জমি সংক্রান্ত ৫ বড় সমস্যা সমাধানের সহজ উপায়

দীর্ঘদিন ধরে জমি-সংক্রান্ত বিরোধ ও জটিলতায় পড়ে লাখো মানুষ আদালতের দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এবার সেই পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে সরকারের এক নতুন পদক্ষেপ। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা অনুযায়ী এখন থেকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ জমি-সংক্রান্ত বিরোধ সরাসরি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিসেই নিষ্পত্তি হবে তাও মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে।
এই উদ্যোগকে সংশ্লিষ্ট মহল 'গ্রামীণ জনগণের ভূমি-ন্যায়বিচারের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা' হিসেবে দেখছে। আদালতের চাপ কমানোর পাশাপাশি এটি জনগণের জন্য একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক সেবা হবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক ও আইন বিশেষজ্ঞরা।
কোন পাঁচটি বিরোধের সমাধান মিলবে ডিসি অফিসে?
১. ওয়ারিশদের মধ্যে জমি বণ্টন সংক্রান্ত বিরোধ:
এক বা একাধিক ওয়ারিশ অন্যদের বঞ্চিত করে যদি জমি দখল করেন কিংবা নামজারি করে ফেলেন, তবে ভুক্তভোগী ওয়ারিশরা আর আদালতে না গিয়েও ডিসি অফিসে অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিষয়টি মাঠপর্যায়ের তদন্ত সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে।
২. সরকারি খাস জমি বা অবকাঠামো জবরদখল:
রাস্তা, খাল, জলাশয় বা অন্য কোনো সরকারি জমি কেউ বেআইনিভাবে দখল করলে, ডিসি অফিস তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে। জনস্বার্থে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
৩. জলাশয় বা খালের খনন ও ভরাট সংক্রান্ত বিরোধ:
অনুমতি ছাড়া খাল বা জলাশয় খনন কিংবা ভরাট করলে এবং তা আশপাশের কৃষিজমি বা পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেললে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডিসি অফিসে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
৪. হঠাৎ জমি জবরদখল বা উচ্ছেদের চেষ্টা:
নিজের ভোগদখলীয় জমিতে কেউ দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করলেও হঠাৎ করে প্রভাবশালীদের দ্বারা উচ্ছেদের চেষ্টা হলে ডিসি অফিস তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর মৌখিক কিংবা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় তদন্ত পরিচালিত হবে।
৫. নামজারি বা খতিয়ান সংশোধনে বাধা:
যদি বৈধ মালিকানা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি নামজারি বা খতিয়ান সংশোধনে বাধার মুখে পড়েন—বিশেষ করে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প, ব্যবসায়িক উন্নয়ন কিংবা বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে—তবে তিন মাসের মধ্যেই এ সমস্যার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ রয়েছে।
কীভাবে আবেদন করবেন?
এই পাঁচটি সমস্যার যেকোনো একটির জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তারপর জেলা প্রশাসন তিন মাসের মধ্যে সমাধান দেবে। যদি কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি সম্ভব না হয়, তবে তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
যদিও ইতোমধ্যে কিছু জেলা প্রশাসনে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম চালু হয়েছে, সারাদেশে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। লজিস্টিক সাপোর্ট, পর্যাপ্ত জনবল ও প্রযুক্তিগত সুবিধার ঘাটতি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে সরকার ইতোমধ্যে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিধিমালা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা গেলে তা দেশের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে। একইসঙ্গে এটি বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ কমাবে এবং প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
এই নতুন ভূমি সংক্রান্ত সেবাকে একটি "প্রশাসনিক বিকল্প বিচারব্যবস্থা" বলা হচ্ছে, যেখানে আইনি জটিলতা ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প সময়ে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যদি এটিকে সকল জেলায় সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে ভূমি নিয়ে বহু পুরনো সামাজিক অস্থিরতা ও সহিংসতা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- দীর্ঘ পতনের পর শেয়ারবাজারে এল সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট হবে কিনা জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
- আকাশে বিস্ফোরণ, মাটিতে মৃত্যু: ক্লাস্টার বোমায় জর্জরিত ইসরায়েল
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট
- তবে কি বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, যা জানা গেল
- প্রতিদিন ভোরে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবী (সা.)
- শেয়ারবাজারে মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- কারাবন্দি সংগীতশিল্পী নোবেলের সঙ্গে বাদীর বিয়ে: বিতর্ক সৃষ্টি