ঋতুর ছন্দপতনে গ্রীষ্মেই বর্ষার দূত

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৫ ১৬:২৪:১১
ঋতুর ছন্দপতনে গ্রীষ্মেই বর্ষার দূত

ঋতুচক্রের স্বাভাবিকতা ভেঙে এবার গ্রীষ্মেই রাঙিয়েছে বর্ষার প্রতীক কদম ফুল। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ফুটে ওঠা এই ফুল এ বছর দেখা দিয়েছে জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়। বিষয়টি একদিকে যেমন বিস্ময়ের, অন্যদিকে তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের এক জীবন্ত উদাহরণও বটে।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতু নিজস্ব ফুল দিয়ে চেনা যায়। বর্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত কদম ফুল—যা ‘বর্ষার রানী’ নামে পরিচিত—এবার দেখা মিলছে সড়কের ধারে, জলাশয়ের পাড়ে, এমনকি বসতবাড়ির আঙিনাতেও। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা-হলুদ গোলাকৃতি এই ফুলের সৌন্দর্যে যেন প্রকৃতিও হয়ে উঠেছে বিমোহিত।

জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, “কদম ফুল বর্ষা মৌসুমেই ফোটার কথা। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের কারণে ফুলের সময়চক্রে এ ধরনের ব্যত্যয় ঘটছে।”

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামাল হোসেন জানান, “আগে আষাঢ় এলেই কদম ফুল ফুটত। এখন গ্রীষ্মেই ফুটছে, যদিও গ্রীষ্মের কদম তুলনামূলকভাবে ছোট ও ক্ষণস্থায়ী হয়।”

ঔষধি গুণে অনন্য কদম

কদম ফুল শুধু সৌন্দর্য নয়, বহুকাল ধরেই এর রয়েছে ভেষজ গুণ। ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা জানান, “কদম পাতায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের গুণ রয়েছে। এছাড়া জ্বর, ব্রণ, পায়ের তালু জ্বালা ইত্যাদি সমস্যার চিকিৎসায়ও কদম ব্যবহার হয়। এমনকি এর ফুল সিদ্ধ করে কুলকুচি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।”

কদমের সাংস্কৃতিক ও আবেগের জায়গা

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কদমের উপস্থিতি ব্যাপক। কবিতা, গান ও গল্পে কদম এসেছে এক আবেগঘন প্রতীকে পরিণত হয়ে। স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালহা মাঈনুদ্দিন বলেন, “ছোটবেলায় বর্ষায় কদম ফুলের জন্য অপেক্ষা করতাম। এখন সেই অভিজ্ঞতা গ্রীষ্মেই হচ্ছে, যা যেমন বিস্ময়কর, তেমনই আনন্দেরও।”

দৃষ্টিনন্দন হলেও সতর্কতার বার্তা

প্রকৃতির এই অকাল ফুল ফোটাকে অনেকে সৌন্দর্যের উৎস হিসেবে দেখলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সতর্কবার্তা। অসময়ে ফুল ফোটা মানে প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্যে পরিবর্তন এসেছে—যার প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্য ও কৃষিতেও।

অনন্যা, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ