ইতালিতে শ্রমিক অভাব: কেন কমছে আগ্রহ?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ১৪:৩৪:২৫
ইতালিতে শ্রমিক অভাব: কেন কমছে আগ্রহ?

সত্য নিউজ: ইতালির শ্রমবাজার, যা ইউরোপের মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময়, বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মুখে। বিভিন্ন কারণে দেশটিতে কর্মী পাঠানোর গতি কমে গেছে, যার মধ্যে অন্যতম হল ভাষা ও কারিগরি দক্ষতার অভাব। সেই সঙ্গে ভুয়া নিয়োগপত্রের অভিযোগও উঠেছে, যা ইতালি সরকারের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপের কারণ হয়েছে। এই কারণে, যদিও ইতালিতে কাজের সুযোগ ব্যাপক, তবুও কর্মী যাচ্ছে কম।

ভিসা প্রক্রিয়া জটিল, অপেক্ষা দীর্ঘ

২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পর, ২০২১ সাল থেকে ইতালিতে কর্মী পাঠানো পুনরায় শুরু হয়। তবে, ইচ্ছুক কর্মীদের জন্য ভিসা প্রাপ্তি সহজ হয়নি। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৬৫৩ জন, ২০২২ সালে ৭,৫৯৪ জন, ২০২৩ সালে ১৬,৮৭৯ জন এবং ২০২৪ সালে মাত্র ১,১৬৪ জন কর্মী ইতালি যান। এই সংকটের প্রধান কারণ হলো ঢাকায় ইতালি দূতাবাসের দীর্ঘ ভিসা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। অনেক কর্মী এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ভিসার জন্য অপেক্ষা করছেন, ফলে তাঁদের পাসপোর্টও দীর্ঘ সময় আটকে থাকে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

ভুয়া নিয়োগপত্র ও অবৈধ অভিবাসন

অনেক কর্মী অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার জন্য ভুয়া নিয়োগপত্রের মাধ্যমে আকৃষ্ট হচ্ছেন, যা ভিসা জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সুযোগ কমে গেলে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি প্রবেশের প্রবণতা বাড়ছে, যা এক নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে।

ভাষা ও কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা

ইতালির শ্রমবাজারে কাজ করার জন্য একটি বড় বাধা হলো ভাষা এবং কারিগরি দক্ষতার অভাব। ইতালি সরকার বিশেষভাবে ভাষাজ্ঞান ও কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য গুরুত্ব দেয়, তবে অনেক কর্মী এই প্রশিক্ষণ ছাড়াই দেশটিতে যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। ফলে, তাঁরা কোনো কাজে যোগ দিতে পারেন না বা আইনগতভাবে অবৈধ হয়ে পড়েন। ইতালি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি কর্মীরা এক দেশে কাজ করার পর পাঁচ বছর সেখানেই থাকতে হয়, যদি না আবাসিক অনুমতি পেয়ে অন্য দেশে চলে যেতে পারেন।

নতুন সমঝোতা স্মারক ও ভবিষ্যত উদ্যোগ

২০২০ সালে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে মাইগ্রেশন ও মোবিলিটি বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সম্প্রতি, ৬ মে ঢাকায় আরও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার লক্ষ্য বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধি করা এবং কর্মীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। এতে সিজনাল ও নন-সিজনাল দুই ধরনের কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কর্মীদের ইতালির ভাষা শেখানো ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ইতালি এবং বাংলাদেশের যৌথ একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা বছরে একবার বৈঠক করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়, সংগঠন এবং সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ

ইতালিপ্রবাসীদের সেবায় দীর্ঘদিন কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, কর্মী পাঠানোর আগে তাদের ভাষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। বিশেষত, ইউরোপে গিয়ে কর্মীরা যাতে অবৈধ না হন, সেজন্য বাংলাদেশ সরকারের উচিত সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং কর্মীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত

প্রবাসী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহ মো. তাইফুর রহমান বলেন, "যারা ইতালির ভাষা শিখেছেন, তারা সহজেই ভিসা পাচ্ছেন। তবে যারা ভাষা বা কারিগরি দক্ষতা না জানেন, তারা বৈধভাবে সেখানে কাজ করতে পারছেন না। সুতরাং, দক্ষতা এবং ভাষা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, নয়তো নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেও কোনও লাভ হবে না।"

ভবিষ্যতের জন্য সুপারিশ

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিসা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার জন্য উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত। পাশাপাশি, দেশে বিদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি, কৌশলগত পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ