যুদ্ধের মুখে কাশ্মীর: আতঙ্কিত শিশু, ধ্বংসের মুখে সীমান্তগ্রাম

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ০২:২০:১৪
যুদ্ধের মুখে কাশ্মীর: আতঙ্কিত শিশু, ধ্বংসের মুখে সীমান্তগ্রাম

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সশস্ত্র সংঘাত নতুন করে সীমান্তবাসীদের জীবনে ভয়াবহ এক বাস্তবতা নিয়ে এসেছে। গত তিনদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দুই দেশের গ্রাম ও শহরগুলো কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন হাজারো সাধারণ মানুষ। কেউ ঘর হারিয়েছেন, কেউ প্রিয়জন। শূন্য শহরগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে নিরপরাধ মানুষের কান্না আর ভয়ভীতির।

আশ্রয় নয়, আতঙ্কের সন্ধান

কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার ক্রালপোরা গ্রামের বাসিন্দা তনভির আহমেদ জানান, “জীবনে এই প্রথম আমাদের গ্রামে গোলা এসে পড়ল। আমরা সীমান্তের গোলাগুলির অভ্যস্ত হলেও এমন কাছাকাছি বিস্ফোরণ কখনো দেখিনি।” শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ একটি গোলা তার বাড়ির সামনে এসে পড়ে, মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় তার একমাত্র রুজির উপকরণ—ট্রাক এবং মাটি কাটার যন্ত্র। ভাগ্যক্রমে তার পরিবার তখন ৫০০ মিটার দূরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল।

এই গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো স্থায়ী বাঙ্কার নেই। ফলে গোলাবর্ষণ শুরু হলেই পরিবারগুলোকে খোলা মাঠে বা স্কুলঘরের সাময়িক আশ্রয়ে জীবন বাঁচাতে ছুটতে হয়।

ভয়াল বাস্তবতা উভয় পক্ষেই

শুধু ভারতীয় দিক নয়, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও একইরকম মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র উঠে এসেছে। বিবিসির তাবান্ডা কোকাব ও ফারহাত জাভেদ জানিয়েছেন, সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে মানুষের বসবাস প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে হাজারো মানুষ পাহাড়ি পথ ধরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। অনেকেই পথেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন, শিশুদের কান্না আর মায়েদের আর্তনাদ যেন গলা টিপে ধরছে গোটা অঞ্চলকে।

সামরিক উত্তেজনা, বেসামরিক বিপর্যয়

সত্য নিউজ: এই সংঘাত নিছক সামরিক শক্তির লড়াই নয়—এটা হয়ে উঠেছে হাজারো নিরপরাধ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই। সীমান্তরেখা যেন এখন আর রাষ্ট্রের সীমা নয়, হয়ে উঠেছে মৃত্যুর রেখা। উভয় পক্ষই দাবি করছে প্রতিপক্ষের উস্কানিতে গোলাগুলি শুরু হয়েছে, কিন্তু যে ক্ষতি হচ্ছে, তা ভোগ করছে শুধু সাধারণ মানুষ।

মানবিক সহায়তার দাবি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান উত্তেজনা অবিলম্বে প্রশমিত না হলে তা আরও বড় আকারে মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে। আশ্রয়কেন্দ্র, চিকিৎসাসেবা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া না হলে হাজারো শিশু, নারী ও বৃদ্ধ ক্ষুধা, ঠাণ্ডা ও মানসিক ট্রমায় ভুগবে।

যুদ্ধ কখনোই শধু সৈনিকদের ক্ষত নিয়ে শেষ হয় না। সবচেয়ে গভীর ক্ষত থাকে সাধারণ মানুষের মনে—যেখানে প্রতিটি কান্না, প্রতিটি ধ্বংসস্তূপ একেকটি ইতিহাস হয়ে ওঠে। এই সংঘাতের নিরব সাক্ষী হয়ে রইলো কুপওয়ারা, উরি, এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পারের অগণিত বিস্মৃত গ্রাম।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ