বিশ্লেষণ

দিল্লি হতাশ, তারেক রহমান দিলেন আপোষহীন সার্বভৌম বার্তা

সুমন সাহা
সুমন সাহা
স্টাফ রিপোর্টার
২০২৫ মে ২৯ ২০:৫৭:৩৩
দিল্লি হতাশ, তারেক রহমান দিলেন আপোষহীন সার্বভৌম বার্তা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক এক ঘটনায় ভারতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে নতুন করে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি পুরনো কিন্তু তীব্র বার্তাবহ স্লোগান ফের উচ্চারিত হওয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছে দিল্লির ক্ষমতাকেন্দ্রে।

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন—যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত “তারুণ্যের সমাবেশ”-এ ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, "দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।" এই স্লোগান শুধু জনসমাবেশে আলোড়ন তোলে না, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও স্পষ্ট বার্তা পাঠায়—বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদ্দেশে।

সমাবেশে তারেক রহমান দেশের সার্বভৌমত্ব, আদালতের স্বাধীনতা, সরকারবিরোধী অবস্থান এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দলের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত এবং দলের নেতাকর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের প্রতি আদালতের রায় অবজ্ঞা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগও তুলে ধরেন তিনি।

তার বক্তব্যে উঠে আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলর ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দেয়ার বিষয়টি। আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও তা কার্যকর না হওয়াকে তিনি সরকারি স্বৈরাচার ও আদালত অবমাননার শামিল বলেও মন্তব্য করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের বক্তব্যে একটি বিষয় পরিষ্কার—বিএনপি আর কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী নয়। এই অবস্থান ভারতের জন্য একটি ধাক্কার মতোই। বিশেষ করে যখন গুঞ্জন উঠেছিল, প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাবনা নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলো জেগেছিল। কিন্তু তারেক রহমানের সুস্পষ্ট অবস্থান সেই সম্ভাবনাকে কার্যত ছিন্ন করে দেয়।

ভারতের কয়েকটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। অনেকে বলছেন, বিএনপির এ অবস্থান নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে—যেখানে বাংলাদেশ আর আগের মতো পরাশক্তিনির্ভর অবস্থানে নেই।

তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সংবিধানে কী লেখা আছে, সেটা মুখ্য নয়। মুখ্য হলো, তা কতটা বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে।” উত্তর কোরিয়ার সংবিধানকে উদাহরণ টেনে তিনি বোঝান, সুন্দর কথায় ভরা সংবিধান থাকলেও বাস্তবে যদি সেগুলো কার্যকর না হয়, তবে তা অর্থহীন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সমাবেশ বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। তরুণদের জাগ্রত করতেই এ উদ্যোগ, আর সেখানে তারেক রহমানের বক্তব্য দলের নতুন দিকনির্দেশনা হিসেবেই ধরা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে একটিমাত্র স্লোগান—"দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, সবার আগে বাংলাদেশ"—আবারো ভারতের বাংলাদেশ-নীতি ও পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। স্লোগানটি যতটা সাধারণ শুনতে লাগে, এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সার্বভৌমতার এক স্পষ্ট ও দৃঢ় ঘোষণাপত্র।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত