ইবাদাতে আগ্রহ ফেরাতে ৯টি শক্তিশালী টিপস!

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১০:৪৭:৫৯
ইবাদাতে আগ্রহ ফেরাতে ৯টি শক্তিশালী টিপস!

মানুষ যখন দুনিয়ার ব্যস্ততা, হতাশা বা পাপের ধাক্কায় ইবাদাতে গাফেল হয়ে পড়ে, তখন মনে অজানা এক অনীহা কাজ করে। এই অনীহা কখনো হৃদয়ের ক্লান্তি থেকে আসে, কখনো শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আবার কখনো আসে জীবনের ভারসাম্যহীনতা থেকে। তবে আশার কথা হলো এই অবস্থা অতিক্রম করা সম্ভব। আল্লাহর সাহায্য চাইলে তিনি কখনোই বান্দাকে ফিরিয়ে দেন না। নিচে এমন কিছু বাস্তব, আত্মোপলব্ধিমূলক এবং আধ্যাত্মিক টিপস তুলে ধরা হলো, যা অনুসরণ করলে ইবাদাতে আগ্রহ ফিরে আসতে পারে, অন্তরে প্রশান্তি নেমে আসতে পারে:

১. অনীহার উপলব্ধি এবং আন্তরিক প্রার্থনা

প্রথম কাজ হলো নিজে উপলব্ধি করা ইবাদাতে আমার আগ্রহ কমে গেছে। এই উপলব্ধি কোনো ব্যর্থতা নয়, বরং এটি ইবাদাতে ফিরে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। এরপর আল্লাহর দরবারে কাঁদতে হবে, তাঁর কাছে আকুতি করতে হবে “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার ইবাদাতে ফিরিয়ে নিন।” রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো দু’আটি হতে পারে সবচেয়ে উপযোগী: “আল্লাহুম্মা আইন্নি আ’লা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।”

এই দোয়াটি কেবল ঠোঁটের উচ্চারণে নয়, বরং হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করে করা উচিত।

২. অন্তর বিশ্লেষণ ও পাপ পরিহার

ইবাদাতে অনীহার পেছনে থাকতে পারে অজানা বা গোপন কোনো পাপ। তাই নিজের আমল পর্যালোচনা করা প্রয়োজন কোনো পাপ হচ্ছে কিনা, কোনো ভুল পথে হেঁটে যাচ্ছি কিনা। যদি পাওয়া যায়, তবে সেগুলো থেকে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা করা জরুরি।

৩. ইবাদাত ছাড় না দেওয়া, ধরে রাখা

অনীহা এলেও ইবাদাত ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কখনো মনে হবে আজ নামাজে মন বসবে না, তবুও পড়তে হবে। জোর করে হলেও আল্লাহর কাছে দাঁড়াতে হবে। ইবাদাত শেষে দেখবেন, অন্তরে হালকা প্রশান্তির অনুভব আসছে।

৪. অজানা পাপ থেকে মুক্তির জন্য তওবা ও ইস্তেগফার

কখনো এমনও হয় কোনো গুনাহ আমাদের অজান্তেই ইবাদাতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই নিয়মিতভাবে ইস্তেগফার করা উচিত এবং নিয়ত করে বলতে হবে “হে আল্লাহ, যদি অজান্তে কোনো পাপ করে থাকি, আমাকে ক্ষমা করুন।”

৫. ছোট ছোট আমলের গুরুত্ব অনুধাবন

সব সময় বড় আমল করা সম্ভব নয়। কিন্তু ছোট ছোট আমলও অত্যন্ত মূল্যবান। যেমন আজানের জবাব দেওয়া, অযুর পর দু’আ, সালাতের পর জিকির ইত্যাদি। বড় আমল না হলেও ছোট আমল যেন অবহেলায় না ছুটে যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

৬. ধার্মিক বন্ধুদের সঙ্গ ও আলোকিত পরিবেশ

যদি সম্ভব হয়, কোনো ধর্মপ্রাণ ও নেককার মানুষের সহবতে যাওয়া। তা সম্ভব না হলে অন্তত একজন দ্বীনদার বন্ধুর সঙ্গে ঈমানি আলোচনা করা। কখনো কখনো এক-আধটু কথা হৃদয়ে আলো জ্বালাতে পারে।

৭. আল্লাহর স্মরণে রেগুলার মজলিসে অংশগ্রহণ

যেখানে আল্লাহর কথা হয়, নবীজির জীবনী আলোচনা হয়, কুরআন ও হাদিস পাঠ হয়—সেইসব মজলিসে নিয়মিত অংশ নেওয়া। এমন পরিবেশ হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে।

৮. নাফসের নিয়ন্ত্রণ ও আত্মসংযম

নাফসের দাবির পেছনে ছুটে ইবাদাতের প্রতি অনীহা জন্মায়। ‘যা ইচ্ছা করব, যতক্ষণ ইচ্ছা ঘুমাবো, যা খুশি খাব’ এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আত্মসংযমের চর্চা করতে হবে, যাতে ইবাদাতে মন বসে।

৯. ‘মন চায় না’ বলেই থেমে যাওয়া নয়

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মন চাইলেও করবো, না চাইলেও করবো। নিজেকে জোর করে দাঁড় করাবো। কারণ শয়তান চায় আমরা ইবাদাত ছেড়ে দিই। তাই মনে ইচ্ছা না থাকলেও আল্লাহর জন্য নিজেকে ঠেলে এগিয়ে নেওয়া সবচেয়ে মূল্যবান ইবাদাত।

শেষ কথা হলো ইবাদাতের সময় যদি অনীহা থাকেও, তবুও তা শেষ করলে দেখা যাবে, এক ধরনের অদ্ভুত প্রশান্তি হৃদয়ে নেমে এসেছে। সেই প্রশান্তিই প্রমাণ করে আল্লাহ আমাদের দিকে ফিরেছেন। তাই দেরি না করে, আজ থেকেই এই অনীহাকে জয় করতে শুরু করুন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ