ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে বুধবারের খেলাগুলো ছিল গোলবন্যা ও নাটকীয়তায় ভরপুর। ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল, চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখ নিজেদের ম্যাচে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে, আর টটেনহামকে থেমে যেতে হয়েছে ড্র-তে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে আতিথেয়তা নেওয়া লিভারপুলের জন্য ম্যাচটি ছিল ফিরে আসার লড়াই। টানা চারটি পরাজয়ের পর এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে। পুরনো ক্লাব আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানে জয় এনে দেন হুগো একিতিকে, যিনি চলতি মৌসুমের শুরুতে ৭৯ মিলিয়ন পাউন্ডে (প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ডলার) দলবদল করে লিভারপুলে যোগ দিয়েছিলেন।
ম্যাচের শুরুতে রাসমুস ক্রিস্টেনসেন ফ্রাঙ্কফুর্টকে এগিয়ে দিলেও একিতিকের গোলে দ্রুত সমতায় ফিরে আসে লিভারপুল। এরপর বিরতিতে যাওয়ার আগেই ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক ও ইব্রাহিমা কোনাতের হেডে দুই গোল যোগ হয়। দ্বিতীয়ার্ধে কোডি গাকপো ও ডমিনিক সোবোসলাইয়ের গোল লিভারপুলের বড় জয়ে পরিণত করে ম্যাচটিকে। এই জয়ে তারা ৩৬ দলের লিগ পর্বের তালিকায় ১০ম স্থানে উঠে এসেছে। ম্যাচশেষে ফন ডাইক বলেন, “এটা কোনো বড় বিবৃতি নয়, তবে এটা একটা জয়—আর আমরা এখান থেকেই এগিয়ে যেতে পারি।”
অন্যদিকে লন্ডনের স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি ৫-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছে ডাচ ক্লাব আয়াক্সের বিপক্ষে। ম্যাচে প্রথম দিকেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন আয়াক্সের কেনেথ টেলর, এরপরই শুরু হয় পেনাল্টির উৎসব। মারক গুই, মইসেস কাইসেডো, এনজো ফার্নান্দেজ ও এসতেভাওয়ের গোলে চেলসি বিরতিতে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে টাইরিক জর্জ গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই ম্যাচে এক দলের তিন কিশোর খেলোয়াড় গোল করলেন। চেলসি কোচ এনজো মায়ের্সকা বলেন, “আমরা তরুণ খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা রাখি—এটাই আমাদের ক্লাবের কৌশল।”
অন্যদিকে, বায়ার্ন মিউনিখও নিজেদের মাঠে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে। হ্যারি কেন আবারও গোলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন, এবার ব্রুজের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয় এনে দিয়েছেন দলকে। ১৭ বছর বয়সী লেনার্ট কার্লের গোলে সূচনা হয়, এরপর গোল করেন কেন, লুইস দিয়াস ও নিকোলাস জ্যাকসন। এটি ছিল এই মৌসুমে কেনের ১২ ম্যাচে ২০তম গোল।
স্পেনের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদ জুভেন্টাসকে ১-০ গোলে হারিয়ে সর্বোচ্চ ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জুড বেলিংহাম মৌসুমের প্রথম গোলটি করেন, ভিনিসিউস জুনিয়রের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে। ম্যাচশেষে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া বলেন, “এটা ছিল কঠিন জয়, দুই দিকেই সুযোগ ছিল, কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে এমন জয় সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।”
ইংল্যান্ডের ছয় ক্লাবের মধ্যে একমাত্র টটেনহাম জয় পায়নি; তারা মোনাকোর মাঠে গোলশূন্য ড্র করে ফিরেছে।
পর্তুগালের লিসবনে স্পোর্টিং লিসবন ১০ জনের মার্শেইকে ২-১ গোলে হারিয়েছে। প্রথমার্ধে রেড কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মার্শেইর এমারসন পালমেইরি। এর সুযোগ নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে স্পোর্টিংয়ের জেনি কাতামো সমতা ফেরান এবং অ্যালিসন সান্তোস জয় নিশ্চিত করেন।
ইস্তাম্বুলে গালাতাসারাইয়ের হয়ে নাইজেরিয়ান তারকা ভিক্টর ওসিমেন দুই গোল করেন, ইউনুস আকগুনের গোলে ব্যবধান ৩-১ করেন তারা। নরওয়ের বোডো/গ্লিমটের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন আন্দ্রেয়াস হেলমারসেন।
এছাড়া স্পেনের অ্যাথলেটিক বিলবাও আজারবাইজানের কারাবাগকে ৩-১ গোলে হারায়। ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়েও গোরকা গুরুজেতার জোড়া গোল ও রবার্ত নাভারোর একটি গোলে তারা জয়ের পথ খুঁজে নেয়। অন্যদিকে আতালান্তা ও স্লাভিয়া প্রাগের ম্যাচ গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হয়।
আগামী দুই সপ্তাহ পর চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী রাউন্ডে মুখোমুখি হবে দারুণ কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী দল—যেখানে থাকবে প্যারিস সেন্ট জার্মেই বনাম বায়ার্ন মিউনিখ এবং লিভারপুল বনাম রিয়াল মাদ্রিদ—যা হবে ইউরোপীয় ফুটবলের মহাযুদ্ধ।
-আলমগীর হোসেন