মে মাসে দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০১ ২২:৫৯:০২
মে মাসে দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সদ্যসমাপ্ত মে মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা একক মাস হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মে মাসের তুলনায় এবার রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। এর আগে, চলতি বছরের মার্চ মাসে ঈদুল ফিতরের আগে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৩০ কোটি ডলার, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, “বর্তমানে দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধ হয়েছে। হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমেছে। ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো নিরাপদ ও লাভজনক হওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন।”

তিনি আরও জানান, “অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের নানা উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার অর্থপাচার ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে হুন্ডি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে অর্থপাচারে জড়িত থাকার সন্দেহে শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যসহ ১১টি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এদের ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ইতিমধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মোট ২,৭৫০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬১৩ কোটি ডলার বেশি।

মে মাসে ব্যাংকভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বিশ্লেষণে দেখা যায়:

  • রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার
  • কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার
  • বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার
  • বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪১ লাখ ৩০ হাজার ডলার

রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।গত এক বছরে (২০২৪-২৫ অর্থবছরে) মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল নিম্নরূপ:

  • জুলাই: ১৯১.৩৭ কোটি ডলার
  • আগস্ট: ২২২.১৩ কোটি ডলার
  • সেপ্টেম্বর: ২৪০.৪১ কোটি ডলার
  • অক্টোবর: ২৩৯.৫০ কোটি ডলার
  • নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার
  • ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি ডলার
  • জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার
  • ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার
  • মার্চ: ৩২৯ কোটি ডলার
  • এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার
  • মে: ২৯৭ কোটি ডলার

অর্থনীতিবিদদের মতে, ঈদকে কেন্দ্র করে প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বরাবরই বেশি থাকে। তবে এ বছর রেমিট্যান্সে হঠাৎ উল্লম্ফনের মূল কারণ হুন্ডি বন্ধ, প্রণোদনা বাড়ানো ও নিরাপদ ব্যাংকিং চ্যানেল। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ কমবে, এবং ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ