সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে যে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১৪:৫০:০৭
সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে যে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি

গত এক বছরে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর খাত বড় ধরনের ধসের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র ১০ মাসে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো প্রায় ৯৮ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক হারিয়েছে। এই ধসের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণউচ্চ মূল্যস্ফীতি, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের চাপ, সিম ট্যাক্স বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং টেলিকম খাতে অতিরিক্ত ব্যয়।

সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে বাংলালিংক, যার ৬২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক হারিয়েছে এই সময়ের মধ্যে। রবি আজিয়াটার গ্রাহক কমেছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার, গ্রামীণফোনের ১৪ লাখ ৪৪ হাজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটক হারিয়েছে মাত্র ২০ হাজার গ্রাহক। বাংলালিংকের মতে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি ও করের অতিরিক্ত চাপ ভোক্তাদের মধ্যে নতুন সংযোগ গ্রহণ ও সেবার ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। একইভাবে রবি ও গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, উচ্চ সিম কর এবং ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধি গ্রাহকদের নতুন সিম নেওয়ার আগ্রহ কমিয়েছে। অনেকেই একাধিক সিম রাখার প্রবণতা থেকে সরে এসেছেন, ফলে মোট সক্রিয় সংযোগের সংখ্যা কমে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যস্ফীতি ও করের চাপ ছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা মোবাইল সংযোগ হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। আওয়ামী লীগের বহু তৃণমূল নেতাকর্মী পলাতক থাকায় এবং রাজনৈতিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত বহু সিম নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় সংযোগের সংখ্যা কমেছে। পাশাপাশি সিম কর ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার সিদ্ধান্তও মানুষকে নতুন সংযোগ নিতে নিরুৎসাহ করেছে।

টেলিকম অপারেটররা বলছে, আঞ্চলিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে স্পেকট্রাম খরচ অনেক বেশি, যা সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপারেটরদের আয়ের সঙ্গে খরচের ভারসাম্য না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও বাংলালিংক জানিয়েছে, তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ ও নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাবে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও নাগরিক সেবায় প্রতিফলিত হবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে টেলিকম খাতে নীতিগত সংস্কার, কর কাঠামোর যৌক্তিকীকরণ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই এখনই প্রয়োজন সরকারের, বিটিআরসির এবং অপারেটরদের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ যাতে গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত না হয়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত