যার দখলে যাচ্ছে কপোতাক্ষ নদ!

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১০:৩৯:০৬
যার দখলে যাচ্ছে কপোতাক্ষ নদ!

যশোর জেলার ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদ এখন অস্তিত্ব সংকটে। ঝিকরগাছা থেকে বাঁকড়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে নদটির বুক ঢেকে গেছে কচুরিপানায়। দূর থেকে তাকালে এটি আর নদী নয়, বরং সবজিক্ষেত মনে হয়। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ায় দুই তীরের মানুষদের ঘরে পানি ওঠার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নদীর এই করুণ দশার পেছনে মূল দায় হিসেবে উঠে এসেছে অবৈধভাবে স্থাপিত ভেসাল জাল। নদীর এক তীর থেকে আরেক তীরে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে এই জাল বসানো হচ্ছে, যাতে কচুরিপানা আটকে পড়ে এবং মাছ ধরা সহজ হয়। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিকরগাছার ছুটিপুর থেকে রঘুনাথনগরের বেজিয়াতলা ব্রিজ হয়ে সরসকাটি গজা মোড় পর্যন্ত বহু স্থানে এভাবে ভেসাল জাল বসানো হয়েছে।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম জানান, মাঝে মধ্যে মৎস্য কর্মকর্তারা অভিযানে এলেও স্থানীয় জেলেরা দোষ চাপিয়ে দেয় পাশের উপজেলার জেলেদের ওপর। কার্যত কোনো পক্ষই দমনযোগ্য নয়। নদী তীরবর্তী মানুষদের অভিযোগ, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়বে। ঝিকরগাছা পৌরসভার বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন সরদার বলেন, “প্রতি বছর আমরা ভয় পাই। এবার তো নদী পুরো কচুরিপানায় ডুবে গেছে। এর ফল খুব খারাপ হবে।”

রঘুনাথনগর কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব বলেন, “নদী তার নাব্য হারাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।” উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নানু রেজা জানান, নিয়মিত চায়না দুয়ারি, কোমর জাল, পাটা জাল ও ভেসাল জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। কিন্তু জেলেদের নিয়ম ভাঙা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুপালী সরকার বলেন, “জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।” পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জি জানান, “দ্রুত অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু হবে।”

স্থানীয় পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজ বলছেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, প্রয়োজন সমন্বিত ও দ্রুত উদ্যোগ। প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয় ছাড়া নদীর গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। একসময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় জায়গা পাওয়া কপোতাক্ষ নদ আজ প্রাণহীন। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যত প্রজন্ম কপোতাক্ষকে শুধু গল্পেই খুঁজে পাবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ