জুমার দিন কেন গুরুত্বপূর্ণ? এক আলোকবর্তিকা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ১২:২৫:০৯
জুমার দিন কেন গুরুত্বপূর্ণ? এক আলোকবর্তিকা

ইসলামে জুমার দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ এক দিন হিসেবে স্বীকৃত। পবিত্র কোরআনে মুমিনদের জুমার দিনে দ্রুত মসজিদে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি হাদিসে এই দিনে করণীয় বিশেষ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “হে মুমিনরা! জুমার নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ করো, যা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো। এরপর নামাজ শেষ হলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে থাকো এবং অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সুরা জুমা, আয়াত ৯-১০)।

এই পবিত্র দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে থেকে শুরু করে উম্মাহকে বিভিন্ন নির্দেশনা ও শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন, যে জুমার দিন আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর পৃথিবীতে অবতরণ ঘটিয়েছেন এবং একই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও তিনি বলেছেন, জুমার দিনে এমন একটি সময় থাকে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছু প্রার্থনা করে, যদি তা হারাম না হয়, তা অবশ্যই কবুল হবে। এমনকি কিয়ামতের দিনও জুমার দিনেই সংঘটিত হবে বলে হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়।

জুমার দিনে গোসল করে সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে আগমন করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। সালমান ফারসির বর্ণনায়, যে ব্যক্তি এসব নিয়মানুযায়ী চলবে এবং খুতবার সময় মনোযোগ সহকারে শুনবে, আল্লাহ তাআলা তার দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ করে দেবেন। এ ছাড়াও তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমার সময় পর্যন্ত পাপ থেকে বিরত থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর রহমতে সে ব্যক্তি গুনাহমুক্ত থাকবে।

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য আল্লাহ তাকে বড় সওয়াব দান করবেন, যা এক উট কোরবানি করার সমতুল্য। এরপর যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করবে, সেভাবে তার জন্য সওয়াবের পরিমাণ কমে যাবে, শেষ পর্যন্ত যারা পরিশেষে প্রবেশ করবে তাদের জন্য কম সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।

জুমার দিন বিশেষ একটি সময় আছে, বিশেষ করে আছরের পরবর্তী সময়ে, যখন মুমিনরা আল্লাহর নিকট যেকোনো শুভ কামনা বা দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হয়। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, এই সময় অনুসন্ধান করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা উচিত।

আরো একটি মহৎ আমল হলো জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করা। নবীজি (সা.) বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করবেন, তার জীবনের অন্ধকার দূর হয়ে আলোকিত হবে। বিশেষত এই সুরার শেষ দশ আয়াত পড়লে দাজ্জালের ফন্দি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি দরুদ পাঠ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। তিনি বলেছেন, জুমার দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি এবং মৃত্যু প্রদত্ত হয়েছে, সেই দিন শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং সবাইকে বেহুঁশ করা হবে, তাই এ দিনে নবীর ওপর দরুদ পাঠ করা উচিত, কারণ তা নবীর কাছে সরাসরি পেশ করা হয়।

সর্বোপরি, জুমার দিন মুমিনের জন্য আত্মিক ও সামাজিক দিক থেকে এক বিশাল মঞ্চ যেখানে তার ঈমানকে নবায়িত করার সুযোগ থাকে। এই দিনে নিয়মিত নামাজ আদায়, খুতবা মনোযোগে শ্রবণ, গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহার, দোয়া ও সুরা কাহাফ পাঠের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত অর্জনের দ্বার উন্মোচন করে। জুমা হলো একটি বিশেষ দিন, যা শুধু আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার ক্ষেত্র নয়, বরং সমাজে ঐক্য ও সৎপথের প্রতি আবেগ জাগ্রত করার এক সুযোগ।

—আশিক নিউজ ডেস্ক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত