বাংলাদেশকে লিখিত প্রস্তাব চেয়েছে ইউএসটিআর

সত্য নিউজ:যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর উদ্ভূত বাণিজ্য সংকট নিরসনে এবার আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে চায় ওয়াশিংটন। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (USTR)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি ও পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপট
গত এপ্রিল মাসে শেখ বশিরউদ্দীন এক চিঠিতে ইউএসটিআরের শীর্ষ কর্মকর্তা জেমিসন গ্রিয়ার-কে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে আলোচনার আগ্রহের কথা জানান। তারই জবাবে, ৭ মে তারিখে পাঠানো চিঠিতে গ্রিয়ার বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, একটি লিখিত প্রস্তাব পাওয়া গেলে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দর-কষাকষির ভিত্তি স্থাপন করা যাবে।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা হ্রাস, অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় সহযোগিতা, শ্রম অধিকার রক্ষা, এবং ডিজিটাল বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা দূর করা—এই চারটি বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আলোচনার অগ্রাধিকার।
বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “চিঠি পাওয়ার আগেই আমরা একটি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছি। এটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, এরই মধ্যে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফর করে ইউএসটিআরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্তমানে ১৯০টি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করে, এবং আরও ১০০টি পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ১৫% শুল্ক বসে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পণ্যে গড়ে ৬.১০% শুল্ক আরোপিত হয়।
উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগ
পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পাঁচ দিনের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একটি চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন, অন্তত তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত রাখতে। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সামগ্রীর ওপর ৫০% শুল্ক হ্রাস দেওয়া হতে পারে।
পাল্টা শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব
চলতি বছরের ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭% পর্যন্ত শুল্ক বসার আশঙ্কা তৈরি হয়। যদিও ৯ এপ্রিল ঘোষণাটি তিন মাসের জন্য আংশিকভাবে স্থগিত করা হয়, তবুও ন্যূনতম ১০% শুল্ক কার্যকর রয়েছে।
এরই মধ্যে মার্কিন ক্রেতারা রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে এই বাড়তি শুল্ক আদায় করতে শুরু করেছে। কিছু ক্ষেত্রে পুরো শুল্ক রপ্তানিকারককে বহন করতে হচ্ছে, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল করে তুলছে।
বিশ্লেষকদের পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ করণীয়
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে কৌশলী হতে হবে। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইউএসটিআরের মাধ্যমে যেসব দেশকে আলোচনায় প্রাধান্য দিচ্ছে, তাদের অবস্থান ও চাহিদা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশকে নিজের প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।”
তার পরামর্শ অনুযায়ী, বাংলাদেশকে অবশ্যই নির্দিষ্টভাবে ঠিক করতে হবে:
-
যুক্তরাষ্ট্রকে কী কী শুল্ক ও অশুল্ক সুবিধা দেওয়া হবে
-
বাংলাদেশ কী কী সুবিধা প্রত্যাশা করছে
-
যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কছাড় আদায়ের কৌশল
-
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনা
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। পাল্টা শুল্কের প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক ও নীতিগতভাবে সুনির্দিষ্ট ও সাহসী অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কখনো এত প্রবল ছিল না। ইউএসটিআরের কাছে একটি পরিপূর্ণ ও কৌশলগত প্রস্তাব পেশ করে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জকে একটি সুযোগে রূপান্তর করতে পারে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- বাহরাইনেরমানামায় বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন, নেতৃত্বে আক্তার হোসেন
- বাহরাইনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পুনর্জাগরণ: গ্যালালী শাখায় নতুন নেতৃত্ব
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- বিশ্বশক্তির নজর এখন বাংলাদেশে: খনিজ ভাণ্ডারের নতুন মানচিত্র
- তারেক-ইউনুস উত্তপ্ত ফোনালাপ: যা জানা গেল
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ভোর: দক্ষিণ এশিয়ার তেলের ‘রাজসিংহাসন’ দখলের পথে বাংলাদেশ?
- ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?
- ধ্বংস থেকে নেতৃত্ব: ৫ আগস্ট থেকে যেভাবে শুরু হলো অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
- ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় হঠাৎ বিরতি: যুক্তরাষ্ট্র কি নতুন কৌশল নিচ্ছে?