ট্রাম্পের শুল্ক, চাপ রপ্তানিকারকদের কাঁধে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ১০:৪৪:৩১
ট্রাম্পের শুল্ক, চাপ রপ্তানিকারকদের কাঁধে

সত্য নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ন্যূনতম ১০ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষত তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাড়তি শুল্কের বোঝার বড় একটি অংশ রপ্তানিকারকদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছেন।

পোশাক ও চামড়া শিল্পের একাধিক উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, এমনকি পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে চূড়ান্ত হওয়া ক্রয়াদেশেও এখন ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দাবি করছে মার্কিন ক্রেতারা। এফওবি মূল্যের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব অর্থ কেটে নেওয়া হচ্ছে, ফলে অনেক রপ্তানিকারক মুনাফা তো দূরে থাক, উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।

শুল্ক স্থগিত, কিন্তু চাপ চলমান

পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিনই তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত করলেও, অনেক ক্রেতা তাতে কর্ণপাত করছেন না। রপ্তানিকারকরা বলছেন, শুল্ক স্থগিত হলেও মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো 'নেতিবাচক ঝুঁকি' বিবেচনায় মুল্যছাড় ধরে রেখেছে। বিশেষত বড় ক্রেতারা ৫ শতাংশ ও ছোট ক্রেতারা ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চাইছেন।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতি মাসে প্রায় ৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যার মধ্যে বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, "অবস্থা স্থিতিশীল না হলে এই শুল্ক–সংক্রান্ত চাপ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।"

প্যাসিফিক জিনস গ্রুপও একই সমস্যার মুখোমুখি। তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, "৫–১০ শতাংশ ছাড়ে কার্যত কোনো লাভ থাকছে না।"

আশার আলো: নতুন মার্কিন ক্রেতাদের আগ্রহ

সবকিছুর মাঝেও আশার দিকও আছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চীনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বায়িং হাউস উইকিটেক্স-বিডি এর প্রধান নির্বাহী এ কে এম সাইফুর রহমান বলেন, "চীনের তুলনায় আমাদের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, নতুন চার মার্কিন ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা চলছে।"

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “ক্রেতারা এখন জানতে চাইছে, শুল্ক থাকলে কতটুকু আমরা বহন করব। একটা সুস্পষ্ট নীতিনির্ধারণ খুব জরুরি।”

চামড়া শিল্পেও অনিশ্চয়তা

শুধু পোশাক নয়, চামড়া খাতও ঝুঁকিতে। ঢাকার সাভারে অবস্থিত এসেন্সর ফুটওয়্যারের তিন লাখ ডলারের ব্যাগ রপ্তানি স্থগিত করেছিল একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান। পরে শুল্ক স্থগিতের খবরে তারা পণ্যটি নেয়। প্রতিষ্ঠানটির এমডি কে এম মুশফিকুর রহমান বলেন, “এমন অনিশ্চয়তায় আমরা ইউরোপমুখী হওয়ার পরিকল্পনা করছি।”

মার্কিন বাজারে প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও উদ্বেগ

অবশ্য চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৭ শতাংশ, যা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো ভিয়েতনাম ও চীনের পরে তৃতীয়।

নীতিনির্ধারণে ধীরগতি, উদ্বিগ্ন খাতসংশ্লিষ্টরা

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, "আমরা এখনো সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা পাচ্ছি না। ক্রেতারা জানতে চাইছেন, ভবিষ্যতে শুল্ক থাকলে আমরা কী করব। দ্রুত একটি অবস্থান নেওয়া জরুরি।"

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ