জাতিসংঘে আজ গাজা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট, ভেটো ইস্যুতে নজর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র এমন প্রস্তাবে ভেটো দিলেও এবার সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
খসড়া প্রস্তাব ও ভেটোর আশঙ্কা
জাতিসংঘের ১০টি অস্থায়ী সদস্য দেশ গত আগস্টের শেষ দিক থেকে এই খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনার সূত্রপাত হয়, যখন জাতিসংঘ গাজায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেয়। প্রাথমিকভাবে খসড়া প্রস্তাবে শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা প্রবেশের ওপর থেকে বাধা তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলো মনে করেছিল, শুধু মানবিক দিক নিয়ে প্রস্তাব পাস করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র তাতে ভেটো দিতে পারে।
তাই, বৃহস্পতিবার ভোটে যাওয়া নতুন খসড়ায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, সব জিম্মিকে অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে মুক্তি দেওয়ার দাবিও করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে তাদের মিত্র ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক চাপ ও ক্ষোভ
এবারের এই প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার হুমকিকে অগ্রাহ্য করার একটি স্পষ্ট বার্তা বলে জানিয়েছেন ইউরোপের এক কূটনীতিক। তিনি বলেন, 'যদি আমরা চেষ্টা না করি, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জবাবদিহিতাই থাকে না এবং ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।' তিনি আরও বলেন, এই প্রচেষ্টা হয়তো গাজার ফিলিস্তিনিদের কষ্ট লাঘব করবে না, কিন্তু অন্তত এইটুকু দেখানো যাবে যে তারা চেষ্টা করছেন।
গতবার যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪ সদস্যের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। তারা প্রকাশ্যে বলছেন যে, ইসরায়েলকে চাপ দিতে নিরাপত্তা পরিষদ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন তাদের স্বাধীন বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। সেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় 'গণহত্যা' চালানো এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে 'ধ্বংস' করার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই বিষয়টি আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে পারে।
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের নতুন সামরিক জোট: কী আছে এই চুক্তিতে?
পাকিস্তান এবং সৌদি আরব একটি যুগান্তকারী কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে কোনো একটি দেশের ওপর আগ্রাসনকে উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশ একে অপরকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সৌদি আরব সফরের সময় এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির বিস্তারিত
আল-ইয়ামামা প্রাসাদে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান শেহবাজ শরীফকে স্বাগত জানান। এরপর চুক্তি স্বাক্ষরের পর উভয় দেশের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, "ভ্রাতৃত্ব, ইসলামিক সংহতি ও অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে এবং প্রায় আট দশকের দীর্ঘ অংশীদারত্বের ওপর দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।"
বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন অগ্রগতি' হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি দুই দেশের সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে উন্নীত করেছে। এই চুক্তি শুধু পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্কই দৃঢ় করবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের জন্যও এর তাৎপর্য রয়েছে। এটি পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে সক্ষম মুসলিম শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।
ইসরায়েলকে বার্তা
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতারে ইসরায়েলের হামলার কয়েক দিন পরেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা এর তাৎপর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অস্থিরতা, ইসরায়েলের হামলা এবং আরব বিশ্বে সার্বভৌমত্ব নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি প্রমাণ করে যে, সৌদি আরব পাকিস্তানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করছে।
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তিতে অবদান রাখার যৌথ অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। এটি যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্য রাখে।
এ সময় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: জিও নিউজ
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দিল্লিতে এক বিশেষ আলোচনা সভায় অংশ নেন ভারতের সাবেক আমলা, কূটনীতিক ও গবেষকরা। সেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। ভারতের সাবেক শীর্ষ আমলা ও প্রসার ভারতী বোর্ডের প্রাক্তন সিইও জহর সরকার বিশ্বাস বলেন, হঠাৎ রাজনৈতিক পালাবদলে দিল্লি যেন শক খেয়েছিল, তবে এখন ভারতের স্বীকার করা উচিত যে বাংলাদেশের জনগণ যাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে তাকেই মেনে নিতে হবে।
তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্ররোচনায় না গিয়ে নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করাই ভারতের জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে এখনকার সরকার একটি কেয়ারটেকার সরকার, তাই তাদের প্রতি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি বা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করার কোনো প্রয়োজন নেই।
ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আলোচনায় বলেন, যদি বাংলাদেশে ভুল সরকার ক্ষমতায় আসে, তবে সেটি ভারতের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তার মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের সীমান্ত জড়িত থাকলে সেসব দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার ভারতের কাছেও অভ্যন্তরীণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি মনে করেন, শুধু “যে কেউ ক্ষমতায় আসুক আমরা কাজ করব” বললেই চলবে না; যদি সেই সরকার ভারতের স্বার্থবিরোধী হয়, তবে দিল্লিকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।
ওপি জিন্দাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না এবং ভারতকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০১৪, ২০১৮ বা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভারত অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবি জানায়নি, তবে এখন কেন বলছে? তার মতে, পূর্বের নির্বাচনে ভারত যেভাবে নীরব অনুমোদন দিয়েছে, সেটাই আজ তাদের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে। তাই বাংলাদেশের জনগণ যাকে বেছে নেবে, ভারতকে সেই সিদ্ধান্ত সম্মান করতে হবে, যদিও তা দিল্লির পছন্দসই নাও হতে পারে।
আলোচনায় জামায়াতের প্রসঙ্গও উঠে আসে। সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তাদের সাফল্যকে অনেকে জামায়াতের নতুন রূপ বা ‘জামায়াত ২.০’ বলে উল্লেখ করছেন। শ্রীরাধা দত্ত জানান, ঢাকায় জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তারা কি শরিয়া আইন চালু করবে? উত্তরে তাহের বলেন, তারা কখনো এমন কিছু বলেননি। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়েও তিনি দাবি করেন, শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন এবং সেটি তারা স্বীকার করেছেন। দত্তের মতে, জামায়াত কথায় মুগ্ধ করতে পারলেও তাদের প্রকৃত কার্যকলাপ ভিন্ন হতে পারে, তাই ভারতকে সতর্কভাবে তাদের দিকে তাকাতে হবে।
অন্যদিকে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ভিন্ন অবস্থান নেন। তিনি বলেন, জামায়াত আসলে মুসলিম ব্রাদারহুডের অংশ, যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মিশরসহ বিভিন্ন দেশে সক্রিয়। তার মতে, যেমন চিতাবাঘ তার দাগ বদলায় না, তেমনি জামায়াতও তাদের মূল অবস্থান পরিবর্তন করবে না।
-রফিক
ট্রাম্পের তালিকায় ভারত–পাকিস্তান ‘মাদক পাচারকারী’ রাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ২৩টি দেশকে প্রধান মাদক উৎপাদক ও পাচারকারী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেওয়া এক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিটারমিনেশন’ প্রতিবেদনে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে আফগানিস্তান, বাহামা, বেলিজ, বলিভিয়া, বার্মা (মিয়ানমার), চীন, কলোম্বিয়া, কোস্টা রিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হাইতি, হন্ডুরাস, ভারত, জ্যামাইকা, লাওস, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, পানামা, পেরু ও ভেনেজুয়েলার নাম রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক রুট ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই দেশগুলো মাদক বা কাঁচামাল উৎপাদন ও পাচারের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তবে তালিকায় থাকা মানে এই নয় যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না বা মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে আফগানিস্তান, বলিভিয়া, মিয়ানমার, কলোম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলাকে মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, গত এক বছরে এ দেশগুলো আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী চুক্তির শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
চীনের ব্যাপারে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রিকার্সার কেমিক্যাল রপ্তানিকারক, যা অবৈধ ফেন্টানাইল উৎপাদনে সহায়তা করছে। পাশাপাশি চীন নিতাজিনস, মেথঅ্যামফেটামিনসহ বিভিন্ন সিনথেটিক মাদক উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, তালেবান প্রশাসন মাদক উৎপাদন ও ব্যবসার ওপর আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাস্তবে সেখানে উৎপাদন ও মজুত অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে মেথঅ্যামফেটামিন উৎপাদন বেড়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অর্থায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই তালিকা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চাপ সৃষ্টির একটি হাতিয়ার হলেও একই সঙ্গে এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সংকট এবং সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে নতুন করে সামনে এনেছে।
-শরিফুল
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ
ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক অভিযানের কারণে ফিলিস্তিনের গাজা এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল ক্রমেই দুর্বল ও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। একসময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এখন ইসরায়েলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
গাজায় আগ্রাসনকে অনেক দেশ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করছে এবং এর নিন্দা জানাচ্ছে। একসময় ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসা অনেক দেশ এখন দ্বিধাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতির মধ্যে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ধাক্কা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
লুক্সেমবার্গের কঠোর অবস্থান ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা
এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের শীর্ষ ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল পার্লামেন্টারি কমিশনকে এই তথ্য জানিয়েছেন। চলতি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি বিল প্রস্তাব করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল আরও জানান, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন না থামালে দেশটির বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রতি বছর ইসরায়েলের সঙ্গে লুক্সেমবার্গের ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। যদিও বাণিজ্যের পরিমাণ কম, লুক্সেমবার্গ ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে লুক্সেমবার্গের এই কঠোর অবস্থান ইসরায়েল-লুক্সেমবার্গ সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে, যা ইসরায়েলের জন্য ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ আরও কঠিন করে তুলবে।
মিত্রদের সমর্থন হারানো এবং আন্তর্জাতিক চাপ
আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক মিত্র দেশ এখন ভিন্ন পথে হাঁটছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে একটি বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়েও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থামাতে না পারার হতাশা থেকেই ফ্রান্স এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, বেলজিয়াম এবং যুক্তরাজ্যের মতো মিত্র দেশগুলোর সমর্থনও হারাচ্ছে ইসরায়েল। এসব দেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৪৭টি সদস্য দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলকে কঠিন চাপের মুখে ফেলেছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশের প্রথম চালান ভারতে
পূজার আগে অবশেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছেছে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের প্রথম চালান। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ১০টি ট্রাকে করে মোট ৫০ টন ইলিশের এই চালানটি ভারতে প্রবেশ করে।
চলতি বছর বাংলাদেশ সরকার মোট ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১,২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সেই অনুমতির অংশ হিসেবে প্রথম চালানটি ভারতে পাঠানো হয়েছে।
পেট্রাপোলে বাংলাদেশের ট্রাক থেকে মাছগুলো পশ্চিমবঙ্গের ট্রাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপর এই ইলিশ সরাসরি কলকাতার বৃহত্তম পাইকারি মাছের বাজার হাওড়ার ফিশ মার্কেটে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন খুচরা বাজারে এই ইলিশ পাওয়া যাবে। এর ফলে, দুর্গাপূজার আগে ভোজনরসিক বাঙালিরা বাংলাদেশের পদ্মার সুস্বাদু ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন।
গাজায় মানবিক সংকট চরমে, ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ও অপুষ্টিতে মৃত্যু বাড়ছে
গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার অবরুদ্ধ উপত্যকায় আরও ৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
আনাদোলু সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজার হাসপাতালগুলোতে ৯৮ জনের মরদেহ এবং ৩৮৫ জন আহতকে আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, নিহত ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধার করার মতো যথেষ্ট সরঞ্জাম ও লোকবল নেই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবারের পর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬২ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১৯ জুন দুই মাসের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হয়েছিল। তবে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে ১২ হাজার ৫১১ জন নিহত এবং ৫৩ হাজার ৬৫৬ জন আহত হয়েছেন।
গত মে মাসের শেষ দিক থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত বুধবার খাদ্য ও ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৭ জন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে ত্রাণ সংগ্রহকালে নিহত ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ২ হাজার ৫০৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৪৮ জনে পৌঁছেছে।
২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ সীমিত করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যার কারণে সেখানে খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বুধবার খাদ্য ও অপুষ্টিজনিত কারণে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় দুই বছরে গাজায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪৬ জনই শিশু।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেশ কয়েকবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
নেতানিয়াহুকে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিল কাতার
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দোহায় বিমান অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন এবং এজন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে—এমন কঠোর মন্তব্য করেছে কাতার।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, দোহায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলা বৃথা যায়নি; বরং এর মাধ্যমে কাতারকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দোহায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তার বেপরোয়া নীতির কারণে প্রতিটি ব্যর্থতার পর সেটিকে ঢাকার চেষ্টা করেন। আজ তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, তার জবাবে আমরা বলতে চাই— দোহায় হামলার নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন করেছেন। এজন্য কোনোভাবেই তিনি শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।”
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কাতারে বসবাস করছেন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের শীর্ষ নেতারা। গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে মধ্যস্থতা করা তিন দেশের একটি হলো কাতার, বাকি দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর।
এর আগে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই ইরানে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। পরে ১৬ অক্টোবর গাজায় নিহত হন তার উত্তরসূরী ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এরপর খলিল আল হায়া হামাসের নতুন শীর্ষ নেতার দায়িত্ব নেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী দোহায় একটি ভবনে বোমা বর্ষণ করে হামাস নেতাদের হত্যা করার চেষ্টা চালায়। মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী হওয়া ওই হামলায় ছয়জন নিহত হলেও খলিল আল হায়া ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী প্রায় সব দেশ ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে মাজেদ আল আনসারি জানান, “বর্তমানে আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বিশ্বাসঘাতক ইসরায়েলি হামলার জবাব দেওয়া এবং ভবিষ্যতে যেন এমন হামলা আর না ঘটে, সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে। পাশাপাশি আমরা দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজনৈতিক বিবেচনা এখন আমাদের কাছে গৌণ।”
“গাজা সিটিতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান: জাতিসংঘের অভিযোগ ‘গণহত্যা’”
গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। মঙ্গলবার রাতভর ব্যাপক বোমাবর্ষণের পর ইসরায়েলি বাহিনী শহরের ভেতরে আরও গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। হামাসকে সম্পূর্ণ পরাজিত করাই এই অভিযানের লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির এক বিবৃতিতে বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর গাজা সিটিতে অভিযান উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা স্থলসেনা, নির্ভুল হামলা ও গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে অভিযান চালাচ্ছি, যতক্ষণ না হামাসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা যায়।”
জাতিসংঘের কড়া ভাষা: ‘গণহত্যা চলছে’
জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান কমিশন (COI) মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে এবং তা চলমান। কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই জানান, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট গাজায় গণহত্যার উসকানি দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও সরকারি বিবৃতিগুলো প্রমাণ করে যে এই সহিংসতা ফিলিস্তিনিদের একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েল এই অভিযোগকে “বিকৃত ও মিথ্যা” আখ্যা দিয়ে কমিশনটি বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছে। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজা সিটির পরিস্থিতিকে “ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ” আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভয়াবহ মানবিক সংকট
গাজা সিটির বহু এলাকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোর সামনে নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষকে রাত কাটাতে দেখা গেছে। শরণার্থী ইউসুফ শানাআ জানান, “মানুষের কাছে দক্ষিণে যাওয়ার কিংবা শহরের ভেতরে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়ার অর্থও নেই।”
হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবারই অন্তত ৪৪ জন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকারে সীমাবদ্ধতার কারণে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অভিযানের সমালোচনা করে জানিয়েছে, এটি গাজার ইতিমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। ব্রিটেন সতর্ক করেছে, এই অভিযান কেবল আরও রক্তপাত ও বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি বাড়াবে এবং জিম্মিদের জীবন আরও বিপন্ন করবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি ইসরায়েল সফরে গিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং অভিযানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানান। তিনি বলেন, “কূটনৈতিক সমাধানই আমাদের পছন্দ, তবে কখনও কখনও হামাসের মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে তা সম্ভব হয় না।”
এদিকে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন এবং পরবর্তীতে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রক্তক্ষয়ী সংঘাতের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৪,৯৬৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
-সুত্রঃ এ এফ পি
ভয়াবহ হামলায় গাজা সিটি ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি
ইসরায়েলি সেনাদের ভয়াল হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজারো বাসিন্দা। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন চলমান এই যুদ্ধকে ইতোমধ্যেই “গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করেছে, আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় আরও তীব্রতর হচ্ছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই বছরের মধ্যে গাজা সিটির ওপর ইসরায়েলি সেনাদের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে। বোমা ও গোলার আঘাতে বহু মানুষ শহর ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে পালাচ্ছেন। তাদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, হয়তো আর কখনো নিজ ঘরে ফিরে যেতে পারবেন না। জাতিসংঘ মহাসচিব এই হামলাকে “ভয়ঙ্কর” আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “গাজা জ্বলছে”। শহর ছেড়ে পালাতে থাকা মানুষের ভিড়ে চোখে পড়েছে আসবাবপত্র বোঝাই ভ্যান, গাধার গাড়ি আর হাতে সামান্য মালপত্র নিয়ে ধ্বংসস্তূপ ও কালো ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে দক্ষিণমুখী মানুষের অন্তহীন মিছিল। উপকূলীয় আল-রাশিদ সড়ক এখন হয়ে উঠেছে এক মানবস্রোতের করিডর।
প্রথম দিকে বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনার মুখেও শহর না ছাড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু অতি ভয়াবহ বোমাবর্ষণে বহুতল ভবন, আবাসিক এলাকা ও অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় সামর্থ্যবান পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে দক্ষিণে সরে যাচ্ছেন। তবে সেখানেও কোনো নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা নেই।
শুধু মঙ্গলবারের হামলাতেই অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। উপকূলীয় সড়ক ধরে দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও বেসামরিক মানুষের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। একই দিনে কমপক্ষে ১৭টি আবাসিক ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পূর্ব গাজার তুফফাহ এলাকার ঐতিহাসিক আইবাকি মসজিদও বিমান হামলার টার্গেট হয়েছে।
এ ছাড়া উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে ইসরায়েলি সেনারা বিস্ফোরক বোঝাই রোবট ব্যবহার করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ইউরোমেড মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের শুরুতে অন্তত ১৫টি বিস্ফোরক রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি রোবট দিয়ে প্রায় ২০টি করে বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
যুদ্ধের প্রথম ধাপ শেষে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ফিরে এসেছিলেন। তবে এখন কতজন এখনও শহরে আছেন, তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাদের এক কর্মকর্তার দাবি, প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই শহর ছেড়েছেন। অন্যদিকে গাজার সরকারি গণমাধ্যম বলছে, সমানসংখ্যক মানুষ শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিম অংশে আশ্রয় নিয়েছেন, আর ১ লাখ ৯০ হাজার পুরোপুরি শহর ছেড়েছেন।
পালিয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য দক্ষিণেও কোনো শান্তি নেই। রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে বিতাড়িত জনগণের কারণে দক্ষিণের অতিরিক্ত ভিড়ভাট্টার আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে ইসরায়েল আবারও বোমা বর্ষণ করেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আবার গাজা সিটিতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
এই সময় ইসরায়েলি সেনারা আকাশ থেকে তোলা ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যেখানে গাজা সিটির ভেতরে প্রবেশ করতে থাকা বিপুলসংখ্যক ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যানবাহনের দৃশ্য দেখা গেছে। সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে তাদের “কয়েক মাস সময়” লেগে যাবে।
-শরিফুল
পাঠকের মতামত:
- বিএনপি নেতাকে খুঁজতে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্য
- ভারতীয় সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্র, ট্রেলারে ফুটলো ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক
- পাকিস্তান ও সৌদি আরবের নতুন সামরিক জোট: কী আছে এই চুক্তিতে?
- বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা
- ট্রাম্পের তালিকায় ভারত–পাকিস্তান ‘মাদক পাচারকারী’ রাষ্ট্র
- চাঁদ কি হারিয়ে যাবে? মহাকাশ গবেষণায় নতুন তথ্য
- ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ
- ধর্ষণ মামলায় জামিনের পর নীরবতা ভাঙলেন অভিনেতা
- রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পর কমলো স্বর্ণের দাম, নতুন দর ঘোষণা করলো বাজুস
- পদ্মার রুপালি ইলিশের প্রথম চালান ভারতে
- গ্রেফতার বিএনপি নেতা হাজতে সিগারেট–ফোনে ব্যস্ত, ফাঁস হলো ছবি
- শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ
- “অপরাধী যে বাহিনীরই হোক, বিচারের আওতায় আনতে হবে”
- গাজায় মানবিক সংকট চরমে, ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ও অপুষ্টিতে মৃত্যু বাড়ছে
- জামায়াতের পাঁচ দফা দাবিতে আজ ঢাকায় বড় সমাবেশ
- এনবিআরের সিআইসি নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনার দুটি লকার, শুরু হয়েছে আয়কর তদন্ত
- ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচন: ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা
- শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- একনেক বৈঠকে ১৩ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ৮,৩৩৩ কোটি টাকা
- রাশিয়া নেতৃত্বাধীন “Zapad-2025” সামরিক মহড়ায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
- আদালত চত্বরে ব্যারিস্টার সুমনের বারবার উচ্চারণ: ‘ভালো থাকুক বাংলাদেশ’
- বলিউডের গ্ল্যামার থেকে ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প: জিনাত আমানের জীবন ও ভালোবাসা
- ডিএসই ঋণপত্র বোর্ডে সীমিত লেনদেন, শীর্ষে যে শেয়ার
- ব্লক মার্কেটে শীর্ষ তিন শেয়ারে ৭০% লেনদেনের দখল
- ১৭ সেপ্টেম্বরের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ প্রতিবেদন
- মোদির ৭৫তম জন্মদিনে বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমার তারকাদের শুভেচ্ছা
- ১৭ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারে ১০টি শেয়ারে বড় দরপতন
- ১৭ সেপ্টেম্বর লেনদেনে উত্থান যে ১০ টি শেয়ারে
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত ঐকমত্য চান ড. আলী রীয়াজ
- চীনের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ
- অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস: উত্থান, পতন ও সভ্যতা–বিজ্ঞানে অবদান
- ঘুষ প্রস্তাবে বরখাস্ত ডিএনসিসি কর্মকর্তা
- ২১ ক্যারেট বনাম ২২ ক্যারেট: কোন সোনার গয়না বেশি টেকসই
- লেনদেনে চাঙ্গা বাজার, শীর্ষে যেসব কোম্পানি
- সাত দফা দাবিতে সাতরাস্তা অবরোধ
- সংবাদে বিভ্রান্তি, ডিএসইকে ব্যাখ্যা দিল ইউনিয়ন ব্যাংক
- নেতানিয়াহুকে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিল কাতার
- বাংলা সিনেমায় প্রথম সারভাইভাল স্টোরি ‘দম’
- “গাজা সিটিতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান: জাতিসংঘের অভিযোগ ‘গণহত্যা’”
- কেন জামাই শাহিনের উপর অসন্তুষ্ট শ্বশুর শহীদ আফ্রিদি
- ভয়াবহ হামলায় গাজা সিটি ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি
- মোদি–ট্রাম্পের ফোনালাপ, বাণিজ্য আলোচনায় আশার ইঙ্গিত
- দুর্গাপূজায় মিলছে দীর্ঘ ছুটি!
- দুর্গোৎসব ঘিরে প্রথম চালানে ৩৭ টনের বেশি ইলিশ গেল ভারতে
- বরিশালে ১৭ বিয়ে কাণ্ড: বন কর্মকর্তা কবির হোসেন বরখাস্ত
- বাংলাদেশের সুপার ফোরের সম্ভাবনা: আফগানিস্তান–শ্রীলঙ্কা ম্যাচে কোন ফল দরকার?
- ডিএসই ব্লক মার্কেট বিশ্লেষণ
- ১৬ সেপ্টেম্বরের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ প্রতিবেদন
- ১৬ সেপ্টেম্বর দর হারাল শীর্ষ দশ কোম্পানি
- ১৬ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারে শীর্ষ দশ গেইনার
- এফটির তথ্যচিত্র: শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন ডলারের গল্প
- উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতি: জাপান–বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সমীকরণ
- অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস: উত্থান, পতন ও সভ্যতা–বিজ্ঞানে অবদান
- নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার, নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার জরুরি: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন
- ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন সামনে: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জোর দিলেন ড. ইউনূস
- লিটনের ব্যাটে স্মার্ট জয়: হংকংকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ
- বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা: আইনি প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কৌশল
- জাকসু নির্বাচনী দায়িত্বে শিক্ষকের মৃত্যু
- উটাহে চার্লি কার্ক হত্যা: রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন ধাক্কায় আমেরিকার গণতন্ত্র ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- বরিশালে ১৭ বিয়ে কাণ্ড: বন কর্মকর্তা কবির হোসেন বরখাস্ত
- ১৩তম জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসি’র নতুন সীমানা, ভোটারদের উদ্বেগ বহাল
- ডাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে যত কৌশল
- নেপালের গণঅভ্যুত্থান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা: বৈধতার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আগামীর চ্যালেঞ্জ
- তারেক জিয়ার কেন দেশে ফেরা কেন জরুরি?