"জুলাই দাঙ্গা নয়, গণঅভ্যুত্থানই ইতিহাস": জুলকারনাইন সায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া

সোশাল মিডিয়া ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৬:৪৯:১৮
"জুলাই দাঙ্গা নয়, গণঅভ্যুত্থানই ইতিহাস": জুলকারনাইন সায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া

আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের খান ওরফে সামি সম্প্রতি একটি প্রতিবাদী ও দৃঢ় অবস্থানমূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে “ইতিহাস বিকৃতি” এবং “জাতীয় স্মৃতিবিনাশের অপচেষ্টা” বলে কড়া ভাষায় আখ্যায়িত করেছেন।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে “জুলাই দাঙ্গা” নামে চিহ্নিত করা শুধু একটি ভুল শব্দ নির্বাচন নয়, বরং এটি গণতন্ত্রকামী একটি জাতির সাহসী মুহূর্তকে অপমান করার অপচেষ্টা। তাঁর ভাষায়, “এটি একটি জাতির সমষ্টিবদ্ধ স্মৃতিকে পরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলার ব্যর্থ অপচেষ্টা।”

তিনি আরও বলেন, “জয় যেটিকে ‘সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়’ বলছেন, তা আসলে ছিল সাহস, মর্যাদা, এবং স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দীপ্ত প্রহর।” উল্লেখযোগ্যভাবে তিনি মনে করিয়ে দেন যে, সেই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়েছিলো। অথচ সেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে “দাঙ্গা” বলা মানেই ইতিহাসের প্রতি নিষ্ঠুরতম অবমাননা।

সায়ের খানের ভাষায়, “ওই আন্দোলনে ১,৪০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রকাশ্যে নিহত হয়েছিলেন। শত শত তরুণ আজো দৃষ্টিহীন, কেউ হাত হারিয়েছেন, কেউ পা। আর এমন অবস্থাতেই জয় কথা বলেন সহানুভূতির, শোনান ক্ষমার গল্প। কোন প্যারালাল পৃথিবীতে বাস করেন তিনি!”

তিনি এও দাবি করেন, জয় জনগণকে একত্রিত করছেন না, বরং পরিকল্পিতভাবে ইতিহাস ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর কথায়, “তিনি প্রতিবাদকে বিভ্রান্তির ফলাফল হিসেবে চিত্রিত করে রাষ্ট্রীয় বর্বরতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, আর আন্দোলনকারীদের বিদেশি এজেন্ডার অংশ হিসেবে তুলে ধরছেন — এই ভাষা স্বৈরশাসকদের মুখেই শোনা যায়, পৃথিবীর নানা প্রান্তে।”

সায়ের খান আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক তিনটি কারচুপির নির্বাচনের কথাও উল্লেখ করেন এবং তা তুলনা করেন পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের সঙ্গেও, যারা অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করেছিল। “চুরি করতে হয়নি তখন। আর আজ? গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, গুম করেছে বিরোধীদের, মিডিয়াকে স্তব্ধ করেছে, আর ‘আয়নাঘর’ নামের গোপন নির্যাতন কেন্দ্র চালিয়েছে — একপ্রকার ‘বাংলাদেশি গুয়ানতানামো বে’।"

পুরো স্ট্যাটাসটি পেতে এখানে ক্লিক করুন

তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বার্তা দেন, “জয় একে দাঙ্গা বলতে পারেন, আমরা একে বলি প্রতিরোধ।” তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ ভুলবে না। জুলাই আমাদের গর্বের প্রতীক — অনুতাপের নয়, বিদ্রোহের।"

অবশেষে তাঁর আহ্বান, “এখন আমাদের দরকার বিচার — যেন হত্যাকারী, নির্বাচন চোর, ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা আর কোনো দিন জনগণের বিরুদ্ধে এই অত্যাচারের স্ট্রিম রোল চালানোর সাহস না পায়।”

এই প্রতিবেদন তার স্ট্যাটাসের বক্তব্য অক্ষুণ্ণ রেখেই উপস্থাপন করা হলো, যা স্পষ্টভাবে একটি জাতির গণতান্ত্রিক আত্মমর্যাদার দাবির সপক্ষে উচ্চারিত এক প্রবল কণ্ঠস্বর।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ