প ছাড়াই এটি ঘটে চলেছে টানা প্রায় ৩৫ বছর ধরে। গ্রামবাসীদের ভাষ্যমতে, প্রথম এই আবিষ্কার হয় বালিঝুড়ি গ্রামে, এক কৃষক নলকূপ বসাতে গিয়ে অনুধাবন করেন, শুধু পাইপ বসালেই পানি উঠছে।

৩০০ পরিবারের জন্য প্রকৃতির উপহার

এই চার গ্রামে এখন অন্তত ৪০-৫০টি জায়গায় এমন বরিং পদ্ধতিতে পানি উত্তোলিত হচ্ছে। প্রায় ৩০০ পরিবার সরাসরি এই পানির উপর নির্ভরশীল। পানি কখনো বন্ধ হয় না, শীতকালে গরম এবং গরমকালে ঠান্ডা থাকে বলে জানান স্থানীয় গৃহিণীরা। এ পানি ব্যবহৃত হচ্ছে দৈনন্দিন কাজ, রান্নাবান্না, গোসল এমনকি কৃষিকাজেও।

সরকারি স্বীকৃতি ও সহায়তা

সরকার দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য কয়েকটি স্থানে বরিং করে পাকা কাঠামো তৈরি করে দিয়েছে। এতে স্থানীয় জনগণ সুফল পাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ বলেন, “এটি এই পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য প্রকৃতির বিশেষ আশীর্বাদ।”

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল হোসেন বলেন, “যেখানে ভূগর্ভে পানির স্তরে চাপের ব্যবধান তৈরি হয়, সেখানে প্রাকৃতিকভাবে পানি উপরে উঠে আসে। একে বলা হয় স্প্রিং লেয়ার।” তবে এটি সব এলাকায় ঘটে না, শ্রীবরদীর ঘটনা ব্যতিক্রম এবং গবেষণাযোগ্য বলেও জানান তিনি।

প্রাকৃতিক উৎস সংরক্ষণের প্রয়োজন

এলাকার পানি ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে এই ধরনের প্রাকৃতিক উৎসের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও সম্ভাব্য গবেষণার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একদিকে এটি পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে খরচবিহীন ও টেকসই পানির জোগান নিশ্চিত করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রাকৃতিক ঘটনা পাহাড়ি জনপদের জন্য যেমন স্বস্তির, তেমনি দেশের পানি গবেষণা ও বিকল্প উৎস ব্যবস্থাপনার জন্যও একটি মডেল হতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত