১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অবশেষে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের নতুন সীমানা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ৪ সেপ্টেম্বর কমিশন আনুষ্ঠানিক গেজেট প্রকাশ করে। এবার মোট ১৬ জেলার ৪৬টি আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন সীমানায় গাজীপুর জেলার আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ছয়টি, আগে ছিল পাঁচটি। অন্যদিকে বাগেরহাট জেলার আসন সংখ্যা কমে হয়েছে তিনটি, আগে ছিল চারটি। এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বেশ কিছু জেলার বিভিন্ন আসনের সীমারেখায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তবে যে প্রতিশ্রুতি ছিল আসন মানচিত্রকে আরও “পরিষ্কার” করার, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। চূড়ান্ত মানচিত্রেও অন্তত ২২টি উপজেলা একাধিক আসনের মধ্যে বিভক্ত রয়ে গেছে। এর মানে, এসব উপজেলার মানুষকে ভোট দিতে হবে ভিন্ন ভিন্ন আসনে। নতুন করে বিভক্ত হয়েছে ফরিদপুরের ভাঙা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর এবং নোয়াখালী সদর উপজেলা। আবার পূর্বে বিভক্ত চারটি উপজেলা—পাবনার বেড়া, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী—এখন একীভূত হয়ে গেছে একটি আসনে।
বিভক্ত থাকা ২২টি উপজেলার মধ্যে রয়েছে—ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল, সিরাজগঞ্জ সদর, চুয়াডাঙ্গা সদর, ঝিনাইদহ সদর, যশোর সদর, মাগুরা সদর, নড়াইল সদর, খুলনার দিঘলিয়া, মানিকগঞ্জ সদর, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ ও সাভার, গাজীপুর সদর, নরসিংদী সদর, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি, মাদারীপুর সদর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও নোয়াখালী সদর, লক্ষ্মীপুর সদর এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া।
ইসি জানিয়েছে, পুনঃসীমানা নির্ধারণের সময় তারা তিনটি বিষয় বিবেচনা করেছে—প্রশাসনিক সুবিধা, এলাকাকে যতটা সম্ভব কম্প্যাক্ট রাখা এবং ভোটারের সংখ্যা সমান করার চেষ্টা। সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ এবং প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটার রয়েছে। গড় হিসেবে প্রতিটি আসনে ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের আসনে ভোটারের গড় সংখ্যা আরও কিছুটা বেশি।
এবারের পুনঃসীমানা প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। ইসি যখন খসড়া মানচিত্র প্রকাশ করে, তখন ৮৪টি আসন নিয়ে ১,৮৯৩টি অভিযোগ, আপত্তি ও প্রস্তাবনা জমা পড়ে। এসব বিষয়ে শুনানি হয় ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট চারদিনব্যাপী। শুনানি শেষে কিছু পরিবর্তন এনে কমিশন চূড়ান্ত মানচিত্র ঘোষণা করে।
তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই নতুন মানচিত্র নিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। বিশেষ করে বাগেরহাট, ফরিদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে নতুন সীমানা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, সীমানা পুনঃনির্ধারণে জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক সুবিধার কথা যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি।
এর আগে অতীতের প্রতিটি বড় নির্বাচনের আগে আসন পুনর্নির্ধারণ হয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন ১২তম নির্বাচনের আগে ১০টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে। কেএম নূরুল হুদা কমিশন পরিবর্তন করেছিল ২৫টি আসনের সীমানা, আর ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন পরিবর্তন করেছিল ৮৭টি আসন। ২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন একযোগে ১৩৩টি আসনের সীমারেখা নতুন করে এঁকে দেয়।
আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। ফলে এখন আর কোনো আইনি বাধা নেই—নতুন সীমানা অনুযায়ীই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে নির্ধারিত ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
-হাসানুজ্জামান