সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি: উন্নয়ন না ভোগান্তি?

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বছরজুড়েই চলে খোঁড়াখুঁড়ি। সড়ক সংস্কার, নালা-নর্দমা নির্মাণ এবং বৈদ্যুতিক লাইন প্রতিস্থাপনের কাজের অজুহাতে প্রতিনিয়তই নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে শ্যামলী থেকে গাবতলী ও কল্যাণপুরমুখী সড়কে চলমান প্রকল্পের ধীরগতির কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, বাড়ছে যানজট, ভেঙে পড়ছে জনজীবনের স্বাভাবিক গতি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ডিপিডিসি এবং চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিবিএর যৌথ উদ্যোগে ‘জি-টু-জি হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিশন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে রাজধানীর শ্যামলী এলাকা ও সংলগ্ন প্রধান সড়কে মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় রাস্তা খুঁড়ে স্থাপন করা হচ্ছে হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন, যার মাধ্যমে রাজধানীজুড়ে স্থাপিত ৫৫টি সাব-স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে। তবে প্রকল্পটি এখন সাধারণ মানুষের কাছে ‘নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ’-এর আশ্বাসের চেয়ে ‘নিরবিচ্ছিন্ন দুর্ভোগ’-এর প্রতীক হয়ে উঠেছে।
রাস্তার ওপর ফেলে রাখা পাইপ, ক্যাবল ও অন্যান্য সরঞ্জামের কারণে অনেক জায়গায় সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা বাধ্য হচ্ছেন মূল সড়কে দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে ওঠানামা করতে। বাস হেলপার ও চালকেরা জানাচ্ছেন, আগের তুলনায় এক একটি ট্রিপে সময় লাগছে দ্বিগুণ। এতে কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণ, বাড়ছে যাত্রীদের বিরক্তি।
আলিফ পরিবহনের হেলপার মো. প্রিন্স বলেন, “শ্যামলী থেকে ইউটার্ন নিতে আগে ৫ মিনিট লাগতো, এখন লাগছে আধাঘণ্টা। ট্রিপ কমে গেছে, কামাই-রোজগার কমে গেছে।” সাভার পরিবহনের হেলপার শামীম জানান, গাবতলী যেতে ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে এখন। যাত্রীরাও হতাশ ও রেগে আছেন।
এই পরিস্থিতিতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিবিএর বাংলাদেশ অফিসের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বীন আমিন জানান, প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। যদিও প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, তবে সিটি করপোরেশনের অনুমতির ধীরগতি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক জটিলতায় সময় বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “বৃহৎ কিছু করতে গেলে সাময়িক দুর্ভোগ স্বাভাবিক। এ প্রকল্প শেষ হলে আগামী ৩০ বছর রাজধানীবাসী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা পাবেন।” চলমান কাজ মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শেষ করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল নিশ্চিত করতে হলে সময়মতো কাজ শেষ করাই যথেষ্ট নয় মান, নিরাপত্তা, জনসচেতনতা ও প্রশাসনিক সমন্বয়ও জরুরি। অন্যথায় এই ধরনের প্রকল্প জনগণের ভোগান্তিকে দীর্ঘায়িত করেই যাবে, সুফল থেকে যাবে কাগজে-কলমে।
ঢাকাবাসী আজ উন্নয়ন চায়, তবে সেটা যেন জনদুর্ভোগ নয় জনকল্যাণ বয়ে আনে। উন্নয়ন আর দুর্ভোগ একসাথে চলে না, এই বার্তা যেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পৌঁছে যায় এটাই সময়ের দাবি।
-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- দেশের ৬ জেলায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- “ভারতের দালালরা ঘাপটি মেরে বসে আছে”: মুফতি রেজাউল করিম
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- জেনে নিন ঈদের ছুটিতে কোন কোন এলাকায় ব্যাংক খোলা থাকবে
- যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ট্রাম্পের শুল্কারোপ স্থগিত: ক্ষমতা লঙ্ঘনের অভিযোগ