মোংলা বন্দরে জাহাজ ডাকাতি, চিফ ইঞ্জিনিয়ার কি মূলহোতা!

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৯ ১০:২৩:১৮
মোংলা বন্দরে জাহাজ ডাকাতি, চিফ ইঞ্জিনিয়ার কি মূলহোতা!

মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে নোঙর করা একটি বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। বহুল আলোচিত এ ‘ডাকাতি’ আদতে একটি পূর্বপরিকল্পিত অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ছিল, যার মূল হোতা হিসেবে জাহাজটির চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে শনাক্ত করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, উদ্ধারকৃত তথ্য ও তদন্তের ভিত্তিতে মোংলার পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত পাথরবোঝাই বাণিজ্যিক জাহাজ এম.ভি সেজুঁতি-তে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন: ডাকাত দলের সদস্য সুমন হাওলাদার (২১), মালামালের ক্রেতা সুমন হোসেন (৩০), এবং প্রধান পরিকল্পনাকারী ও জাহাজটির চিফ ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এম.ভি সেজুঁতি গত বছরের ২২ জুন ভারত থেকে পাথরবোঝাই করে মোংলা বন্দরের বেসক্রিক এলাকায় নোঙর করে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে জাহাজটি অচল অবস্থায় ছিল। এতে করে পণ্য খালাসের পরও জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি। এ দীর্ঘ স্থবিরতার কারণে নাবিকদের বেতন বাকি পড়ে এবং আর্থিক সংকটে ভোগেন তারা।

অর্থনৈতিক চাপে নাবিকদের মধ্যে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এই সুযোগেই জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে মালামাল চুরি ও পরে তা সাজানো ডাকাতির নাটকে রূপ দেন।

প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, একাধিক দফায় জাহাজ থেকে মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে বিক্রি করা হয়। এরপর সর্বশেষ ‘ডাকাতি’র নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়, যেখানে নাবিকদের হাত-পা বেঁধে ‘জিম্মি’ করে মালামাল লুট করা হয় বলে প্রচার চালানো হয়। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ অসঙ্গতির ভিত্তিতে কোস্ট গার্ড অভিযান পরিচালনা করে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে পরিচালিত অভিযানে মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া বিভিন্ন ধরনের মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হোসেন বলেন, “শুরুতে ঘটনাটি সাধারণ ডাকাতির মতো মনে হলেও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। আর্থিক দুরবস্থা, ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা এবং জাহাজে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা এ ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে।”

আটককৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বন্দর এলাকায় জাহাজগুলোর ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা জোরদারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ